নিউইয়র্কে বাড়িওয়ালাদের ভোগান্তি

সম্প্রতি বাড়িওয়ালা এবং ভাড়াটিয়াদের অধিকার এবং আইন নিয়ে নিউইয়র্কে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বেশ উত্তপ্ত। সমাজবোদ্ধাদের ধারণা করোনা মহামারির অজুহাতে অনেক ভাড়াটিয়া ইচ্ছে করে সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও বাড়িওয়ালাদের ভাড়া দিচ্ছে না।

এতে বাড়িওয়ালাদের ভোগান্তি দিন দিন বাড়ছে। অন্যদিকে মাসের পর মাস ভাড়া না পেয়ে অনেক বাড়িওয়ালা নিয়মিত তাদের ব্যাংকের মর্টগেজ দিতে পারছেন না। এদের অনেকে আবার দেউলিয়া ঘোষণা করেছে বলে জানা যায়।

আবার অনেকে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের চাকরির বাজার সম্পূর্ণ উন্মুক্ত থাকার পরও অনেক ভাড়াটিয়া ইচ্ছে করে চাকরি নিচ্ছে না। বরং সরকারের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়মিত ভোগ করে যাচ্ছে এবং অলস দিন কাটাচ্ছে। এদিকে রাজ্য সরকার এবং ফেডারেল সরকার নতুন নতুন ভাড়াটিয়া উচ্ছেদবিরোধী আইন করে যাচ্ছে। এ নিয়ে জস ফিলিপস নামের এক অধ্যাপক টুইট বার্তায় বলেন, কেন বাড়িওয়ালাদের উচ্ছেদ মোরাটোরিয়ামের মাধ্যমে বিনামূল্যে শ্রম দিতে হবে, কিন্তু মুদি দোকানগুলোকে বিনামূল্যে খাবার সরবরাহ করতে হবে না?

এমএইচডিইউ আইডিতে আরেকজন টুইটার ব্যবহারকারী বলেন, কিছু প্রগতিশীল মানুষ এ সমাজে বাড়িওয়ালাদের অস্তিত্ব মানতে রাজি নয়। তারা সম্পত্তির মালিকদের দেখলে কীভাবে জোঁকের মত চুষে দিনাতিপাত করবে সে চিন্তায় শুধু ব্যস্ত থাকে। তার ওপর এরাই যুক্তি দেয় যে জমির মালিকরা ব্যাংকের মর্টগেজ দিতে না পারলে বাড়িই বা কিনছে কেন এবং এর জন্য তারা নিজেরাই দায়ী। অন্য কেউ না।

ব্রঙ্কসের বাড়িওয়ালা মোহাম্মদ হাসনাত বলেন, গত একটি বছর আমার ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে কোনো ভাড়া পাচ্ছি না। প্রায় ত্রিশ হাজার ডলার ভাড়াটিয়াদের কাছে পাব। ভাড়াটিয়াদের ভাড়ার জন্য জিজ্ঞেস করলে তারা উল্টো মামলা এবং পুলিশের হুমকি দেয়।

হাসনাত আরও বলেন, আইন আমাদের পক্ষে নাই তাই তারা এসব করছে। কিন্তু আমি কীভাবে ব্যাংকের মর্টগেজ চালাব সে চিন্তায় ঘুম হয় না। দেউলিয়া ঘোষণা ছাড়া উপায় দেখছি না।

নিউইয়র্ক পোস্ট জানিয়েছে, ব্রুকলিনের বাড়িওয়ালা ক্যালভিন এবং জিন থম্পসনের তাদের এক বাড়াটিয়ার কাছে ২০ হাজার ডলার ভাড়া পাওনা রয়েছে। কিন্তু ভাড়াটিয়ারা ইচ্ছে করে ভাড়া দিচ্ছে না। তাই তারা বড় করে একটি পোস্টারে বাড়ির ওপর লিখে রাখেন ‘আমার প্রথমতলার ভাড়াটিয়ারা ভাড়া দেয় না।’ এটি একটি টিকটক ভিডিওতেও দেখানো হয়েছিল যেখানে ১৪ হাজারেরও বেশি লাইক এবং সমর্থনমূলক মন্তব্য পড়েছে।

নিউইয়র্কের বাড়িওয়ালাদের ভোগান্তি কমানোর কোনো সম্ভাবনা নেই। জানা যায়, বর্তমানে নিউইয়র্কের কোর্টে প্রায় দুই লাখ মামলা চলছে এবং এ মামলাগুলোর দ্রুত কোনো সুরাহা হবে না বলে অনেকে ধারণা করছেন। নিউইয়র্কের বর্তমান বাড়িভাড়া আইন অনুযায়ী, কোনো ভাড়াটিয়া ত্রিশ দিনের বেশি একটি বাড়িতে ভাড়া থাকার পর ভাড়া না দিলে সে বাড়ির মালিক ইচ্ছে করলে ভাড়াটিয়াকে তাড়াতে পারবে না বা তাদের দরজাতে তালা দিতে পারবে না। উপরন্তু তাদের দৈনন্দিন যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা যেমন বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস সেবা চালু রাখতে হবে। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র আদালতের রায়ই প্রাধান্য পাবে।

আরেক বাড়িওয়ালা হোসে হার্রন্ডাজেজ বলেন, সব পরিস্থিতি থেকে কিছু না কিছু শেখা করা যায়। তেমনি আমিও শিখলাম যে নিজের পরিচিত এবং যাদের ভালো চাকরি আছে তাদের ছাড়া কাউকে বাড়ি ভাড়া দিতে নেই। কারও প্রতি দয়া করে ভাড়া দেওয়া উচিত নয়।

তিনি আরও বলেন, অজানা কাউকে বাড়ি ভাড়া দেওয়া একদম উচিত নয়। নতুন ভাড়াটিয়াদের বাড়ি ভাড়া দেওয়ার আগে তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত তদন্ত করে জানা উচিত। না হলে আজীবন অনুশোচনা করতে হবে।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

বন্ধ হয়ে যেতে পারে আমেরিকান নাগরিকদের দেশে ফেরা

আনসারুল হক

যুক্তরাষ্ট্রের জামাইকা যেন এক টুকরো বাংলাদেশ

নূর নিউজ

সমকামী বিয়ে বৈধতা পেল মার্কিন সিনেটে, বাইডেনের উচ্ছ্বাস

নূর নিউজ