প্রায়ই সংসার ভাঙার খবর শোনা যায়। মাঝেমধ্যে এমন এমন ব্যক্তিদের সংসার ভাঙে, পুরো দেশ কিংবা বিশ্বকে ভাবিয়ে তোলে। তখন তৈরি হয় নানা জিজ্ঞাসা, নানা কৌতুহল। সংসার ভাঙার জন্য নানা কারণকে দায়ী করা হয়। সংসার টিকিয়ে রাখতে হলে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক হৃদ্যতা ও ভালোবাসা মূল অনুষঙ্গ। যে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে আন্তরিক ভালোবাসা থাকে দুনিয়ার জীবন তাদের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে কাটে। ভালোবাসার ঘাটতি যে সংসারে যতটা, হতাশা ও অশান্তি সেখানে ততটা বেশি। আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) শিখিয়েছেন কিভাবে একজন স্বামী তার স্ত্রীকে ভালোবাসবে।
ভালোবাসার কথা মুখে প্রকাশ করা
স্বামীরা বিভিন্নভাবে স্ত্রীদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করলেও অনেক সময় মুখে তা প্রকাশ করতে পারে না। তবে স্ত্রীদের পছন্দ হলো স্বামীরা যেন মাঝেমধ্যে তাদের ভালোবাসার কথা মুখেও প্রকাশ করে। আমাদের প্রিয় নবী (সা.)-ও মুখে ভালোবাসার কথা প্রকাশ করতেন। আমর ইবনুল আস (রা.) বর্ণনা করেন, ‘আমি নবী (সা.)-এর কাছে উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, মানুষের মধ্যে কে আপনার কাছে সবচেয়ে প্রিয়? তিনি বলেন, আয়েশা! (বুখারি : ৩৬৬২)
প্রেমময় কথা বলা
স্ত্রীদের পছন্দের আরেকটি বিষয় হলো প্রেমময় বা হৃদয়গ্রাহী কথা বলে তাদের আনন্দ ও আপ্লুত করা। এতে তারা খুব স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। নবী (সা.)-ও মাঝেমধ্যে তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রীদের বিভিন্ন প্রেমময় কথায় আপ্লুত করতেন। খাদিজা (রা.) সম্পর্কে নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘আমার মনে তার প্রতি ভালোবাসা ঢেলে দেওয়া হয়েছে।’ (মুসলিম : ২৪৩৫)
স্ত্রীকে মধুর নামে ডাকা
স্ত্রীর আসল নাম ছাড়া পারস্পরিক ভালোবাসা বৃদ্ধি পায় এমন অর্থবহ বৈধ নামে ডাকা নাজায়েজ নয়; বরং ক্ষেত্রবিশেষ তা আবশ্যক। নবীজি (সা.)-এর পবিত্র জীবনীতেও এর উদাহরণ রয়েছে। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) ভালোবেসে কখনো কখনো আমার নাম ‘হুমায়রা’ বা ‘লাল গোলাপ’ বলে ডাকতেন।’ (ইবনে মাজাহ : ২৪৭৪)
প্রেমময় আচরণ করা
প্রতিদিনের জীবনে আমাদের নানা রকম ব্যস্ততা রয়েছে। তবে এই ব্যস্ততার ফাঁকে স্ত্রীর সঙ্গে প্রেমময় আচরণ করা, আনন্দ দেওয়া এটা ইসলামের শিক্ষা। আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, ‘আমি ঋতুবতী অবস্থায় পানি পান করতাম এবং পরে নবী (সা.)-কে অবশিষ্টটুকু প্রদান করলে আমি যেখানে মুখ লাগিয়ে পান করতাম, তিনিও পাত্রের সেই স্থানে মুখ লাগিয়ে পান করতেন। আবার আমি ঋতুবতী অবস্থায় হাড় খেয়ে তা নবী (সা.)-কে দিলে আমি যেখানে মুখ লাগিয়েছিলাম তিনি সেখানে মুখ লাগিয়ে খেতেন।’ (মুসলিম : ৫৭৯)
বৈধ খেলাধুলা করা
আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন, ‘তিনি এক সফরে নবী (সা.)-এর সঙ্গে ছিলেন। তিনি বলেন, আমি তাঁর সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা করে তাঁর আগে চলে গেলাম। অতপর আমি মোটা হয়ে যাওয়ার পর তাঁর সঙ্গে আবারও দৌড় প্রতিযোগিতা করলাম, এবার তিনি আমাকে পিছে ফেলে দিলেন, বিজয়ী হলেন। তিনি বলেন, এই বিজয় সেই বিজয়ের বদলা।’ (আবু দাউদ : ২৫৭৮)
ব্যক্তিগত কাজে পরামর্শ করা
ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি ও অন্যান্য ব্যক্তিগত বিষয়ে অনেকই স্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করাটাকে অনর্থক মনে করেন। এটা কোনোভাবেই উচিত নয়। কারণ রাসুলুল্লাহ (সা.) শুধু ঘরোয়া বিষয়ই নয়; বরং মুসলিম উম্মাহর অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ক্ষেত্রেও নিজের স্ত্রীদের সঙ্গে পরামর্শ করেছেন। ‘হুদায়বিয়ার সন্ধি’ নামক ইসলামি ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রেক্ষাপটে নবীজি (সা.) স্বীয় স্ত্রী উম্মে সালমা (রা.)-এর কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েছিলেন। পরবর্তী সময় যা অতি কার্যকরী বলে বিবেচিত হয়। (বুখারি : ২৭৩১)