তালেবান নিয়ন্ত্রিত আফগানিস্তানকে প্রায় ৩ কোটি ১০ লাখ ডলার মূল্যের খাদ্য, শীতকালীন বিভিন্ন পণ্য, টিকা এবং ওষুধ সরবরাহ দেবে চীন। বুধবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ঘোষণা দিয়েছে। অনলাইন সিএনএন এ খবর দিয়ে বলছে, আফগানিস্তানের প্রতিবেশী দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে প্রথম ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে এ সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছেন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনিং। বলা হয়েছে, এসব সরবরাহ আফগান জনগণের জরুরি ব্যবহারের জন্য পাঠানো হবে। চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়া বলেছে, প্রথম ব্যাচে আফগানিস্তানকে ৩০ লাখ ডোজ করোনার টিকা দান করার ঘোষণা দিয়েছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। তবে এসব টিকা কবে নাগাদ পাঠানো হবে সে বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা দেয়া হয়নি।
এর আগে চীনের নেতারা বার বার বলেছেন, বিশ্বকে, বিশেষ করে নিম্ন আয়ের দেশগুলোকে করোনা ভাইরাসের টিকা শেয়ার করবে চীন। কর্মকর্তারা এর আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সামনে থাকবে আফগানিস্তান।
বেইজিং থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ভার্চ্যুয়াল মিটিয়ে বক্তব্য রাখেন ওয়াং ই। এ সময় তিনি বলেন, অন্য দেশের চেয়ে আফগান জনগণকে অর্থনৈতিক ও মানবিক সহায়তা সরবরাহ দিতে অধিক বেশি বাধ্য যুক্তরাষ্ট্র। আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহার এবং তার পরপরই তালেবানদের ক্ষমতা নেয়ার প্রেক্ষাপটে ওয়াং ই বলেন, উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতায় আফগানিস্তানকে সাহায্য করে নিজেদের দায়িত্ব পালন শুরু করা উচিত যুক্তরাষ্ট্রের। তবে এক্ষেত্রে আফগানিস্তানের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার প্রতি সম্মান দেখাতে হবে।
মঙ্গলবার তালেবানরা আফগানিস্তানে একটি কট্টর অন্তর্বর্তী বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে। এর বেশির ভাগই তালেবানদের সিনিয়র বর্ষীয়ান নেতা। তারাই গত ২০ বছর ধরে আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে জোট বাহিনীর যুদ্ধের বিরুদ্ধে লড়াই তত্ত্বাবধান করেছে।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই তালেবানদের প্রতি আহ্বান জানান সন্ত্রাস দমন করতে এবং দেশের সব জাতিগোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ করতে। তিনি বলেন, আফগানিস্তানের প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তান, ইরান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও উজবেকিস্তানের উচিত সমন্বয়ের মাধ্যমে সহযোগিতা করা। যাতে তালেবানরা দেশকে গড়ে তুলতে পারে। রাজনৈতিক কাঠামোকে গড়ে তুলতে পারে সবার অংশগ্রহণের ওপর ভিত্তি করে।
উল্লেখ্য, চীনের পশ্চিমাঞ্চল সিনজিয়াংয়ের সঙ্গে চীনের রয়েছে ৫০ মাইল বা ৮০ কিলোমিটার সীমান্ত। আছে এসব অঞ্চলে চীনের বিনিয়োগ। জুলাইয়ে তালেবান নেতাদের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠক হয় চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর। এ প্রসঙ্গে তালেবানদের একটি গুরুত্বপূর্ণ সেনাবাহিনী এবং আফগানিস্তানের রাজনৈতিক শক্তি বলে উল্লেখ করেন ওয়াং ই। ঘোষণা দেন, আফগানিস্তানে শান্তি, পুনরেকত্রীকরণ এবং পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে চীন। এর প্রতিদান দিতে, চীনকে একটি ভাল বন্ধু বলে মন্তব্য করেছে তালেবানরা। প্রতিশ্রুতি দিয়েছে চীনের বিরুদ্ধে কর্মকাণ্ডে লিপ্ত কাউকে আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার করতে দেবে না তারা।
গত সপ্তাহে চীনের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম সিজিটিএন’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তালেবান মুখপাত্র জাবিহউল্লাহ মুজাহিদ বেইজিংয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমাদের প্রতিবেশী হিসেবে চীন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং শক্তিশালী দেশ। অতীতে তাদের সঙ্গে আমাদের অত্যন্ত ইতিবাচক এবং সুসম্পর্ক ছিল। এই সম্পর্ককে আমরা আরো শক্তিশালী করতে চাই। পারস্পরিক আস্থার ভিত্তিতে এর উন্নতি প্রত্যাশা করি।