নিউইয়র্কে একটি পাবলিক স্কুলের বাসের ধাক্কায় প্রাণ হারিয়েছেন এক বাংলাদেশি।
নিউইয়র্ক পুলিশ জানিয়েছে বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় বিকেল সোয়া ৫টার দিকে কুইন্স বুলোভার্ড এবং জ্যাকসন এভিনিউ ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনার পড়েন ৪৩ বছর বয়সী জুয়েল রানা, যিনি একটি দোকানে কাজ করার পাশাপাশি ডেলিভারি ম্যানের কাজ করতেন।
নিউইয়র্ক পুলিশ বলছে, রানা তার নিজের ভুলে দুর্ঘটনায় পড়েন। তবে ঘনিষ্ঠজনরা এ ঘটনার তদন্ত চান, তারা মামলা করারও উদ্যোগ নিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘মুন্সিগঞ্জ-বিক্রমপুর’ সমিতির সাবেক সভাপতি মো. শাহাদৎ হোসেন জানিয়েছেন, রানার বাড়ি মুন্সিগঞ্জ জেলা সদরের বাংলা বাজার এলাকার। তার বাবার নাম জজ মিয়া।
স্ত্রী, দুই ছেলে-মেয়ে এবং বাবা-মা-ভাইবোনদের দেশে রেখে সাত মাস আগে যুক্তরাষ্ট্রের এসেছিলেন রানা। দালালের মাধ্যমে আসতে তার ১৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছিল। দেশে ঢাকার গুলিস্তান এলাকার একটি মোবাইল মেরামত-দোকানে মেকানিকের কাজ করতেন রানা।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে নিউইয়র্ক পুলিশ বলছে, পণ্য ডেলিভারি দেওয়ার জন্য রানা ‘লং আইল্যান্ড সিটির জ্যাকসন এভিনিউ’ ধরে ইলেক্ট্রিক স্কুটার চালিয়ে যাচ্ছিলেন। সে সময় ইন্টারসেকশনে কুইন্স বুলেভার্ডগামী স্কুলবাসটি তার স্কুটারকে ধাক্কা দিলে রাস্তায় ছিটকে পড়েন রানা। তার স্কুটারটি বাসের চাকার নিচে পিষে যায়।
দুর্ঘটনার পরপরই অ্যাম্বুলেন্সে করে রানাকে নিউইয়র্ক-প্রেসবাইটেরিয়েনওয়েল কর্নেল মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া হলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, দুর্ঘটনাস্থলের আশেপাশের সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে দেখা যায়, স্কুল বাসটি ‘গ্রিন লাইট’ পার হচ্ছিল, আর রানা ছিলেন ‘রেড লাইটে’। রানা নিজের দোষে দুর্ঘটনায় পড়েছেন।
স্কুলবাসটির চালক ওই সময়ে নেশাগ্রস্ত ছিলেন কি না, তা পরীক্ষা করেছে নিউইয়র্ক পুলিশ, তবে সেই পরীক্ষার ফলাফল এখনও জানানো হয়নি।
এলাকার সিটি কাউন্সিলম্যান জুলি ওউন এই দুর্ঘটনাকে ‘কাণ্ডজ্ঞানহীন’ মৃত্যু হিসেবে বর্ণনা করে বৃহস্প্রতিবার টুইট করেছেন।
তিনি লিখেছেন, “যথাযথ পদক্ষেপ নিলে এই মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হত।“
সব ধরনের বাহনের ‘নিরাপদ’ চলাচলের পদক্ষেপ নিতে জুরি ওউন ট্র্যান্সপোর্টেশন ডিপার্টমেন্টের প্রতি আহবান রেখেছেন।
তিনি বলেছেন, পথচারী, সাইকেল চালক, স্কুটার চালক, মোটর সাইকেল চালকসহ সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব ট্র্যান্সপোর্টেশন ডিপার্টমেন্টের।
ময়না তদন্তের পর রানার লাশ দেশে তার স্বজনের কাছে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন শাহাদৎ। সেই প্রস্তুতিতে অর্থ সহায়তা চেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রস্থ মুন্সিগঞ্জ-বিক্রমপুর সমিতির সভাপতি মির্জা মনিরুজ্জামান শামীম ও সেক্রেটারি মিজানুর রহমান মিন্টু।
নিউইয়র্কে গত ৭ বছরে কমপক্ষে ৮ বাংলাদেশি ডেলিভারিম্যানের প্রাণ গেছে গাড়ির ধাক্কায় কিংবা দুর্বৃত্তের হাতে। যাদের প্রত্যেকে দালাল ধরে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন দেশ ঘুরে মেক্সিকো হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন।
নিউইয়র্ক সিটির সড়ক দুর্ঘটনা নিবন্ধনকারী সংস্থা ‘ক্র্যাশম্যাপার’ জানিয়েছে, গত তিন বছরে কুইন্সের ওই ইন্টারসেকশনে ১০৩টি গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়েছে। তাতে ১০ সাইকেল চালকসহ আহত হয়েছেন ৪৭ জন। তাদের মধ্যে পথচারী ৪ জন আর গাড়ির যাত্রী ৩৩ জন।
এছাড়া ‘ডিপার্টমেন্ট অব ট্র্যান্সপোর্টেশন’ জানিয়েছে, চলতি বছরের সাড়ে তিন মাসে সিটিতে সড়ক দুর্ঘটনায় ১১ জন সাইকেল চালক নিহত হয়েছেন। যেখানে গত বছরের এই সময়ের মধ্যে নিহতের সংখ্যা ছিল দুইজন।