বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আহমেদ মোত্তাকি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার শাহবাজপুরের মিয়াবাড়িতে বেড়ে ওঠা আহমেদ মোত্তাকী তরুণ বয়সে পারিবারিক সূত্রে পাড়ি জমান মালদ্বীপে। প্রথমে তার প্রবাস জীবন শুরু হয় মালদ্বীপের আমিনিয়া স্কুলের ব্যবসায়িক সাবজেক্টের প্রধান হিসেবে।
১৯৯৪-২০১০ সাল পর্যন্ত সরকারি স্কুলে শিক্ষকতা করলেও নিজের মধ্যে একটি অস্থিরতা কাজ করতো সবসময়। কারণ শিক্ষকতার পাশাপাশি সময় থেকেই নিজে কিছু করতে চাইতেন। তিনি জানতেন সফলতার জন্য প্রয়োজন দৃঢ় মনোবল এবং কঠোর পরিশ্রম। আর এসবের মাধ্যমেই একজন মানুষ হয়ে ওঠে সেরাদের সেরা। তিনি একজন মালদ্বীপ-বাংলাদেশি উদ্যোক্তা।
গত ৩০টি বছর ধরে অবস্থান করছেন মালদ্বীপে। তিনি একজন সফল ব্যবসায়ী। ২০০৬ সালে মালদ্বীপে নিজ মালিকানায় প্রতিষ্ঠা করেন মিয়াঞ্জ ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপ। তার বাংলাদেশ থেকে আমদানিকৃত উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কোম্পানি মিয়াঞ্জ ফুডস, স্কয়ার, বেঙ্গল মিট, এসিআই এবং আকিজ বেভারেজের (স্পিড কার্বনেটেড ড্রিংক) একমাত্র পরিবেশক ছিলেন মিট স্টিট রেস্টুরেন্ট মিয়াঞ্জ ইনভেস্টমেন্ট প্রাইভেট লিমিটেডের অধীনে।
শুরুর দিকে খুব একটা ভালো করে উঠতে না পারলেও সেই সময় অনেকটা ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন তিনি।
২০০৬ সলের শেষের দিকে এমআই কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন, তার বছর খানেক বাদে ঘুরে দাঁড়ায় তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি আহমেদ মোত্তাকিকে।
বর্তমানে মালদ্বীপের বিভিন্ন দ্বীপে তার এমআই কলেজের ১৭টি শাখা রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১০ মে মালদ্বীপের ঐতিহাসিক আড্ডু শহরে বাংলাদেশী শিক্ষা উদ্যোক্তা আহমেদ মুত্তাকির উদ্যোগে এমআই কলেজের স্কুল অব এগ্রিকালচারের শুভ উদ্বোধন করা হয়েছে।
এ আন্তর্জাতিক কলেজের কৃষি ফ্যাকাল্টি হিসেবে আড্ডু শহরে এমআই কলেজ স্কুল অফ এগ্রিকালচার আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করেন|
মালদ্বীপে কৃষি শিক্ষা প্রবর্তনের ক্ষেত্রে সরকারি বেসরকারি পর্যায়ে এটায় সর্বপ্রথম উদ্যোগ।এ উদ্যোগে প্রাথমিকভাবে সার্টিফিকেট ইন লেবেল থ্রি গার্ডেন কোর্সটি শুরু করা হয়েছে এবং পরবর্তীতে অন্যান্য কৃষি বিষয় কোর্স সহ কৃষিতে স্নাতক কোর্স শুরু করা হবে বলে জানান আহমেদ মোত্তাকি। তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট কোর্সটি পরিচালনা ও সার্বিক কর্যক্রম তদারকির জন্য সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বাংলাদেশ থেকে সম্প্রতি অবসরপ্রাপ্ত দুইজন কর্মকর্তা ড. মাহমুদ মিরদাহ এবং ড. মো. খালেদ কামাল ইতোমধ্যেই আড্ডু কেম্পাস কার্যক্রমে যোগ দিয়েছেন।
এমআই কলেজের স্কুল অফ এগ্রিকালচারের শুভ উদ্বোধনে আড্ডু শহরের সাবেক মেয়র ও পরিকল্পনা এবং হাউজিং মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী আব্দুল্লাহ সাদিক উপস্থিত ছিলেন।
তিনি এ ধরনের উদ্যোগকে স্বাগতম জানান এবং এর সফলতা কামনা করে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। উদ্বোধনের পর আমন্ত্রিত অতিথিরা এর বিভিন্ন স্থাপনা, ল্যাবরেটরি, সংগৃহীত জার্মপ্লাজম ও ব্যবহারিক সুবিধাদি পরিদর্শন করে সন্তুটি প্রকাশ করেন।
উল্লেখ্য, গত কয়েক বছরে মালদ্বীপসহ বিভিন্ন দেশে মিয়াঞ্জ ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপ পরিচালনায় অর্জন করেছেন বেশ কয়েকটি পুরস্কার। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য গত বছরের (১৬ নভেম্বর) ক্রসরোড রিসোর্টে মালদ্বীপের তালিকাভুক্ত শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ১০০ জনের মধ্যে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার পেয়েছেন মালদ্বীপের সরকার থেকে ।
এই সফল ব্যক্তির মাতৃভূমি বাংলাদেশকে নিয়েও আছে অনেক পরিকল্পনা। আগামীতে বাংলাদেশেও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান প্রসার করবেন বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি।
সাফল্যের প্রশ্নে তিনি বলেন, সফলতা সব কিছুতেই পেয়েছি; যা চেয়েছি তার চেয়ে বেশিই পেয়েছি।আমার প্রতিষ্ঠানে প্রবাসী বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থান তৈরি করতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। ভবিষ্যতে নিজের ব্যবসার সম্প্রসারণের মাধ্যমে আরও অনেক প্রবাসী বাংলাদেশীদের কর্মসংস্থান তৈরি করতে চাই।
তিনি আরও বলেন, স্বপ্ন দেখুন, সাহস করুন, শুরু করুন এবং লেগে থাকুন সাফল্য আসবেই- ইকবাল বাহার স্যারের এই কথাটি যদি কেউ মেনে চলেন আমার বিশ্বাস অবশ্যই আপনিও একদিন উদ্যোক্তা হবেন।
ছোটবেলা থেকেই আমার ইচ্ছে ছিল সফল ব্যবসায়ী হবো। বর্তমানে মালদ্বীপসহ বিভিন্ন দেশে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছি। আর এসব কিছু সম্ভব হয়েছে আমার সহধর্মিণী মিসেস জিয়াদার সাপোর্টের কারণে।