সুফিয়ান ফারাবী : কাতার প্রবাসী বিশিষ্ট ইসলামী দায়ী মাওলানা জয়নুল আবদীন ও ঢাকার এশিয়ান ইউনিভার্সিটির লেকচারার, প্রতিভাবান আলেমেদ্বীন মাওলানা শাহাদাত হোসাইন নদভীর স্মরণে আলোচনা ও দোয়া মাহফিল করেছে কাতারস্থ আল নূর কালচারাল সেন্টার।
গত ২১ নভেম্বর রাজধানীর দোহা জাদিদ ইবনে হাযম জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত এই দোয়া মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন আল নুর কালচারাল সেন্টারের গবেষণা ও প্রকাশনা পরিচালক অধ্যাপক এ কে এম আমিনুল হক।
প্রয়াত এই দুই আলেমের ইসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে দরসে কুরআন পেশ করেন হাফেজ মুহাম্মদ উল্লাহ, মাওলানা গোলাম রব্বানী ও হাফেজ শফিকুল ইসলাম। দরসে হাদিস পেশ করেন হাফেজ মোস্তাফিজুর রহমান। স্মৃতিচারণ করেন বিশিষ্ট কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব মোহাম্মদ আলী।উপস্থিত ছিলেন মাওলানা হাফেজ ঈসা ,মুফতি ফয়জুল্লাহ ও নজরুল ইসলাম প্রমুখ।
স্মরণসভায় মুখ্য আলোচক ছিলেন আল নূর কালচারাল সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক এবং কাতার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ইমাম ও খতিব মাওলানা ইউসুফ নুর।
তিনি তার বক্তব্যে প্রয়াত বিদগ্ধ দুই আলেমের স্মৃতিচারণ করে বলেন, মাওলানা জয়নাল আবেদীন একজন ইসলামী বক্তা ছিলেন। প্রাঞ্জল ভাষায় তিনি মানুষের সামনে কোরআন-হাদিসের কথা তুলে ধরতেন। তিন দশকের বেশি সময় ধরে তিনি কাতারে ইসলামী স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কোন প্রকার পারিশ্রমিক না নিয়ে ওয়াজ নসিহত ইত্যাদির মাধ্যমে দাওয়াতী কাজ করে গেছেন। আমাকেও তিনি কাতার আসার পর দাওয়াতি কাজের জন্য শুধু উৎসাহ দিয়েছেন তা নয় বরং অনেক সহযোগিতাও করেছিলেন।তাঁর এই অবদান কখনো ভুলার মত নয়
মাওলানা জয়নাল আবেদীনকে আমাদের বর্তমান সময়ে ইসলামী দায়ীদের জন্য ইখলাস ও নিষ্ঠার এক অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের বক্তাগণ এমন হলে জাতি অনেক উপকৃত হবে এবং দাওয়াতী ময়দান আধ্যাত্মিকতায় সমৃদ্ধ হবে ইনশাআল্লাহ।
মাওলানা শাহাদাত হোসেন রহ. সম্পর্কে আবেগঘন ভাষায় মাওলানা ইউসুফ নূর বলেন, মরহুম শাহাদাত হোসেন লালখান বাজার, জামেয়াতুল উলুম, হাটহাজারী দারুল উলুম এবং পরবর্তীতে নদওয়াতুল উলামায় পড়াশোনা করেছিলেন। সম্প্রতি ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি আরবীতে মাস্টার্স কমপ্লিট করেছিলেন। পিএইচডি এর প্রস্তুতি চলছিল। কিন্তু আল্লাহর ফয়সালা গত ১৮ তারিখ তিনি আকস্মিকভাবে মৃত্যুবরণ করেন।
মাওলানা শাহাদাত নদভী ছিলেন অত্যন্ত প্রতিভাবান, যুগসচেতন, একাধিক ভাষায় দক্ষতা অর্জনকারী একজন ইসলামী চিন্তাবিদ। কয়েকটি মসজিদে তিনি একজন জনপ্রিয় খতিব হিসেবে কাজ করেছিলেন।
বাংলা ও আরবি পত্রপত্রিকায় তিনি লেখালেখি করেছেন। এর মধ্যে মাসিক মদীনা ও নদওয়া থেকে প্রকাশিত আর রায়েদ অন্যতম। এশিয়ান ইউনিভার্সিটিতে তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ লেকচারার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এর পাশাপাশি ঢাকার বিভিন্ন মাদ্রাসায় ক্লাস নিতেন।
মাওলানা ইউসুফ নূর বলেন, নাদওয়াতুল উলামা যখন পড়তে যাই, তখন মাওলানা শাহাদাত হোসেন নদভী সাহেবের সহযোগিতা ছিল মনে রাখার মত। শুধু আমি নই, যে কোন মানুষের বিপদে বা কেউ সহযোগিতার জন্য আহবান করলে তিনি আপন নাকি পর নিজ দলের না অন্যদলের তা না ভেবে ঝাঁপিয়ে পরতেন তার ক্ষুদ্র সামর্থ্য নিয়ে। কারো জন্য কোথাও সুপারিশ করতে হলে তিনি নিজের ব্যক্তিত্বের কথা চিন্তা করতেন না।২০১৯ সালে কাতার সফর করার সময় আল নূর কালচারাল সেন্টারের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তার জ্ঞানগর্ভ আলোচনা এখনো সকলের মনে দাগ কাটে।
বিপুল মুসল্লির উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এ স্মরণসভায় মাওলানা ইউসুফ নূর সকলকেই প্রবাস জীবনে ইহকালীন উন্নতির পাশাপাশি পরকালের প্রস্তুতি নেয়ার জন্য আহ্বান জানিয়ে বলেন, মৃত্যু যেকোন সময় উপস্থিত হতে পারে। অতএব এর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা দরকার। এছাড়া সমস্ত মুসলমানকে সবসময় দোয়ায় স্মরণ রাখা উচিত।
অনুষ্ঠানে মাওলানা শাহাদাত হোসেনের সাথে সাথে হজ ও দীর্ঘ সহচর্যের স্মৃতিচারণ করে প্রখ্যাত ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা জনাব মোহাম্মদ আলী বলেন, আমি অনেক আলেমের সাথে মিশেছি।কিন্ত উনার মত উদার খোদাভীরু ও পরিচ্ছন্ন লেনদেনের আলেম কমই পেয়েছি ।