মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনে চার বাংলাদেশি আমেরিকানের অন্তর্ভূক্তিতে দেশে-বিদেশে উচ্ছ্বসিত বাংলাদেশিরা।
মার্কিন মূলধারায় জাইন সিদ্দিকী, ফারাহ আহমেদ, কাজী সাবিল রহমান ও রুমানা আহমেদের অন্তর্ভূক্তি বাংলাদেশি আমেরিকান তরুণ প্রজন্মের নবযাত্রা হিসেবে দেখছেন সবাই।
প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রশাসনে এ চার বাংলাদেশি যায়গা করে নেয়ায় যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত সকল বাংলাদেশি আমেরিকান আনন্দিত ও গর্বিত।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের হোয়াইট হাউজ প্রশাসনে হোয়াইট হাউজের ডেপুটি চিফ অব স্টাফের সিনিয়র অ্যাডভাইজার বাংলাদেশি আমেরিকান হিসেবে নিয়োগ পান জাইন সিদ্দিক হয়েছেন। তিনি প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি ও ইয়েল ল স্কুল থেকে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন।
নিউ ইয়র্কে বেড়ে ওঠা জেইনের কর্মজীবন শুরু হয়েছে ইউএস সুপ্রিম কোর্টের জজ ইলেনা ক্যাগন ও ইউএস কোর্ট অব আপিলের জজ ডেভিড ট্যাটেলের সাথে কাজের মধ্য দিয়ে। জেইন খ্যাতনামা ল ফার্ম ওরিক হেরিংটন অ্যান্ড সাটসলিফ এলএলপির সহযোগী হিসেবেও কাজ করেছেন। বাইডেন-কমলা ট্র্যানজিশন টিমে ডমেস্টিক অ্যান্ড ইকোনমিক বিভাগের চিফ অব স্টাফ হিসেবে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায়ই এ নিয়োগ পেলেন জেইন। তার বাবা ডা: মামুন ও মা ডা: হেলেন দু’জনই নিউ ইয়র্কে কর্মরত। জেইনের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইলে।
এরপর বাইডেনের প্রশাসনে যুক্ত হন আরেক বাংলাদেশি আমেরিকান ফারাহ আহমেদ। গত ২১ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন পল্লী উন্নয়ন সচিবালয়ের আন্ডার সেক্রেটারির চিফ অব স্টাফ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন তিনি।
নরসিংদীর মেয়ে ফারাহ আহমেদ কর্নেল ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যাচেলর এবং নিউজার্সির প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স করেছেন। তিনি ইউএসডিএতেও কাজ করেছেন। তার বাবা ড. মাতলুব আহমেদ ও মা ড. ফেরদৌস আহমেদ। তারা দু’জনেই যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর হিসেবে কর্মরত আছেন। ফারাহ আহমেদের নানা ড. আব্দুল বাতেন খান বাংলাদেশ পারমাণবিক শক্তি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন। এ ছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুল মঈন খান ফারাহর মামা।
গত ২৫ জানুয়ারি জানা যায় বাইডেন প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি পদে নিয়োগ পেয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান কাজী সাবিল রহমান।
হোয়াইট হাউসে এক্সিকিউটিভ অফিসের ম্যানেজমেন্ট এন্ড বাজেট ডিভিশনে ইনফরমেশন এন্ড রেগুলেটরি এফেয়ার্সের সিনিয়র কাউন্সেলর হয়েছেন ৩৮ বছর বয়সী কাজী সাবিল আহমদ। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জন্মগ্রহণকারী সাবিল আহমদ ব্রুকলিন ল স্কুলের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ছাড়াও ‘ডেমজ’ নামক একটি থিংক ট্যাংকের প্রেসিডেন্ট।
আরেক বাংলাদেশী-আমেরিকান রোমানা আহমেদ বাইডেনের ইউএস এজেন্সি ফর গ্লোবাল ইনফরমেশনের রিভিউ প্যানেলের সদস্য পদে যোগদান করেছেন।
রোমানা বাইডেনের ট্রানজিশন টিমের আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম দলে কাজ করেছেন। রোমানা সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময়ে হোয়াইট হাউজে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসন শপথ নেয়ার আট দিনের মাথায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মুসলিম নিষিদ্ধকরণের প্রতিবাদে হোয়াইট হাউজে তার পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন রোমানা। রুমানা হিজাব পরায় ট্রাম্পের লোকজনের কাছে প্রায়ই অপদস্ত হতেন। তাকে কেউই স্বাভাবিকভাবে নিতে পারত না।
২০১৭ সালে পদত্যাগের নেপথ্য এই কারণগুলো জানিয়ে দ্য আটলান্টিকে একটি কলাম লেখেন রুমানা। ওই লেখা প্রকাশিত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়।
১৯৭৮ সালে বাবা-মার সাথে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান রোমানা। তার মা নিজের একটি ডে কেয়ার সেন্টার পরিচালনা করেন। বাবা ব্যাংক অব আমেরিকায় কর্মরত অবস্থায় ১৯৯৫ সালে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান। রোমানা জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি থেকে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। তিনি মায়ের সাথে ওয়াশিংটনের অদূরে ম্যারিল্যান্ডে বসবাস করছেন।
রুমানা ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর গ্লোবাল মিডিয়ার (ইউএসএজিম) রিভিউ প্যানেলের সাত সদস্যের অংশ হয়ে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছেন।