দোয়া কবুল হওয়ার অন্যতম ৫ টি শর্ত!

দু’আ মুমিনদের হাতিয়ার। দু’আর মাধ্যমে অসম্ভবকেও সম্ভব করা যায়। এমনকি দু’আর বদৌলতে ভাগ্যও পরিবর্তন হয়ে যায়।

মহান আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন ادۡعُوۡنِیۡۤ اَسۡتَجِبۡ لَکُمۡ অর্থাৎ তুমরা আমার কাছে দু’আ করো। আমি তোমাদের দু’আ কবুল করবো।”
সূরা মু’মিন, আয়াত ৬০।

বিশ্ব নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন “‏ لاَ يَرُدُّ الْقَضَاءَ إِلاَّ الدُّعَاءُঅর্থাৎ দু’আ ছাড়া আর কোন কিছুই আল্লাহর সিদ্ধান্তকে বদলাতে পারে না। তিরমিযি, হাঃ নং- ২১৩৯।

অন্য এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে. الدُّعَاءُ مُخُّ الْعِبَادَةِ অর্থাৎ দু’আ সকল ইবাদতের মূল। তিরমিযি, হাঃনং-৩৩৭১; মেশকাত,হাঃ নং-২২৩১।
এ সকল আয়াত এবং হাদিস দ্বারা অনুমান করা যায় যে দু’আ কত বড় একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। কিন্তু তা আল্লাহ তাআলার নিকট কবুল হওয়ার জন্য বেশ কিছু শর্ত রয়েছে।

তার মধ্যে মৌলিক পাঁচটি এখানে উল্লেখ করছি ১. নিরাশ না হওয়া ও তাড়াহুড়া না করা।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ يُسْتَجَابُ لأَحَدِكُمْ مَا لَمْ يَعْجَلْ يَقُولُ دَعَوْتُ فَلَمْ يُسْتَجَبْ لِي ‏”‏‏.‏
অর্থাৎ হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, তোমাদের প্রত্যেক ব্যক্তির দু’আ কবুল হয়ে থাকে। যদি সে তাড়াহুড়া না করে আর বলে যে, আমি দু’আ করলাম, কিন্তু আমার দু’আ তো কবুল হলো না। বুখারি, হাঃ নং- ৬৩৪০; মুসলিম , হাঃনং- ২৭৩৫, মুসনাদে আহমাদ,হাঃনং- ১৩০০৭।

২. হারাম থেকে বেঁচে থাকা।

قَالَ وَذَكَرَ الرَّجُلَ يُطِيلُ السَّفَرَ أَشْعَثَ أَغْبَرَ يَمُدُّ يَدَهُ إِلَى السَّمَاءِ يَا رَبِّ يَا رَبِّ وَمَطْعَمُهُ حَرَامٌ وَمَشْرَبُهُ حَرَامٌ وَمَلْبَسُهُ حَرَامٌ وَغُذِيَ بِالْحَرَامِ فَأَنَّى يُسْتَجَابُ لِذَلِكَ ‏.‏
অর্থাৎ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করেন, দীর্ঘ সফরের ক্লান্তিতে যার মাথার চুল বিক্ষিপ্ত, অবিন্যস্ত ও পুরো শরীর ধুলোমলিন।

সে আসমানের দিকে হাত প্রশস্ত করে বলে, হে আমার প্রভু! হে আমার প্রতিপালক! অথচ তার খাদ্য ও পানীয় হারাম, তার পোশাক হারাম, তার জীবন-জীবিকাও হারাম। এমতাবস্থায় তার দু’আ কিভাবে কবুল হতে পারে? তিরমিযি হাঃনং- ২৯৮৯।

৩. আল্লাহপ্রদত্ত দায়িত্ব পালন করা।

عَنْ حُذَيْفَةَ بْنِ الْيَمَانِ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَتَأْمُرُنَّ بِالْمَعْرُوفِ وَلَتَنْهَوُنَّ عَنِ الْمُنْكَرِ أَوْ لَيُوشِكَنَّ اللَّهُ أَنْ يَبْعَثَ عَلَيْكُمْ عِقَابًا مِنْهُ ثُمَّ تَدْعُونَهُ فَلاَ يُسْتَجَابُ لَكُمْ ‏”‏ ‏.‏ অর্থাৎ হুজাইফা ইবনুল ইয়ামান রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন , সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! নিশ্চয়ই তোমরা সৎ কাজের জন্য আদেশ করবে এবং অন্যায় কাজের প্রতিরোধ করবে। তা না হলে আল্লাহ তাআলা অচিরেই তোমাদের ওপর তাঁর শাস্তি অবতীর্ণ করবেন। তোমরা তখন তাঁর কাছে দু’আ করলেও তিনি তোমাদের সেই দু’আ গ্রহণ করবেন না। তিরমিযি, হাঃনং- ২১৬৯; সহীহূল জামে,হাঃ নং-৭০৭০।

৪. আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন না করা।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ مَا مِنْ رَجُلٍ يَدْعُو اللَّهَ بِدُعَاءٍ إِلاَّ اسْتُجِيبَ لَهُ فَإِمَّا أَنْ يُعَجَّلَ لَهُ فِي الدُّنْيَا وَإِمَّا أَنْ يُدَّخَرَ لَهُ فِي الآخِرَةِ وَإِمَّا أَنْ يُكَفَّرَ عَنْهُ مِنْ ذُنُوبِهِ بِقَدْرِ مَا دَعَا مَا لَمْ يَدْعُ بِإِثْمٍ أَوْ قَطِيعَةِ رَحِمٍ أَوْ يَسْتَعْجِلُ ‏”‏ ‏.‏ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَكَيْفَ يَسْتَعْجِلُ قَالَ ‏”‏ يَقُولُ دَعَوْتُ رَبِّي فَمَا اسْتَجَابَ لِي ‏”‏ ‏.‏

হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, যে কোন ব্যক্তি আল্লাহর নিকট কোন দু’আ করলে তার দু’আ ক্ববূল হয়।

ক. হয়তোবা সে দুনিয়াতেই তার ফল পেয়ে যায়। খ.অথবা তা তার আখিরাতের পাথেয় হিসেবে জমা রাখা হয়। গ. অথবা তার দু’আর সম-পরিমাণ তার গুনাহ মাফ করা হয়, যতক্ষণ না সে পাপ কাজের অথবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার দুআ করে অথবা দুআ কবুলের জন্য তাড়াতাড়ি করে। সাহাবায়ে কেরাম আরয করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! তাড়াতাড়ি করে কিভাবে? তিনি এরশাদ করলেন, সে বলে, আমি আল্লাহর নিকটে দু’আ করেছিলাম। কিন্তু আমার দু’আ তিনি কবুল করেননি। তিরমিযি, হাদিস নং- ৩৬০৪

৫. দু’আয় পূর্ণ মনোযোগ থাকা।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ ادْعُوا اللَّهَ وَأَنْتُمْ مُوقِنُونَ بِالإِجَابَةِ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ لاَ يَسْتَجِيبُ دُعَاءً مِنْ قَلْبٍ غَافِلٍ لاَهٍ‏

অর্থাৎ হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, তুমরা কবুল হওয়ার পূর্ণ আস্থা নিয়ে আল্লাহর কাছে দু’আ করো। জেনে রেখো, আল্লাহ অমনোযোগী ও অসাড় মনের দু’আ কবুল করেন না।
তিরমিযি, হাঃনং- ৩৪৭৯।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

কুরবানির নিয়তে পালিত পশুর দুধ দোহন করা যাবে কি?

নূর নিউজ

কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণার দাবীতে সংবাদ সম্মেলন

নূর নিউজ

তাকরিমকে অভিনন্দন জানিয়েছে ইসলামী ফাউন্ডেশন

নূর নিউজ