পবিত্র কোরআনে সকল নবী ও রাসুল (আ.)-এর নির্দিষ্ট সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি। তাদের প্রকৃত সংখ্যার ব্যাপারে একমাত্র মহান আল্লাহতায়ালাই সম্যক অবগত। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আর অবশ্যই আমি তোমার পূর্বে অনেক রাসুল পাঠিয়েছি। তাদের মধ্যে কারও কারও কাহিনী আমি তোমার কাছে বর্ণনা করেছি আর কারও কারও কাহিনী তোমার কাছে বর্ণনা করিনি…।’ সুরা মুমিন, আয়াত ৭৮)
অবশ্য হাদিস শরিফে নবী ও রাসুল (আ.)-দের একটি সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে। হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, নবীদের সংখ্যা কত? তিনি বলেন, এক লাখ ২৪ হাজার। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, এদের মধ্যে রাসুল কতজন? তিনি বললেন, ৩১৩ জন, অনেক বড় সংখ্যা।’ (ইবনে কাসির : ১/৫৮৭-৫৮৮)
কোরআনে বর্ণিত নবী ও রাসুল (আ.)
তবে কোরআনে কারিমে আলোচিত হয়েছে ২৫ জন নবী-রাসুল (আ.)-এর নাম। বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে তাঁদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত নবী ও রাসুলরা হলেন- হজরত আদম আলাইহিস সালাম, হজরত ইদরিস আলাইহিস সালাম, হজরত নুহ আলাইহিস সালাম, হজরত হুদ আলাইহিস সালাম, হজরত সালেহ আলাইহিস সালাম, হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম, হজরত লুত আলাইহিস সালাম, হজরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম, হজরত ইসহাক আলাইহিস সালাম, হজরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম, হজরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম, হজরত শোয়াইব আলাইহিস সালাম, হজরত আইয়ুব আলাইহিস সালাম, হজরত যুলকিফল আলাইহিস সালাম, হজরত মুসা আলাইহিস সালাম, হজরত হারুন আলাইহিস সালাম, হজরত দাউদ আলাইহিস সালাম, হজরত সোলায়মান আলাইহিস সালাম, হজরত ইলিয়াস আলাইহিস সালাম, হজরত ইয়াসা আলাইহিস সালাম, হজরত ইউনুস আলাইহিস সালাম, হজরত জাকারিয়া আলাইহিস সালাম, হজরত ইয়াহইয়া আলাইহিম সালাম, হজরত ঈসা আলাইহি সালাম ও সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসুল হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
কোরআনে যে তিনজন নবী ও রাসুল (আ.)-এর নাম বেশিবার এসেছে
১. হজরত মুসা আলাইহিস সালাম
পবিত্র কোরআনে হজরত মুসা আলাইহিস সালামের নাম সবচেয়ে বেশিবার আলোচিত হয়েছে। ৩৪টি সুরায় ১৩৭ বার এসেছে তাঁর নাম। বনী ইসরাঈলের প্রথম নবী ছিলেন তিনি। মুসা (আ.)-কে আল্লাহতায়ালা অনেকগুলো মুজেজা দিয়েছিলেন। তার মধ্যে একটি হলো- মুসা (আ.) তার হাতের লাঠি মাটিতে রেখে দিলে তা বিশাল বড় সাপে পরিণত হতো। পরে তিনি সেটা হাতে নিলে আবার লাঠি হয়ে যেতো।
২. হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম
কোরআনুল কারিমে হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের নাম ২৫টি সুরায় ৬৯ বার উল্লেখ করা হয়েছে। তার জন্মস্থান ইরাক। বসবাস করেছেন ফিলিস্তিন অঞ্চলে। পরে আল্লাহতায়ালার হুকুমে স্ত্রী ও শিশু সন্তান ইসমাঈলকে জনমানবহীন মক্কায় রেখে আসেন। হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামকে আবুল আম্বিয়া বা নবীদের পিতা বলা হয়। তিনি ছেলে ইসমাঈলকে সাথে নিয়ে কাবা ঘর নির্মাণ করেন ও সর্বপ্রথম মানুষকে বায়তুল্লাহর হজ করার জন্য আহ্বান জানান।
৩. হজরত নুহ আলাইহিস সালাম
২৮টি সুরায় ৪৩ বার উল্লেখ করা হয়েছে এই নবীর নাম। তিনি নিজ জাতিকে সাড়ে ৯০০ বছর দাওয়াত দিয়েছেন। তার ছেলে কেনানকে কুফরির কারণে আল্লাহতায়ালা মহাপ্লাবনে ডুবিয়ে মেরেছিলেন।
নবী ও রাসুলের মধ্যে পার্থক্য
নবী ও রাসুলের মধ্যে বড় দু’টি পার্থক্য আছে। যেমন- রাসুল হলেন, যাকে নতুন কিতাব দেওয়া হতো। পক্ষান্তরে নবীকে নতুন কিতাব দেওয়া হতো না। তিনি তাঁর পূর্ববর্তী রাসুলের কিতাবের প্রতি মানুষকে দাওয়াত দিতেন।
দ্বিতীয় পার্থক্যটি হলো- রাসুলের ওপর ওহি নাজিল হতো। কিন্তু নবীর ওপর সরাসরি ওহি নাজিল হতো না। নবীর কাছে ইলহাম আসতো কিংবা সত্য স্বপ্নের মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা তাকে নির্দেশনা দিতেন।
সারকথা হলো- প্রত্যেক রাসুল নবী কিন্তু প্রত্যেক নবী রাসুল নন। হজরত মোহাম্মদ (সা.) একইসঙ্গে নবী ও রাসুল।
তথ্যসূত্র : আর রুসুলু ওয়ার রিসালাত, মাজাল্লাতুল বুহুস আল ইসলামিয়া, আল ইতকান ফি-উলুমিল কোরআন ও অন্যান্য
লেখক: মাওলানা বেলায়েত হোসাইন
গণমাধ্যমকর্মী; শিক্ষক, মারকাযুদ দিরাসাহ আল ইসলামিয়্যাহ, ঢাকা