তাবলীগের সাথীদের প্রতি মাওলানা সাজ্জাদ নোমানীর নসীহত

অনুবাদ : আরশাদ আনসারী

যে ব্যক্তির (প্রচলিত তাবলীগের) দাওয়াতি মেহনতে যুক্ত হওয়ার ঝোঁক আছে, সে এই কাজে যুক্ত হতে পারে। কিন্তু সে যেন ঘুণাক্ষরেও এই চিন্তা না করে যে, এটাই দীনের একমাত্র মেহনত। (এমন মনে করলে) এরচেয়ে বড় কোনো গোমরাহী আর হতে পারে না।

তার এটা জানা থাকা দরকার যে, আমি আল্লাহ তায়ালার রহমতে দীনের একটি মেহনতে যুক্ত আছি, (তবে) দীনের আরও হাজারো দাওয়াতি মেহনত রয়েছে। অন্যান্য বহু সৌভাগ্যবান ব্যক্তিগণ সেসব মেহনতে যুক্ত আছেন। আমি ছোটো খাটো মানুষ; তাদের সবার জন্য দুআ করছি। আর চাই যে, তারাও যেন আমার জন্য দুআ করে। এভাবেই উম্মত ঐক্যবদ্ধ হয়।

হযরত মাওলানা ইউসুফ রহ. উলামাদের সামনে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, আমি আপনাদের থেকে এই আশা করি না যে, আপনারা বুখারী পড়ানো বাদ দিয়ে আত্তাহিয়্যাতু পড়ানো শুরু করবেন। আমি বরং এতটুকু আশা করি যে, যারা আত্তাহিয়্যাতু পড়ে ও পড়ায় আপনাদের সুদৃষ্টি তাদের উপরও নিবদ্ধ হোক। আর আপনাদের দুআয় তারাও শামিল হোক। ব্যস এটুকুই। আপনারা বুখারী পড়ানোতে মশগুল থাকুন, সেসাথে যারা আত্তাহিয়্যাতু পড়ায় তাদের প্রতি ভালোবাসার দৃষ্টি দিন, তাদের জন্য দুআ করুন। ব্যস, এছাড়া আপনাদের কাছে আর কিছুই চাওয়ার নেই। এমন কথার কারণেই বড় বড় উলামারা এই কাজের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন।

 

আজ সমস্যা শুরু হয়েছে, যখন আমরা ভাবতে শুরু করেছি, নবীওয়ালা কাজ শুধু এই একটিই। আমরা খুব সরলমনে যখন একনাগাড়ে গাস্তের ফাযায়েল বর্ণনা করতে শুরু করি তখন আমরা কী বলি?! ( আমরা বলি) যে, ভাই-দোস্ত-বুযুর্গ, আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে নবীওয়ালা কাজের সাথে জুড়ে দিয়েছেন। অবুঝ-সরলমনা শ্রোতার উপর এই বাক্যের কতটা ভয়াবহ প্রভাব পড়তে পারে আমরা তা লক্ষ করি না। সরলমনা শ্রোতার উপর যে প্রভাব পড়ছে তা হলো, “শুধুমাত্র এই মেহনতই হলো নবীওয়ালা মেহনত, দুনিয়ার অন্য কোনো কাজই নবীওয়ালা কাজ নয়। খোদার কসম! (এমন একপেশে চিন্তা করলে) এরচেয়ে বড় কোনো গোমরাহী হতে পারে না।

হযরতজ্বি মাওলানা ইলিয়াস রহ. এর সময়ে এই বাক্য কখনো বলা হত না। আমি কসম করে বলতে পারবো, কখনো বলা হত না। (কেউ এমন কথা বললে) কঠিনভাবে সতর্ক করা হত এবং শক্তহাতে ধরপাকড় হত।

 

জানো, তখন কী বলা হত? তখন বলা হত, দোস্ত, বড় বড় উলামারা দীনের বিভিন্ন কাজে জুড়ে আছেন। তাদের যোগ্যতা আছে, সক্ষমতা আছে। তাদের মধ্যে আলিম আছেন, গ্রন্থকার আছেন। তারা নিজ নিজ লাইনে মেহনত করে যাচ্ছেন। আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহ যে, আমাদের মতো অজ্ঞ ও মূর্খদেরও সমান্য কিছু মেহনত করার সুযোগ করে দিয়েছেন। যাতে আমরাও একটু কাজের হয়ে যেতে পারি। ভাই, আমরাও একটু ঈমান শিখে নিতে পারি। অর্থাৎ তখন এমন বাক্য বলা হত, যার মাধ্যমে নিজের মধ্যে বিনয় তৈরি হয়। নিজে নগণ্য হওয়ার অনুভূতি মজবুত হয়। এমন বাক্য বলা হত না, যাতে অজান্তেই নিজের মধ্যে অহমিকা তৈরি হয়।

সে নিজেও বুঝে উঠতে পারে না। ‘নবীওয়ালা কাজ’, ‘নবীওয়ালা কাজ’ জপতে জপতে তার মস্তিস্কে বদ্ধমূল ধারণা হতে থাকে যে, না মাদরাসা নবীওয়ালা কাজ; না কুরআন শিক্ষা নবীওয়ালা কাজ; না মক্তব চালানো নবীওয়ালা কাজ; না আল্লাহ আল্লাহ শিখানো নবীওয়ালা কাজ; না রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করা নবীওয়ালা কাজ!!! কোনো কিছুই নবীওয়ালা কাজ নয়।

( এমন একপেশে গোমরাহী চিন্তা থেকে আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে হেফাজত করুন। সর্বপ্রকার দীনী কাজকরনেওয়ালাদের প্রতি সম্মান-ভক্তি ও ভালোবাসা রেখে বিজ্ঞ উলাময়ে কেরামের তত্ত্বাবধানে থেকে সঠিক মেহনতের সাথে জুড়ে থাকার তাওফীক দান করুন। )

অনুলিখন : মো: ওমর ফারুক বিন সিরাজুল ইসলাম।

১৯ জুমাদাল উখরা ১৪৪৪ হিজরী /১৩ জানুয়ারী ২০২৩। সকাল ০৮টা ২৮ মিনিট

এ জাতীয় আরো সংবাদ

ক্ষমা চেয়ে কৃষি আইন বাতিল করল মোদি

নূর নিউজ

ঈদ ভাষণে গাজায় সহিংসতা বন্ধের আহ্বান সৌদি বাদশাহর

নূর নিউজ

গাজায় খাবার ও পানির তীব্র সঙ্কট, চারদিকে হাহাকার

নূর নিউজ