সোমবার (৩১ মার্চ) জাতীয় ঈদগাহে অনুষ্ঠিত হয়েছে পবিত্র ঈদুল ফিতরের জামাত। এতে দেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন প্রধান বিচারপতি, সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, রাজনৈতিক নেতা, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন মুসলিম দেশের কূটনীতিকসহ হাজারো মুসল্লি।
ঈদের প্রধান জামাতের ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি মুহাম্মদ আবদুল মালেক। নামাজপূর্ব বয়ানে খতিব বলেন, ‘ইসলামের মৌলিক জ্ঞান অর্জন করা প্রতিটি মুসলমানের উপর ফরজ। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে প্রতিটি মুসলিমের এই প্রয়োজনীয় জ্ঞান অর্জনের ব্যবস্থা করা।

মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক বলেন, ‘একটি আদর্শ কল্যাণ রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি হচ্ছে তিনটি জিনিসের উপর। ঈমান, আমান ও আমানত। আমানত হচ্ছে দ্বীনের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শরিয়াত, কুরআন ও সুন্নাহ সবকিছু আমাদের কাছে আমানত। রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে ব্যক্তি পর্যায়ে সকল স্তরে আমাদেরকে আমানত রক্ষা করতে হবে। ঈমানের জীবন যাপন করতে হবে। তাহলেই আমান (শান্তি ও নিরাপত্তা) অর্জিত হবে’।
এসময় খতিব হাদিসশাস্ত্র হতে গুরুত্বপূর্ণ দুইটি হাদিসের বিষয়ে আলোকপাত করেন।
প্রথম হাদিস: الدِّينُ النَّصِيحَةُ. قُلْنا: لِمَنْ؟ قالَ: لِلَّهِ ولِكِتابِهِ ولِرَسولِهِ ولأَئِمَّةِ المُسْلِمِينَ وعامَّتِهِمْ অর্থাৎ, দ্বীন হচ্ছে কল্যাণকামিতা। আল্লাহর জন্য, কুরআনের জন্য, রাসুলের সা: জন্য, মুসলমানদের শাসকদের জন্য এবং জনসাধারণের জন্য। আল্লাহ ও রাসুলের বিধানকে পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে। মুসলিম শাসকগণ ইসলাম ও রাষ্ট্রের কল্যাণে যা সিদ্ধান্ত নিবেন তা মেনে চলা আবশ্যক। তবে আল্লাহর বিধান বিরুদ্ধ সিদ্ধান্ত পরিহারযোগ্য। এছাড়াও মুসলমানগণ একে অপরের কল্যাণকামী হবেন।
দ্বিতীয় হাদিস: : كلكم راعٍ، وكلكم مسئولٌ عن رعيته، فالإمام راعٍ ومسئولٌ عن رعيته অর্থ: তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেককেই তার অধিনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। রাষ্ট্রের পরিচালনায় যারা নিয়োজিত আছেন তাদের দায়িত্ব হলো জনসাধারণের কল্যাণকামিতায় মনোযোগী হওয়া।
খতিব বলেন, ‘ঈদুল ফিতরের এই আনন্দঘন মুহুর্তে আমরা গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্বরণ করছি ফিলিস্তিনের গাজায় বর্বরোচিত হামলায় শহিদদেরকে। গাজাবাসীদের জন্য আমরা সর্বদা দোয়া করবো। পাশাপাশি ওআইসিভুক্ত মুসলিম রাষ্ট্র সমূহের শাসকদের কর্তব্য হচ্ছে এই জুলুমের প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখা।’

ঈদুল ফিতরের তাৎপর্য আলোচনা করতে গিয়ে খতিব মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক বলেন, ‘দুই ঈদ হচ্ছে মুসলমানদের উৎসব ও আনন্দের দিন। এর বাইরে কোন ধর্মীয় উৎসব নেই মুসলমানদের। রমজানের শিক্ষা হচ্ছে সবর এবং তাকওয়া। এই শিক্ষাকে ধারণ করে আল্লাহর বড়ত্ব (তাকবির) বর্ণনা এবং নেয়ামতের শুকরিয়া প্রকাশের দিন হচ্ছে ঈদুল ফিতর। দেশ ও উম্মাহর কল্যাণে সবর ও সংযম এবং তাকওয়া ও খোদাভীতির মাধ্যমে আমাদের জীবন পরিচালনা করাই ঈদুল ফিতরের প্রেরণা।’