বিখ্যাত সাহাবি হজরত আবু মুসা আশআরী রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! ইসলামে কোন কাজটি উত্তম? তিনি বললেন, যার জিহ্বা ও হাত থেকে মুসলিমগণ নিরাপদ থাকে। (বুখারি, হাদিস : ১১)
এই হাদিসে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলিম ব্যক্তির পরিচয় দিতে গিয়ে তার অন্যতম প্রধান একটি বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করেছেন, আর তা হচ্ছে নিজের জিহ্বা ও হাত দিয়ে অন্য কোনও মুসলিমকে কষ্ট না দেওয়া।
অন্যকে কষ্ট না দেওয়া একজন পরিপূর্ণ ও উৎকৃষ্ট মুসলিমের গুণ। যার মধ্যে এটি না থাকে কিন্তু ইসলামের অন্যান্য জরুরি বিষয়সমূহ সে পালন করে, সে অবশ্যই মুসলিম থাকবে কিন্তু পরিপূর্ণ ও উৎকৃষ্ট মুসলিম বলে গণ্য হবে না।
জিহ্বা দিয়ে কষ্ট না দেওয়ার ব্যাখ্যা
অর্থাৎ, জিহ্বা ও হাত দিয়ে কাউকে কষ্ট না দেওয়া শ্রেষ্ঠ মুসলিমের গুণ। বোঝা গেল এ গুণ কোনও মুসলিমের মধ্যে না থাকলে সে মুসলিম থাকবে বটে, কিন্তু শ্রেষ্ঠ মুসলিম বলে গণ্য হবে না।
যার জিহ্বা থেকে মুসলিমগণ নিরাপদ থাকে অর্থাৎ সে তার জিহ্বা দিয়ে তাদেরকে কোনোরকম কষ্ট দেয় না, সে তাদেরকে গালি দেয় না, অভিশাপ দেয় না, গীবত করে না, চুগলখোরী করে না, ঝগড়া-ফাসাদে উস্কানি দেয় না।
একইসঙ্গে মুখের এমন কোনো ব্যবহার করে না, যার মাধ্যমে কেউ কষ্ট পেতে পারে বা কারও কোনও ক্ষতি হতে পারে।
উল্লেখ্য, যখন থেকে লেখা ও কলমের ব্যবহার শুরু হয়েছে, তখন থেকে এ মাধ্যমটিও জিহ্বার বিকল্প গণ্য হয়ে আসছে। বলা হয়ে থাকে- القلم أحد اللسانين (কলম মানুষের দ্বিতীয় জিহ্বা)।
সুতরাং লেখা বা কলমের ব্যবহার দ্বারা কাউকে কষ্ট দেওয়া হলে তাও এ হাদিসের অন্তর্ভুক্ত হবে। অর্থাৎ প্রকৃত মুসলিম তার লেখনী শক্তি দ্বারাও কষ্ট দেবে না।
হাত দিয়ে কষ্ট না দেওয়ার ব্যাখ্যা
হাদিসে জিহ্বার পাশাপাশি হাত দিয়ে কষ্ট না দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, অর্থাৎ, প্রকৃত মুসলিমের হাত থেকে অন্য মুসলিম নিরাপদ থাকে।
অর্থাৎ হাত দিয়ের সে কাউকে কষ্ট দেয় না, কাউকে অন্যায়ভাবে মারধর করে না, যাতায়াত পথে কষ্টদায়ক জিনিস ফেলে না, কারও মাল কেড়ে নেয় না ইত্যাদি।
‘হাত’ দ্বারা অনেক সময় ক্ষমতা ও প্রভাবও বোঝানো হয়ে থাকে, যেমন বলা হয় এ বিষয়ে আমার কোনো হাত নেই মানে আমার ক্ষমতা নেই বা তার ওপর আমার কোনও হাত নেই অর্থাৎ তার ওপর আমার কোনও প্রভাব নেই। সুতরাং কেউ যদি ক্ষমতা ও প্রভাব-প্রতিপত্তি খাটিয়ে অন্যের ক্ষতি করে, তাও হাত দ্বারা কষ্ট দেওয়ার অন্তর্ভুক্ত হবে। তাই প্রকৃত মুসলিম তার ক্ষমতা ও প্রভাবের অপব্যবহার করে না এবং এর দ্বারা অন্যের ক্ষতিসাধন হতে বিরত থাকে।