তালেবানের সঙ্গে চীন-রাশিয়ার ঘনিষ্ঠতায় ভারতীয় কূটনৈতিক শিবিরে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে পশ্চিমবঙ্গের সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সূত্রের বরাত দিয়ে খবরে বলা হয়, চীন ইতিমধ্যেই পৌঁছে গিয়েছে তালেবানের কাছে। চীন-তালেবান সেতুবন্ধনের কাজটি করছে পাকিস্তান। এর পরে নিরাপত্তার পাশাপাশি অন্যান্য ক্ষেত্রেও তালেবান সহযোগিতা দাবি করবে ধরে নিয়ে রাশিয়াও তালেবানের সঙ্গে কাজ করতে নিজেদের আগ্রহের কথা জানিয়েছে। অর্থাৎ, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষেদর পাঁচ স্থায়ী সদস্যের মধ্যে দুই দেশ (চীন ও রাশিয়া) ইতিমধ্যেই পাকিস্তানকে মাঝে রেখে তালেবানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াচ্ছে বলে আশঙ্কা ভারতেরআনন্দবাজার পত্রিকার খবরে আরও বলা হয়, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য হিসেবে চলতি মাসে ভারতই সভাপতিত্ব করছে। গতকাল রাতে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে কাবুল পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিতভাবে নিজেদের উদ্বেগ জানিয়েছেন ভারতের প্রতিনিধি টি এস তিরুমূর্তি। কিন্তু ভারত জানে যে, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের দু’টি দেশ যদি তালেবানের পাশে দাঁড়িয়ে যায়, তাহলে তাদের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আসা সময়ের অপেক্ষা। এতে পাকিস্তানের হাত আরও শক্ত হওয়ারই নামান্তর।
খবরে আরও বলা হয়, তালেবানের কাবুল নিয়ন্ত্রণের পর মঙ্গলবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সভাপতিত্বে নয়াদিল্লিতে মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা সংক্রান্ত কমিটির বৈঠক বৈঠকে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে যে, পাকিস্তান তালেবান-তাস খেলে নিজেদের দর কষাকষির জায়গা ভূ-কূটনীতিতে অনেকটাই বাড়িয়ে নেবে। তার মোকাবিলায় ভারত কীভাবে এগোবে, সেই কৌশল তৈরিই এখন সাউথ ব্লকের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ।
আনন্দবাজার পত্রিকার খবরে বলা হয়, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির বৈঠকে শীর্ষ মন্ত্রীদের সঙ্গে এই সম্ভাবনা নিয়েই আলোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আফগান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসলামাবাদ তালেবানের সঙ্গে কী চুক্তি করবে, তা এখনও স্পষ্ট না হলেও, বর্তমান পরিস্থিতির সুযোগ নিতে তারা অতি সক্রিয়। এর নিদর্শন ইতিমধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে। যেমন, এরই মধ্যে আফগানিস্তানের ‘শৃঙ্খলমুক্তির’ তত্ত্ব সামনে এনে তালেবান কর্তৃত্বকে দ্রুত রাজনৈতিক ভাবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে পাকিস্তান। কারণ তাতে তাদের বহুমুখী লাভ। প্রথমত, আফগানিস্তানে প্রবল নৈরাজ্যের মধ্যে পাক-তালেবান গোষ্ঠীকে ধীরে ধীরে পোক্ত করা যাবে। নিজেদের ঘরোয়া সন্ত্রাস দমনে যা কার্যকরী। দ্বিতীয়ত, কাশ্মীর নিয়ে ভারতের ওপর সন্ত্রাসের চাপ বাড়ানোর কাজও অপেক্ষাকৃত সহজ হবে।
যুক্তরাষ্ট্রও পাকিস্তানের ওপর নির্ভর হবে
আনন্দবাজার পত্রিকার খবরে বলা হয়, আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহার করার পরে যে আফগান ইস্যুতে ফের পাকিস্তানের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে না, সে কথা হলফ করে বলতে পারছে না ভারত। আফগানিস্তানের মাটিতে পাকিস্তানের যে গভীর জাল ছড়ানো রয়েছে, তা ‘কেনার’ চেষ্টা করবে ওয়াশিংটন। তারা ঘরোয়া রাজনৈতিক কারণে এখন অন্তত এটুকু নিশ্চিত করতে চাইবে যে, তালেবানি সন্ত্রাসের ঢেউ যেন কোনও ভাবে আমেরিকার বুকে আছড়ে না পড়ে। আর এই আশ্বাসের বিনিময়ে চড়া দাম নেবে ইসলামাবাদ। এটি অবশ্য তারা আমেরিকার কাছ থেকে ধারাবাহিকভাবে নিয়ে এসেছে গত দেড় দশক। তা সে ইসলামাবাদের ওপর থেকে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা ওঠানোই হোক বা এফএটিএফের নজরদারি থেকে মুক্তি।
খবরে বলা হয়, আফগানিস্তানের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে আলোচনায় পাকিস্তান বরাবরই ভারতকে দূরে রাখার চেষ্টা করে গিয়েছে। এবার মঞ্চে পাকিস্তানের সঙ্গে যোগ দিচ্ছে চীনও। কূটনৈতিক শিবিরের মতে, আর দেরি না করে মধ্য এবং পশ্চিম এশিয়ার সন্ত্রাসবিরোধী সমমনা দেশগুলোকে নিয়ে জোট তৈরির চেষ্টা অবিলম্বে শুরু করে দেওয়া উচিত দিল্লির।