গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এ সরকারকে বিদায় দিতে হবে। দেশকে বাঁচাতে হবে। দেশকে দুর্নীতি, কুশাসন থেকে মুক্ত করার জন্য মানুষ ভাবছে। দেশটাকে এভাবে চলতে দেওয়া যায় না। বঙ্গবন্ধু এমন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেননি। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ এখন ক্ষমতায়। কিন্তু এমন কেন হচ্ছে? রাষ্ট্রের ঘাটতিগুলো কোথায়?
রোববার (২৯ আগস্ট) গণফোরামের ২৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন।
সংবিধানের সময়োপযোগী সংশোধনের আহ্বান জানিয়ে ড. কামাল বলেন, নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা নিজ এলাকার জনগণের কাছে সরাসরি দায়ী থাকবেন। সংবিধানের ৭০ ও ৪৮ (৩) অনুচ্ছেদ সংশোধন করতে হবে। একই ব্যক্তি দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। ন্যায়পাল পদে নিয়োগ দিতে হবে। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, ন্যায়পাল ও মন্ত্রীরা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেবেন না। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দিতে পৃথক কমিশন করতে হবে। জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা এবং স্বাধীন বিচারব্যবস্থা কার্যকর করতে হবে।
ড. কামালের মতে, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বাংলাদেশে আর কোনো নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়নি। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে সামগ্রিকভাবে পুনর্গঠনের লক্ষ্যে করণীয় স্থির করতে হবে। করণীয় বাস্তবায়নের অন্যতম কৌশল হিসেবে গড়ে তুলতে হবে জাতীয় ঐক্য। তবে জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলন নয়, দেশ গড়ার আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। দলীয় আন্দোলন না, জনগণের ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
কামাল হোসেন বলেন, কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। জনগণের প্রতিনিধি নিয়ে সংসদ হবে। তারা দেশ শাসন করবেন। মানুষ চাচ্ছে আমরা দেশটাকে বাঁচাব। আমাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। মানুষের মধ্যকার ঐক্যকে সংহত করতে হবে। আমরা কুশাসন, স্বৈরশাসনের শিকার হচ্ছি। এ থেকে মুক্ত হতে হবে। জনগণের ক্ষমতা নিয়ে দেশকে বাঁচাতে হবে। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারকে বিদায় দিতে হবে। তারা যথেষ্ট পাচার করেছে, চুরি করেছে।
লিখিত বক্তব্যে গণফোরাম সভাপতি বলেন- এরশাদের পতনের পর আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সরকার গঠন করেছে এবং রাষ্ট্রের সব পর্যায়ে দলীয়করণের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করে নাগরিক সমাজ ও সাংবাদিকদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন বাংলাদেশের সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে এক গুচ্ছ সংস্কার প্রস্তাব তুলে ধরে তিনি বলেন, জনগণের স্বার্থ, অধিকার ও অভিপ্রায় অনুযায়ী রাষ্ট্রের জন্য আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে জনগণের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের স্বাধীন চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা থাকবে। কিন্তু সেটি হরণ করে রাষ্ট্রপরিচালনায় জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণের বিধানকে অগ্রাহ্য করা হয়েছে। রাজনৈতিক ক্ষমতার নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করবে জনগণ। গণতান্ত্রিক পদ্ধতি হচ্ছে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের পক্ষে রাষ্ট্রের আইন প্রণয়ন করে নিজেদের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক অধিকারসমূহ নিশ্চিত করবে এবং নির্বাহী বিভাগের হস্তক্ষেপ মুক্ত স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা কার্যকর করবে।