বাংলাদেশে কুরআন ও ধর্মীয় শিক্ষা যথেষ্ট অগ্রগামী মন্তব্য করে এর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলান। এ বিষয়ে সৌদি সরকারের সবধরনের সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে সৌদি দূতাবাসের রিলিজিয়াস অ্যাটাসি অফিস কর্তৃক আয়োজিত হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সৌদি রাষ্ট্রদূত এ মন্তব্য করেন।
আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের কৃতিত্বের প্রশংসা করে সৌদি রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের ক্ষুদে হাফেজরা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতাতেও সবসময় ভালো অবস্থান করছে। গত বছর সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক হিফজ প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের সালেহ আহমাদ তাকরীম তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত প্রতিযোগীতাতেও বাংলাদেশের দুইজন ক্ষুদে হাফেজ পুরস্কার পেয়েছে। বাংলাদেশে কুরআনকেন্দ্রিক পড়াশোনার অবস্থান অনেক ভালো। এ দেশে প্রচুর হাফেজ, কারি ও আলেম রয়েছেন যা বিশ্বের অন্যান্য দেশে সাধারণত পাওয়া যায় না।
পবিত্র কুরআনের প্রচার প্রসারে সৌদি সরকারের অবদানের কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ বলেন, সৌদি সরকার সারাবিশ্বে পবিত্র কুরআনের প্রচার প্রসারে বিভিন্ন কার্যক্রম করে থাকে। সে ধারাবাহিকতায় গত বছর শুধু বাংলাদেশেই ১০ লাখ কুরআনের কপি বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া হিফজ প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এখন অনন্য উচতায় রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও মানবিক সম্পর্কের দৃঢ় ভিত্তির ওপর ভিত্তি করে সৌদি-বাংলাদেশের মধ্যে গভীর ও দারুণ সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশ সৌদি আরবকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়, যা বাংলাদেশের জীবনযাত্রার মান ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রেখেছে। বাংলাদেশে সৌদি আরবের অনেক বিনিয়োগ রয়েছে। বাংলাদেশিদেরও সৌদি আরবে বিনিয়োগ করার সুযোগ রয়েছে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- সৌদি দূতাবাসের কর্মকর্তা সাদওয়াদ সায়াদ, প্রতিযোগিতার বিচারক হুফফাজুল কুরআন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শাইখ আব্দুল হক, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মিজানুর রহমান, সৌদি দূতাবাসের রিলিজিয়াস অ্যাটাসি অফিসের জনসংযোগ কর্মকর্তা ড. এমদাদুল হক খান, মাসউদুর রহমান, আবদুস সোবহান আজহারী প্রমুখ।
জানা যায়, রাজকীয় সৌদি দূতাবাসের রিলিজিয়াস অ্যাটাসি অফিস আয়োজিত হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতা গত দুমাস ধরে চলে আসছে। প্রথমে বিভিন্ন জেলা ও অঞ্চলে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর বিভাগীয় পর্যায়ে এবং সর্বশেষ সোমবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ঢাকায় চুড়ান্ত প্রতিযোগিতা শেষে ১৫ পারা ও ৩০ পারা বিভাগে ৫ জন করে মোট ১০ জনকে পুরস্কৃত করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি সৌদি রাষ্ট্রদূত বিজয়ীদের হাতে ক্রেস্ট, সনদপত্র ও সম্মানী হিসেবে নগদ টাকা তুলে দেন।
অনুষ্ঠানে ১৫ পারা ও ৩০ পারা দুই গ্রুপে মোট ১০ শিক্ষার্থীকে পুরস্কার দেওয়া হয়। প্রতিযোগিতায় ১৫ পারা গ্রুপে তানযিমুল উম্মাহ হিফজ মাদ্রাসার মো. শুয়াইব হাসান প্রথম, মৌলভীবাজারের মারকাজু তালিমুল কুরআন মাদ্রাসার আবদুল্লাহ তাইয়্যিব দ্বিতীয় ও সিলেটের জামিয়া ইসলামিয়া ফরিদাবাদের আবদুর রহমান জামী তৃতীয় হয়েছে।
এছাড়া উত্তর যাত্রাবাড়ী তাহফিজুল কুরআন ওয়াস সুন্নাহ মাদ্রাসার হুযায়ফা চতুর্থ ও নেত্রকোনার জামালুল কুরআন মাদ্রাসার আনাস মাহফুজ পঞ্চম হয়েছে।
৩০ পারা গ্রুপে রাজধানীর দক্ষিণখানের আন নূর মাদ্রাসার আবদুল্লাহ বিন নূর প্রথম, মিরপুরের মারকাযুত তানজিল মাদ্রাসার আনাস প্রধান দ্বিতীয় ও মারকাজু ফয়জিল কুরআনের শাহরিয়ার শাহরিয়ার তৃতীয় হয়েছে। এছাড়া একই মাদ্রাসার নুমান চতুর্থ ও নেত্রকোনার জামালুল কুরআন মাদ্রাসার মুস্তাকিম বিল্লাহ পঞ্চম হয়েছে।