পবিত্র কুরআনে উল্লিখিত ১০টি গাছ

কুরআন ও সুন্নাহ’য় “গাছ” শব্দটি এটির সকল উৎপত্তিগত অর্থসহ বহুবার উল্লিখিত হয়েছে। এছাড়াও পবিত্র কুরআনে ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় ফলমূল, লতাপাতা ও শেকড় নিয়ে আলোচনা এসেছে। কুরআন-হাদীসের অনেক স্থানে বিভিন্ন গাছপালা ও উদ্ভিদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন- ডুমুর গাছ, জলপাই গাছ, ডালিম গাছ, আঙুর গাছ, খেজুর গাছ, লাউ গাছ, ঝাউগাছ, আদা, কর্পুর ইত্যাদি।

১. মান্না (কুরআনের আয়াত ৩): বর্তমানে ব্যাঙের ছাতার মত দেখতে বিশেষ এক ধরনের উদ্ভিদ বাজারে পাওয়া যাচ্ছে যা অর্থেরে বিনিময়ে কেনা-বেচা হয়। যাকে আজকের যূগে আমরা মাশরুম বলে জানি। ‘মান্না ব্যাঙের ছাতার অন্তর্গত এবং ওর পানি চোখের রোগের মহাঔষধ।

ইমাম তিরমিযী একে হাসান বলেছেন, জামেউত তিরমিযীতে এসেছে যেঃ আজওয়াহ নামক মদীনার এক ধরনের খেজুর হল জান্নাতী খাদ্য ও বিষক্রিয়া নষ্টকারী এবং ব্যাঙের ছাতা মান্না এর অন্তর্গত ও চোখের রোগে আরোগ্যদানকারী। তিরমিযী: ৬:২৩৩, ২৩৫।

২. খেজুর (কুরআনের আয়াত ২০): খেজুর অত্যন্ত সুস্বাদু ও বেশ পরিচিত একটি ফল। যা ফ্রুকটোজ এবং গ্লাইসেমিক সমৃদ্ধ। এটা রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ায়। পাশাপাশি বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধকও রয়েছে এতে। নিয়মিত খেজুর খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একাধিক বর্ণনায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতার কথা উঠে এসেছে।

আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল সা. বলেন, ‘মদিনার উচ্চভূমিতে উৎপন্ন আজওয়া খেজুরের মধ্যে রোগের নিরাময় রয়েছে। আর প্রথম ভোরে তা আহার করা বিষের প্রতিষেধক।’ (মুসলিম: ৫১৬৮; সিলসিলাতুস সহিহাহ: ৩৫৩৯)

হজরত সাদ রা. বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ সা. বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি ভোরে সাতটি আজওয়া খেজুর খাবে, সেদিন কোনো বিষ ও যাদু-টোনা তার ক্ষতি করতে পারবে না।’ (বুখারি: ৫৪৪৫; মুসলিম: ২০৪৭-১৫৫; আবু দাউদ: ৩৮৭৬

৩. জয়তুন (কুরআনের আয়াত ৭): জয়তুন ছিল মহানবী সা. এর প্রিয় ফল। এর তেল শরীরের জন্য বেশ উপকারি। রাসুল সা. নিজে ব্যবহার করতেন এবং সাহাবায়ে কেরামকেও জয়তুনের তেল ব্যবহারের তাগিদ দিতেন।

হজরত ওমর ইবনে খাত্তাব রা. বলেন, রাসুল সা. ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা (জয়তুনের) তেল খাও এবং তা শরীরে মালিশ করো। কেননা এটি বরকত ও প্রাচুর্যময় গাছের তেল। (তিরমিজি, হাদিস: ১৮৫১)

৪. ডালিম (কুরআনের আয়াত ৩):জান্নাতি ফল ডালিম; যে ফলের নাম পবিত্র কোরআনে একাধিকবার উল্লেখ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তিনিই সৃষ্টি করেছেন এমন বাগানসমূহ—যার কিছু মাচায় তোলা হয় আর কিছু তোলা হয় না এবং খেজুরগাছ ও শস্য, যার স্বাদ বিভিন্ন রকম, জয়তুন ও আনার (ডালিম), যার কিছু দেখতে এক রকম আর কিছু ভিন্ন রকম। তোমরা তার ফল থেকে আহার করো, যখন তা ফল দান করে এবং ফল কাটার দিনেই তার হক দিয়ে দাও আর অপচয় কোরো না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের ভালোবাসেন না।’ (সুরা আনআম, আয়াত : ১৪১)

৫. মসুর ডাল (কুরআনের আয়াত ১):মসুর ডালে আছে বেশ কিছু পুষ্টিকর উপাদান, যা একাধিক রোগ উপশমে উপকারী। জেনে নিন মসুর ডালের কিছু উপকারিতা বাজে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে : মসুর ডালে উপস্থিত ফাইবার, রক্তে মিশে থাকা বাজে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। ফলে একদিকে যেমন হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা কমে, তেমনি স্ট্রোকের সম্ভাবনাও হ্রাস পায়।

হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে: মসুর ডালে ফাইবার ছাড়াও ফলেট ও ম্যাগনেশিয়ামের উপস্থিতি হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে তো

৬. পেঁয়াজ (কুরআনের আয়াত 1): পবিত্র কোরআনে রয়েছে বিভিন্ন মসলাজাতীয় উদ্ভিদের নাম। সেগুলোর মধ্যে একটি হলো পেঁয়াজ।

এর বৈজ্ঞানিক নাম এলিয়াম সেপা। কোরআনের ভাষায় বলা হয় ‘বাসল’। পেঁয়াজ মানুষের খাবারের তালিকায় অত্যন্ত পছন্দনীয় একটি অংশ।

নির্বোধ বনি ইসরাঈলরা জান্নাতের খাবার ‘মান্না-সালওয়ার’ পরিবর্তে যেসব খাবারের চাহিদা করেছিল, তার একটি ছিল পেঁয়াজ। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন তোমরা বলেছিলে, হে মুসা! আমরা এ ধরনের খাদ্যে কখনো ধৈর্য ধারণ করব না। সুতরাং তুমি তোমার প্রতিপালকের কাছে আমাদের জন্য প্রার্থনা করো।

তিনি যেন ভূমিজাত দ্রব্য শাকসবজি, কাঁকুড়, গম, মসুর ও পেঁয়াজ আমাদের জন্য উৎপাদন করেন। মুসা বললেন, তোমরা কি উত্কৃষ্টতর বস্তুকে নিকৃষ্টতর বস্তুর সঙ্গে বদল করতে চাও? তবে কোনো নগরে অবতরণ করো। তোমরা যা চাও, নিশ্চয়ই তা সেখানে আছে। তারা লাঞ্ছনা ও দারিদ্র্যগ্রস্ত হলো এবং তারা আল্লাহর ক্রোধের পাত্র হলো। এটি এ জন্য যে তারা আল্লাহর আয়াতকে অস্বীকার করত এবং নবীদের অন্যায়ভাবে হত্যা করত। অবাধ্যতা ও সীমা লঙ্ঘন করার জন্যই তাদের এই পরিণতি হয়েছিল। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ৬১)

৭.রসুন (কুরআনের আয়াত ১): রসুন তেমনি একটি উপকারী সবজি। রসুনের প্রাকৃতিক গুণের কথা মোটামুটি কমবেশি আমরা সবাই জানি। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে কাঁচা রসুন খাওয়ার রয়েছে বিশেষ উপকার। তবে আসরা অনেকেই কাঁচা রসুন খেতে পাারি না। রসুনে রয়েছে বিশেষ এক ধরনের ঝাঁঝ, যার ফলে খালি পেটে কাঁচা রসুন খাওয়াটা বেশ কষ্টকর।

উপকারিতা: রসুন একটি শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিকের কাজ করে। গবেষকদের মত, খালি পেটে রসুন গ্রহণ হাইপারটেনশন ও স্ট্রেস কমাতে সহায়তা করে। পেটে হজমের সমস্যা থাকলে তাও দূর করে। এছাড়া এটি স্ট্রেস থেকে পেটে গ্যাসের সমস্যা দূরীকরণে, পেটের অন্যান্য গণ্ডগোলজনিত অসুখ যেমন ডায়রিয়া সারাতে, শরীরের রক্ত পরিশুদ্ধ করণে ও লিভারের ফাংশন ভালো রাখতে ভূমিকা রাখরসুন পুরুষের যৌন শক্তি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূণ ভূমিকা রাখে।

৮.শসা (কুরআনের আয়াত ১): স্বাস্থ্যকর ডায়েটের কথা ভাবলেই প্রথমে আসে সালাদের কথা। আর সালাদের অন্যতম উপাদান হলো শসা। সালাদে এমন অনেক উপাদান রয়েছে যা পুষ্টিতে ভরপুর। ওজন কমানো ছাড়াও শসার আরো অনেক ভালো গুণ রয়েছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক শসার উপকারিতা সম্পর্কে।

শরীরকে হাইড্রেট রাখে: শসায় বেশিরভাগ রয়েছে পানি যা শরীরকে হাইড্রেট করতে সাহায্য করে এবং দীর্ঘ সময় যাবত হাইড্রেট থাকে।

কোষ্ঠ্যকাঠিন্য দূর করে: শসার প্রচুর ফাইবার রয়েছে যা কোষ্ঠ্যকাঠিন্যতা দূর করতে সাহায্য করে। এতে করে পেট পরিষ্কার থাকে।

ওজন কমায়: শসায় ক্যালোরি কম ও পুষ্টিগুণ বেশি। শসা খেলে পেট অনেকক্ষণ ভরা থাকে। এতে করে ক্ষুধার প্রতি প্রবণতা কমে।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে: উচ্চ রক্তচাপ শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। এতে করে ডায়াবেটিসের সম্ভাবনাও কমায়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: শসায় প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং দীর্ঘস্থায়ী কোন রোগের সম্ভবনা কমায়।

দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে: শসাতে ভিটামিন এ রয়েছে যা দৃষ্টি শক্তি ভালো রাখে।

স্কিন উন্নত করে: শসা স্কিন কেয়ারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে

৯. লাউ (কুরআনের আয়াত ১): হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, এক দর্জি খাবার তৈরি করে রাসূলুল্লাহ সা. কে দাওয়াত দিলেন, আনাস ইবনে মালিক রা. বলেন, আল্লাহর রাসূল সা.-এর সামনে রুটি এবং ঝোল যাতে লাউ ও গোশতের টুকরো ছিল, পেশ করা হলো। আমি নবী সা. কে দেখতে পেলাম, পেয়ালার কিনারা থেকে তিনি লাউয়ের টুকরা খোঁজ করে নিচ্ছেন। সে দিন থেকে আমি সব সময় লাউ ভালোবাসতে থাকি। (সহিহ বুখারি ২০৯২ সহিহ মুসলিম ৫২২০, আল হাদিস সফট)

১০. সরিষা (কুরআনের আয়াত ২): সরিষার সস, ভর্তা কিংবা যেভাবেই খাওয়া হোক, এর থেকে মিলবে আঁশ, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়ামসহ আরও পুষ্টিগুন। তবে সবচেয়ে বেশি যেটা পাওয়া যায় তা হল ক্যালসিয়াম।

‘ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচার’য়ের তথ্যানুসারে এক চা-চামচ সরিষায় থাকে প্রায় ৪ মি.লি.গ্রাম ক্যালসিয়াম। তাই খাবারে দুতিন চামচ সরিষা ভর্তা যোগ করতে পারলে মিটবে দেহের প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়ামের চাহিদা। সূত্র: ইসলামিক ইনফরমেশন

এ জাতীয় আরো সংবাদ

ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন ও কিছু কথা

আনসারুল হক

সৌদি আরবে কোরআন প্রতিযোগিতায় ১১১ দেশের মধ্যে তৃতীয় তাকরীম

নূর নিউজ

জাতীয় মসজিদের খতিবকে নিয়ে যা লিখলেন আবুল হাসানাত আমিনী

নূর নিউজ