বিধর্মীদের কাছে নবী সা. এর আদর্শ তুলে ধরা একটি দাওয়াত

মাওলানা মুহাম্মদ কালিম সিদ্দিকী

অনুবাদ: আবদুল্লাহ তামিম

বিশ্বজগতের স্রষ্টা মহান আল্লাহ এই পৃথিবীতে আসার আগে অজান্তেই মানুষকে তার মায়ের স্তন থেকে দুধের ব্যবস্থা করে দেন। আকাশ ও জমিনের সমস্ত প্রাণীকে মানুষের সেবা করতে আদেশ দিয়ে মানুষকে এই বিশ্বের বর বানিয়ে দিয়েছেন। তিনি ঘোষণা করেন- আকাশে ও পৃথিবীতে যা আছে, এগুলি সবই তোমাদের অনুগত (আল-জাসিয়া: ১৩)

তিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে যা কিছু রয়েছে তা তোমাদের অধীন করেছেন। তোমরা হলে পৃথিবীর বর। আর তোমাদের জন্যই এই পুরো মঞ্চটি সজ্জিত করেছেন তিনি। যার স্বভাব ও প্রয়োজনটি তার স্রষ্টার চেয়ে বেশি আর কেই বা জানতে পারে? কুরআনে তিনি বলেন- তিনি কি জানেন না? যিনি তাকে সৃষ্টি করেছেন? তিনি তো সূক্ষ্ম বিষয়েও জ্ঞান রাখেন। (সূরা মুলক: ১৪)

মানুষদের স্রষ্টা মানুষকে সৃষ্টিই করেছেন এভাবে, যদি সে তার জন্য বানানো নেয়ামত ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতি না জানে, এটি থেকে উপকৃত হওয়া কখনই সম্ভব নয়। যদি সে এর ব্যবহার পদ্ধতি না জানে, তবে এ নেয়ামত তার ধ্বংসেরও কারণে হতে পারে। তার মৃত্যুরও কারণ হতে পারে। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সামাজিক প্রাণী হিসাবে তৈরি করেছেন।

মানুষের জীবনকে নানান ধরণের সামাজিক রীতি-নীতি ও চাল চলনের ধরণ দিয়েছেন। অথচ আজ মানুষ ব্যক্তি ও সামাজিক জীবনে কে কার থেকে বেশি আরাম আয়েশ আর আল্লাহর নেয়ামত ভোগ করতে পারে এর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। এ নশ্বর পৃথিবীর মায়ায় জড়িয়ে মানুষ আল্লাহ তায়ালার বিধি-বিধান পালনে শৈথল্য প্রদর্শন করে।

কীভাবে নিজের ব্যক্তি ও সামাজিক জীবন উজ্জ্বল করে তোলা যায়, অস্থায়ী এ বিশ্বে স্বাচ্ছন্দ্য, সুখ, সম্মান নিয়ে মৃত্যুর পর অনন্ত অসীম কালের দিকে যাত্রা করা যায়, সে চিন্তাই প্রতিটি মানুষের করা উচিৎ। কারণ এ পৃথিবী তৈরিই করা হয়েছে অনন্তকালীন পরকালের ক্ষেত সরূপ। আল্লাহ তায়ালা প্রেরণ করেছেন যেনো সামনের জীবনে জাহান্নামের আযাব থেকে মুক্তি পেতে এ দুনিয়ায় আসবাব জমা করতে পারে। আর সেইজন্যই আল্লাহ তায়ালা প্রথম দিন থেকেই আদম আ. কে আসমানি গ্রন্থ দিয়ে গাইডলাইন দিয়েছেন।

এরপরের নবীগণকেও আসমানি কিতাব দিয়েছেন, সর্ব শেষ পরিপূর্ণ আপডেট আসামনি কিতাব কুরআন নাজিল করেছেন শেষ নবি মুহাম্মদ আরাবি সা. এর উপর। একজন মানুষকে সঠিকভাবে কোনো কিছু শেখাতে হলে শুধু কিতাবের মাধ্যমে শিক্ষা দিলেই হয় না। তাই আল্লাহ তায়ালা রাসুল সা. কে প্রেরণ করেছেন। যেমন কোনো ব্যক্তি যদি সিলেবাসের মাধ্যমে ড্রাইভিং এ পিএইচডি করে। এরপর অবশ্যই তাকে গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে বাস্তবিক চালানো শিখতে হবে। তা না হলে সে গাড়ি চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটাবে।

তাই তাকে অবশ্যই স্টিয়ারিং হুইলে বসে বাস্তব চালনোর অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে। অনুশীলন না করলে কেউ ড্রাইভার হতে পারে না। এ নীতির উপর ভিত্তি করে আল্লাহ তায়ালাও শুধু আসমানি কিতাব প্রেরণ করেই ক্ষ্যান্ত হননি, বরং সে কিতাব অনুযায়ী মানব জাতিকে পরিচালনার জন্য প্রথম দিন থেকেই ড্রাইভার প্রেরণ করেছেন। সে হিসেবে প্রথম নবি হজরত আদম আ. কে নবি করে প্রেরণ করেছিলেন। এরপর একের পর এক, প্রতিটি যুগে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আসমানি গ্রন্থের সঙ্গে সঙ্গে নবি ও রাসুল প্রেরণ করেছেন।

প্রতিটি এলাকা বা প্রতিটি যুগে আল্লাহ তায়ালা নবি ও রাসুল প্রেরণ করেছেন। তাদের সংখ্যা কম করে হলেও প্রায় চার লক্ষের মত। তারা মানুষকে আল্লাহর পথে পরিচালনা করতে ও আল্লাহর নেয়ামতকে যথাযথ ব্যবহার করতে শিখিয়েছিলেন। লোকেরা কীভাবে জীবন যাপন করবেন সব নবি ও রাসুলরা শিখিয়েছেন। মানুষের স্বভাব হলো মানুষ যখনই বড় হতে থাকে তার মধ্যে তার চরিত্রে পরিবর্তন হতে থাকে। তার চহিদার পরিবর্তন হতে থাকে। বয়স ও সচেতনতার বিকাশের সাথে পরিবর্তিত হয়।

একটি শিশু যখন কৌশরে উপনিত হয় তখন তার জীবনযাপনের নিয়ম তার খাবারও পরিবর্তন আসে। মানুষ বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার শক্তি সামর্থও বৃদ্ধি পেতে থাকে। ঠিক তেমনই মানুষ বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শরিয়তের বিধি-নিষেধও তার উপর আবর্তিত হয়। নবি কারিম সা. এর আগে যত নবি রাসুল এসেছেন সবাই বিভিন্ন গোত্র বা দেশ সমাজ গ্রাম বা অঞ্চলের জন্য এসেছেন। কিন্তু শেষ নবি মুহাম্মদ সা. কে শরিয়তের পূর্ণতা দিয়ে প্রেরণ করা হয়েছে।

কুরআনে এ বিষয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ঘোষণা করেন, আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম। অতএব যে ব্যাক্তি তীব্র ক্ষুধায় কাতর হয়ে পড়ে; কিন্তু কোন গোনাহর প্রতি প্রবণতা না থাকে, তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা ক্ষমাশীল আপনাকে ইসলাম ধর্ম দিয়ে সন্তুষ্ট করব (সুরা মায়েদা: ৩)

নবি কারিম সা. এর মাধ্যমে নবুওয়াতের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি শেষ নবি তার পর আর কোনো নবি আসবে না। ইসলাম ধর্মকে সমস্ত মানবতার সৌন্দর্যের প্রতিক নির্ধারণ করা হয়েছে। আর নবি কারিম সা. এর গোটা জীবনকে মানবজাতির জন্য উত্তম চরিত্র ঘোষণা করে আল্লাহ তায়ালা বলেন, আল্লাহর কাছে মনোনিত ধর্ম একমাত্র ইসলাম। (সুরা আলে ইমরান-১৯) অন্য আয়াতে ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন ধর্মের সন্ধান করে সে কখনই তার কাছ থেকে গৃহীত হবে না। (আলে ইমরান-৮৫) আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্যে রসূলুল্লাহর মধ্যে উত্তম নমুনা রয়েছে। (সুরা আহযাব ২১)।

প্রত্যেক রাসূল তার সম্প্রদায় ও তার উম্মতদের বলেছিলেন, তারা তাদের সৃষ্টির পূর্বে রুহের থেকে শপথ নেয়া হয়েছিলো সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর উপর ইমান আনবে নবিগণ কে অনুসরণ করবে। আল্লাহ তায়ালা জীবন-নীতি ও ধর্ম প্রেরণ করেছেন। শেষ নবি মুহাম্মদ সা. এর মাধ্যমে দীনের চূড়ান্ত রূপ দান করেছেন। ইতিপূর্বে পৃথিবীতে আগত সব নবি ও রাসুলকে আদেশ করেছেন, তোমরা যদি শেষ জমানার নবি শেষ নবি মুহাম্মদ সা. কে পাও তাহলে তার অনুসরণ ছাড়া মুক্তি মিলবে না। শুধু তাই নয়, কুরআনের আগে আল্লাহ তায়ালার প্রেরণ করা সব আসামানি গ্রন্থে নবি কারিম সা. সম্পর্কে আলোচনা রয়েছে। তার আগমনের কথা রয়েছে। তাকে অনুসরণের আদেশ দেয়া হয়েছে।

মহাবিশ্বের সার্বভৌম পালনকর্তা, আকাশ ও পৃথিবীর প্রভু তার জ্ঞান ও প্রজ্ঞায় কুরআনকে বিচারের দিন পর্যন্ত রক্ষা করার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি কুরআনে ঘোষণা করেন, আমিই কুরআন অবতির্ণ করেছি, আমিই তাকে রক্ষা করবো। (আল-হিজর ৯)

পবিত্র কোরআনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন ও তার নবুওয়াত সম্পর্কে এক বিস্ময়কর পদ্ধতির কথাও বলে। কুরআন নাজিলের পাশাপাশি আল্লাহ তায়ালা মানুষের জন্য জীবন্ত আরেক কিতাব প্রেরণ করেছেন। আর তাই রাসুল সা.। আল্লাহ তায়ালা চৌদ্দশ শত বছর পূর্বে শেষ নবি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বরকতময় জীবন ও সুন্নাহকে খুব ঘনিষ্ঠভাবে মানুষের কাছে উপস্থাপন করেছেন। সর্বাধিক খাঁটি রেফারেন্সসহ কুরআনকে রাসুল সা. এর জীবনের মাধ্যমে সংরক্ষণ করেছেন।

ভিডিওগ্রাফির এ যুগে এর থেকে সুস্পষ্ট আর কিছুই হতে পারে না। অথচ আজ মিডিয়া, ভিডিওগ্রাফি, স্যাটেলাইট কিছু আছে। বিশ্বের অন্যতম সেরা শাসক, ক্রিকেটার এবং নেতাদের জীবন প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষের মাঝে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করে। তারপরও আমাদের কাছে চৌদ্দশত বছর আগের রাসুল সা. এর আদর্শ আর চরিত্র আয়নার মত পরিস্কার হয়ে আছে। উজ্জ্বল হয়ে আছে। সাহাবীগণ যারা ছাগল চড়াতেন তারাও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবনী ও আদর্শকে প্রতিটা ক্ষেত্রে রক্ষা করেছেন। শেষ পর্যন্ত এ আদর্শ নীতি আামদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনের প্রতিটি অংশ আমাদের সামনে প্রামাণ্য জীবনী ও হাদীসের মাধ্যমে সংরক্ষিত রয়েছে। এগুলো জীবন্ত মানুষের মত আমাদের সামনে স্পষ্টভাবে অনুভূত হয়।

আমাদের ধর্ম ইসলাম ও তার নবি আমাদের নখ কাটার বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছে। খাওয়ার পরে আঙ্গুলগুলি কী করবে কীভাবে খাবে সেটাও। ঘুমানোর স্টাইলটা কী হবে। জীবনের প্রতিটি অংশই আমাদের সামনে স্পষ্ট করে গেছেন আমাদের নবি।

১৯৯৮ সালে যুক্তরাজ্যের একজন খৃস্টান ইতিহাসবিদ ও গবেষক, যিনি ইসলাম ও ইসলামের নবি, সাহাবাদের নিয়ে পিএইচডি করেছেন। তার নাম ইসহাক মুসা। তিনি একটি গ্রন্থ লেখা শুরু করেছিলেন Folllowers Hyposichy of Mohammad’s নামে। কিন্তু গবেষণার সময় সে তার বইয়ের নাম পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়। পরবর্তিতে তিনি বইটির না দেন Historical Miracle in life biography of muhammad and his followers এই গবেষণা নিবন্ধটি যুক্তরাজ্যের সংবাদপত্রগুলিতে ছাপা হয়েছিলো। এ নিবন্ধ ছাপা হওয়ার পরপরই বিশ্বব্যাপী আলোরণ সৃষ্টি হয়েছিলো। পরবর্তিতে কিছুদিন পরই তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন।

১৯৬২ সালে ড. ইসহাক মুসা ভূমিকায় একটি নিবন্ধের কথা উল্লেখ করেন। বেনজমিন জ্যাকব তার গবেষণার সময়ও ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। ড. রাইক মোই লিখেছেন ড. বেনজামিন এ নিবন্ধ নিয়ে পুরো ফিল্ম জগতকে নাড়িয়ে দিয়েছিলেন। সেই চৌদ্দশত বছর আগে যারা তাদের বেদুইন আমলে উট এবং ছাগল চড়াচ্ছিল তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবা হয়ে পরবর্তিতে তারাই দুনিয়ার মানুষের আইডল হয়েছিলেন।

তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনকে এত কাছ থেকে দেখেছিলেন, যাচাই বাছাই করে অত্যন্ত যত্ন সহকারে সঠিক রেফারেন্সসহ তা সংরক্ষণ করার পরে পরবর্তী প্রজন্মকে জানিয়েছিলেন। ড. মুসা যখন ড. বেঞ্জামিনের গবেষণা নিবন্ধনটি পড়েন, তিনি জানান যে তাতে কিছুটা ভিন্নতা আছে। তিনি সাহাবাদের বিভিন্ন বিষয়ের খুঁটিনাটি বিষয়ে গবেষণা করে সেগুলোও তার নিবন্ধে যুক্ত করেন।

 

তিনি বলেন, সাহাবায়ে কেরামের আলোচনা ও তাদের সঠিক বর্ণনা আমাদের এমন সুস্পষ্ট ধারণা দেয়, আমরা রাসুল সা. এর জীবনের কার্যাবলী নিয়ে একটি চার্টও ইচ্ছে করলে তৈরি করতে পারি। গারে হেরায় তিনি জিবরাইল আ. এর সঙ্গে কতক্ষণ কথা বলেছেন, জিবরাইল আ. যাওয়ার পর তিনি গুহায় কতক্ষণ অবস্থান করেছিলেন। পরে গারে হেরা গুহার কোন জায়গায় পা রেখে নীচে নেমে এসেছেন। এরপর মক্কার কোন রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। বাড়ি ফিরে কতক্ষণ চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়েছিলেন। খাদিজা রা. কে কী বললেন, তিনি উত্তরে কী বলেছেন। ওয়ারকা বিন নওফেল রাসুল সা. কে কি বললেন। এই বিষয়গুলো আমরা চাইলেই একটি চার্ট আকারে ঘড়ির টাইমের মত স্পষ্ট করে লিখতে পারি।

সর্ব শক্তিমান আল্লাহ তায়ালা যিনি রাসুল সা. কে সৃষ্টি করেছেন। আর তার জীবনকে মুসলিমদের জন্য উসওয়ায়ে হাসানা উত্তম আদর্শ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। রোল মডেল হিসেবে পৃথিবীর মানুষের জন্য তিনি প্রেরিত হয়েছেন। এজন্য তাকে সব ধরণের নিরাপত্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন দিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, তাকে শয়তান ও শত্রুদের থেকে নিরাপদ রেখেছেন। তার আদর্শ কে পরিপূর্ণ বর্ণনা করার জন্য পৃথিবীতে বহু মুহাদ্দিস আর ঐতিহাসিকও সৃষ্টি করেছেন তিনি। যেনো আল্লাহর নবির সবগুলো আদর্শকে তারা সঠিকভাবে বর্ণনা করতে পারেন। আর কিয়ামত পর্যন্ত তার আদর্শ টিকে থাকে।

কুরআন যেমন সুস্পষ্টভাবে ছড়িয়ে রয়েছে পৃথিবীতে। ঠিক তেমনি কুরআনের মতই রাসুল সা. এর আদর্শও টিকে আছে। হজরত আলি রা. বলেন ‘কুরআন এমন এক আশ্চর্য মহাগ্রন্থ, তার বিস্ময় ও আশ্চর্যকর বিষয়গুলো কখনো শেষ হবে না। একইভাবে কুরআন, ও সীরাতে রাসুলের বিস্ময় ও আশ্চর্যকর বিষয়গুলো কিছুদিন পরপর বিশ্বকে পেরেশান করে তোলে। বৈজ্ঞানিক গবেষণার শীর্ষে এই আলোচনাই রয়েছে। আশ্চর্যের বিষয় হল, রাসুলসা. এর সাহাবারা রাসুল সা. এর ছাগল ও উটের অবস্থার বর্ণনাও এতটা নিখুতভাবে করেছেন। এমনকি রাসুল সা. এর জুতা মোবারকের বিষয়েও আলোচনা রয়েছে। বর্ণনা রয়েছে। গ্রন্থ রচনা করা হয়েছে।

আমি একবার মদিনার এক সিরাত গ্রন্থাগারে উপস্থিত হয়েছিলাম। সেখানে বিশিষ্ট লেখক ড. আবদুল জব্বার রেফায়ির গ্রন্থগুলো দেখলাম। এর মধ্যে একটি গ্রন্থ ছিলো ‘মুজাম মা কুতুবু আনির রাসুলি’ নামের। এ গ্রন্থটি আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষণায় তার বিষয় ছিলো। গ্রন্থটি প্রায় ১৮ খণ্ডে ছিলো।

তিনি তার গ্রন্থে সিরাতের বিভিন্ন রেফারেন্স গ্রন্থের নাম উল্লেখ করেছেন। বইয়ের নাম, ভাষা, লেখকের নাম, কত পৃষ্ঠা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। মুদ্রিত নাকি পাণ্ডুলিপি এ বিষয়গুলোও সেখানে উল্লেখ করেছেন। আমি জানতে শেষ খণ্ডের শেষ পৃষ্ঠা দেখি। দেখলাম তার গ্রন্থের পৃষ্ঠা সংখ্যা ২৯৭৭৪। সেখানে অনেকগুলো পৃষ্ঠা জুড়ে বিভিন্ন লেখকের সিরাত বিষয়ে বহু গ্রন্থের পরিচয় উল্লেখ করেছেন। ড. আবদুল জব্বারের আলোচনায় যে বইগুলো ছিলো তার মধ্যে ৮৫ খণ্ডের একটি গ্রন্থ ছিলো।

ড. সাহেব এ গ্রন্থটিকে একটি বই হিসেবেই উল্লেখ করেছেন। এ ৮৫ খণ্ডের গ্রন্থটি রাসুল সা. এর শুধু জুতা নিয়েই লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। আর রাসুল সা. এর জুতা নিয়ে লেখা আরো ৫৫টি বইয়ের পরিচয় ড. সাহেব উল্লেখ করেছেন।

আশ্চর্যের কিছুই না। বিশ্ব জাহান সৃষ্টিকারী আল্লাহ তায়ালা যেমনটা চেয়েছেন, ঠিক তেমনই রাসুল সা. কে সাজিয়েছেন। তার আদর্শকে সাজিয়েছেন। পৃথিবীর শেষ পর্যন্ত তিনি তার আদর্শকে মানুষের জন্য উত্তম আদর্শ করতে চেয়েছেন। গোটা বিশ্বে শুধু রাসুল সা. কেই রোল মডেল হিসেবে সৃষ্টি করা হয়েছে। তাই আল্লাহ তায়ালা তার জীবনকে সবচেয়ে সুন্দর করে সাজিয়েছেন।

আর তার আদর্শকে সংরক্ষণ করেছেন উত্তমরূপে। রাসুল সা. এর আগে অনেক নবি ও রাসুলের জীবনের অনেক কিছুই সংরক্ষিত নেই। কিন্তু রাসুল সা. এর জীবনের কোনো ছোট অংশ এমন নেই যেটা সম্পর্কে উম্মত জানে না। রাসুল সা. এর সবচেয়ে নিকটতম সময়ে প্রেরিত হয়েছেন হজরত ঈসা আ.। তার জীবন নিয়ে খৃষ্টানদের মধ্যেই দ্বিমত পাওয়া যায়। কেউই সঠিক তথ্য দিতে পারে না। অথচ তাদের জাতি সবচেয়ে আপটুডেট জাতি বলে স্বীকৃত। তাদের মধ্যে হজরত ঈসা আ. এর মৃত্যু নিয়ে অনেক মত পাওয়া যায়। জানা যায়, তার জীবনের মাত্র ৩০ ভাগ বিষয় সম্পর্কে তারা অবগত আছে। বাকি বিষয়গুলো নিয়ে মতবিরোধে আছে তারা। এ জ্ঞানের স্বল্পতার কারণে তাদের ধারণা তৈরি হতে শুরু করে তিনি মরয়ম আ. এর সন্তান। যেমনটা ঐতিহাসিক বার্ট্রান্ড রিসিল ও অন্যান্য পাশ্চাত্য পণ্ডিতরা মনে করেন।

ঠিক একইভাবে হজরত মুসা আ. সম্পর্কে ইহুদিদের বড় বড় পণ্ডিতরা বলছেন, (নাউজুবিল্লাহ) মুসা আ. কাল্পনিক একজন মানুষ। এছাড়াও, মহাভারত, রামায়নের মত হিন্দু ধর্মের ধর্মীয় গ্রন্থগুলোতে উল্লেখিত নেতাদের কাল্পনিক মানব মনে করা হয়। কল্পিত চরিত্রই তাদের গ্রন্থগুলোতে উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও কেবলমাত্র আল্লাহর শেষ রাসূলের জীবিত অবস্থা ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণসহ উল্লেখ করা আছে। তার জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব কিছুই পৃথিবীর মানুষের কাছে সুস্পষ্ট।

মদিনায় বসবাসকারী একজন লেখক রাসুল সা. এর স্ত্রীগণকে নিয়েই বিশাল গ্রন্থ রচনা করেছেন। সে গ্রন্থে ঐতিহাসিকভাবে তাদের আকার, অবস্থান ও সমস্ত বিষয়ের বিশদ তথ্য সংগ্রহ করেছেন। হযরত আদম আ. থেকে শুরু করে কোটি কোটি মানুষের মধ্য থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ নবি রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবনী ও তার জীবনযাত্রা রেফারেন্সসহ সুরক্ষিত করেছেন। মহাবিশ্বের স্রষ্টা ও মালিক রাসুল সা. কে কেবলমাত্র কিয়ামত অবধি মানুষের জন্য নিখুঁত সার্বজনীন রোল মডেল ও সর্বোচ্চ উত্তম চরিত্রের অধিকারী করেছেন। মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁর জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দিয়ে তাঁকে সৌন্দর্যের মডেল ও রোল মডেল বানিয়েছেন, তাই তিনি তাকে সমস্ত মানবতার জন্য আকর্ষণীয় করে তৈরি করেছেন। তাই তো আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত সরূপ প্রেরণ করেছি।(সুরা আম্বিয়া-১০৮)।

আমার হজরত আমার মুরব্বি হজরত সাইয়্যেদ মাওলানা আলি মিয়া নদভি রহ. বলতেন, মহান আল্লাহর সৃষ্টির রহস্য অসাধারণ। তিনি কোটি কোটি মানুষ সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু তাদের স্বভাব তাদের আচরণ তাদের কাজ সবকিছু একজন থেকে অন্য জনের আলাদা করে সৃষ্টি করেছেন। আমাদের দেশে কালো রঙ কে অসুন্দর রং মনে করা হয়। আর আফ্রিকার মত দেশে কুচকুচে কালো রঙকে অনেক সুন্দর রঙ বলে মনে করা হয়। কারো কাছে মিষ্টি পছন্দ, কেউ আবার মিষ্টি পছন্দ করেন না। কেউ কাউকে পছন্দ করে না।

আবার তার জন্য অন্য আরেকজন মানুষ পাগল। একইভাবে, মানুষের অভ্যন্তরীণ গুণাবলী পছন্দ করার জন্য মানুষের বিভিন্ন রকমের পছন্দ রয়েছে। জ্ঞান মানুষের এক মূল্যবান রত্ন, তবে বিশ্বে এমন ব্যক্তিরা আছেন, যারা শিক্ষিত লোকের চেয়ে বেশি অশিক্ষিতদের পছন্দ করেন। উদারতা মানুষের পক্ষে একটি মহান সম্মান ও গুণ। তবে এই পৃথিবীতে অনেক লোক আছে যাদের মধ্যে উদারতা নেই। দান করা এটাও একটা মহৎ গুণ। অনেক মানুষ আছে তারা অন্যের ব্যয় দেখলেও তাদের অ্যালার্জি হয়।

তবে গোটা পৃথিবীতে এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না যিনি দয়া-অনুগ্রহ পছন্দ করেন না। আল্লাহর রাসূলকে বিশ্বজগতের জন্য রহমত করে প্রেরণ করা হয়েছে। যেনো পুরো পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষ রাসুল সা. এর জীবন কর্মে ধন্য আকর্ষিত হয় ও ধন্য হয়। ভাগ্যবানরা তারাই যারা তার রহমতের পরিচয় পেয়ে ধন্য হয়েছে। তার নবুয়াতের সাক্ষ্য দিয়েছে। নবুওয়তের সত্যতা স্বীকার করে এর উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছে। এ উম্মাহকে সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মাহর গুণাবলী প্রদান করেছে। তাদের উপর নবিওয়ালা দায়িত্ব ও কর্তব্য আরোপ করেছে। আমাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে যেনো আমরা তার আনিত দীনকে মানুষের কাছে পরিচিত করিয়ে দেই। দীনের দাওয়াত দেই। মানুষকে সৎ পথে আহ্বান করি। আজ আমরা সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষা ও আদেশ অমান্য করে দীনের দাওয়াত না দিয়ে তার উম্মত হওয়ার গুণাবলী হারিয়ে ফেলছি। আজ আমরা রাসুল সা. এর সিরাত সম্পর্কে না জেনে না আমলা করে তাঁর রহমত থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।

গোটা বিশ্বের সব মানুষের জন্য হেদায়াত ও রহমত হিসেবে প্রেরণ করা নবি মুহাম্মদ সা. কে ইসলামের নবি হিসেবে পরিচিত করিয়ে তার সঙ্গে অন্যায় করেছি। অথচ কুরআন যার সম্পর্কে কুরআন নিজেই সাক্ষ্য দিয়েছে যে তার চরিত্র কুরআনের মতই। আর তিনি সমগ্র মানবতার জন্য রহমত সরূপ প্রেরিত হয়েছেন। আর আমরা তাঁকে মানুষের কাছে শুধু ইসলামের নবি হিসেবে পরিচিত করিয়েছি। এটা অন্যায় ও জুলুম হয়েছে। মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ আর ধর্ম গ্রন্থের মতোই কুরআনকে উপস্থাপন করা হয়েছে। বলা হয়েছে যে কুরআন মুসলমানদের জন্য কেবল একটি সংবিধান। আর গোটা মানব জাতির জন্যই প্রেরিত। আর রাসুল সা. বিশ্ববাসীর জন্য রহমত। শুধু মুসলিমদের জন্য নয়। আল্লাহ তায়ালা কুরআনে রাসুল সা. কে নিজের পরিচয় দিতে বলে ঘোষণা করেছেন- قُلْ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي رَسُولُ اللّهِ إِلَيْكُمْ جَمِيعًا

হে মানব মন্ডলী। তোমাদের সবার প্রতি আমি আল্লাহ প্রেরিত রসূল (সুরা আরাফ ১৫৮)

وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا كَافَّةً لِّلنَّاسِ بَشِيرًا وَنَذِيرًا وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ

আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমি আপনাকে সমগ্র মানবজাতির জন্যে সুসংবাদাতা ও সতর্ককারী রূপে পাঠিয়েছি; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না। (সুরা সাবা-২৮)

গোটা মানব জাতি আজ রাসুল সা. এর মানবতার অধিকার লঙ্ঘন ও এই অপরাধের কারণে আমরা উম্মাহর মর্যাদা হারাতে বসেছি। আমরা কুরআন ও হাদিসের নুর থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। যার কারণে সমস্ত মানবতা কুরআনকে মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ হিসাবে বিবেচনা করে। রহমতের নবীকে মুসলিমদের নবি হিসেবে মনে করে। আজ গোটা বিশ্বে কিছু মানুষের অনৈতিক কাজের কারণে মিথ্যাবাদী-শয়তানী ও অত্যাচারী লোকরা ইসলামের নবির ব্যাপারে নানান প্রোপাগাণ্ডা ছড়াচ্ছে। মুসলিমদের সন্ত্রাস ও জঙ্গী বলে অবিহিত করছে।

অত্যাচারিত ও মূর্খ সম্প্রদায় বলে ডাকছে। তাহলে গোটা বিশ্বের মানুষরা কেনো এমন বদনাম কামানো একটি জাতির নবি ও কিতাবকে বুঝবে, মানবে, অনুসরণ করবে?

এটা আমাদের দুর্ভাগ্য। আমরা আমাদের কুরআনের এত এত অনুবাদ তাফসির প্রকাশিত হওয়ার পরও আমরা নিজেদের মান-সম্মান হারিয়ে ফেলেছি। আর যারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে দাওয়াতের কাজ করছে, তারা কুরআন ও হাদিসের উপর ভিত্তি করে যদি তাদের কাজ পরিচালনা করতো, তাহলে নিজেদের কে অপরাদবোধ থেকে মুক্ত করতে পারতো। আজ আমরা কুরআনের পাশাপাশি যদি সিরাতে রাসুল সা. এর গ্রন্থগুলোকে মানুষের দারে দারে পৌঁছে দিতে পারি তাহলে আমরা রাসুলের দেওয়া আমানত রক্ষা করার কাছাকাছি থাকতে পারতাম।

এটাকে কাকতালীয় বলেন বা উম্মতের অবহেলাও বলেন, সিরাতে মোস্তফা নিয়ে এত বেশি কাজ হওয়ার পরও বেশিরভাগ বই পড়ার পরে পাঠক বেশিরভাগই বুঝতে পারেন যে আল্লাহর রাসূল এমন ব্যক্তি ছিলেন যিনি অলৌকিকভাবে বিশ্বকে জয় করেছিলেন। ইসলামিক রাষ্ট্র তৈরি করেছিলেন এক অনন্য উপায়ে। তারপর রাসুল সা. এর শাসন পৃথিবীর দুই-তৃতীয়াংশে ছড়িয়ে পড়ে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর তাঁর উম্মতের উপর দায়িত্ব দায়িত্ব দেয়া হয়। বিশেষত উম্মত হিসেবে আলেমদের দায়িত্ব ছিলো বেশি। পুরো বিশ্ব এবং তাদের কাছে তাঁর শিক্ষা ও ধর্মকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে আলেমদের।

কুরআন ও সিরাতকে সহজ ভাষায় লিপিবদ্ধ করে সাধারণ থেকে সাধারণ মানুষের কাছে, অমুসলিমদের কাছে, পৃথিবীর সব মানুষের কাছে পৌঁছিয়ে দেয়া আমাদের কর্তব্য। যেনো আামদের মাঝে এ ভুল ধারণ দূরবিত হয়, কুরআন শুধু মুসলিমদের কিতাব। আর রাসুল সা. শুধু মুসলিমদের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে।

গোটা বিশ্বে কুরআন ও রাসুল সা. এর সঠিক পরিচিতি, তার শিক্ষার জ্ঞান যদি আমাদের থাকতো, অমুসলিমদের মাঝে দীনের দাওয়াত, রাসুল সা. এর আদর্শের দাওয়াত দেয়ার মত মানুষ যদি থাকতো তাহলে আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করতে পারতাম। আল্লাহ তায়ালা একজন দরদি মুবাল্লিগ, যিনি উম্মতের এ কঠিন অবস্থায় বিশেষভাবে আলেমদের মাঝে দাওয়াতি চেতনা জাগ্রত করতে কাজ করছেন। ফরজে কেফায়ার মত এ কঠিন জিম্মাদারী পালনে এগিয়ে এসেছেন, তিনি হলে আমাদের অত্যন্ত শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব ফকীহুল ইসলাম হজরত মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ রাহমানী। গোটা মানব জাতির পক্ষ থেকে আমরা তার শুকরিয়া আদায় করছি।

বিশেষ করে আলেমদের পক্ষ থেকে এ গুরু দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি সর্বপ্রথম সহজ ও সাবলিল ভাষায় কুরআনুর কারিমের অনুবাদ করেছেন হিন্দি ভাষায়। আর বর্তমান করোনা কালিন সময়ে লকডাউন অবস্থায় বাহিরে যেতে না পারলেও এর পরিপূর্ণ ফায়দা ওঠিয়েছেন। তিনি রাসুল সা. এর সিরাতের উপর অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি গ্রন্থ রচনা করেছেন।

বাস্তবে মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ রাহমানীর একটি দায়িত্ব ছিলো তিনি এ সিরাত গ্রন্থ রচনা করেছেন। উম্মতের জন্য এটি একটি মহান উপহার বলে আমি মনে করি। তিনি সিরাত গ্রন্থগুলোর উপর ভরসা না করে এর থেকে বেড়ে নিজেই একটি সিরাত গ্রন্থ রচনা করেছেন। এটি অনেক বড় একটি কাজ। অনেক বড় একটি উপহার। তার রচিত গ্রন্থের কিছু বৈশিষ্ট আলোচনা করছি। এ আলোচনার মাধ্যমে গ্রন্থটির গুরুত্ব আমাদের কাছে ফুটে ওঠবে বলে আশা করি।

০১. মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ রাহমানী রচিত এ সিরাত গ্রন্থটিতে সিরাতে নবি সা. এর সামাজিক ও মানবিক দিকগুলো বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

০২. রাসুল সা. এ যুদ্ধগুলো খুব সংক্ষিপ্তভাবে উল্লেখ করা হয়ছে। এগুলো এমনভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, যেভাবে বুঝা যায়, মুসলিমরা অপারগ হয়েই যুদ্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। তারা তলোয়ারের জোড়ে ইসলাম প্রচার প্রসার করেনি।

০৩. মক্কি ও পরবর্তি জীবনে মুসলিমদের উপর নেমে আসা জুলুম নির্যাতন এমনভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, স্পষ্ট হয়ে যায়, যে রাসুল সা. ও সাহাবায়ে কেরাম জুলুরে শিকার হয়েছেন। তারা জালেম ছিলেন না।

০৪. অমুসলিমদের সঙ্গে রাসুল সা. এর সন্ধির বিষয়গুলোও সুস্পষ্ট করে উল্লেখ করা হয়েছে।

০৫. সহজ সরল ও সাবলিল ভাষায় লেখা হয়েছে।

০৬. প্রতিটি বিষয়ের দলিল প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে। ০৭. পৃথিবীর বর্তমান অবস্থায় সিরাত থেকে কী শিক্ষা পাওয়া যায়, এ বিষয়েও আলোকপাত করা হয়েছে।

 

০৮. রাসুল সা. বাণীগুলোর মধ্যে মানবিক দিক থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো প্রতি দৃষ্টি দেয়া হয়েছে।

০৯. বিদায় হজের ভাষণের আলোকে মানব জাতির প্রতি রাসুল সা. এর আহ্বানও স্পষ্ট করা হয়েছে।

১০. মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ রাহমানী রচিত সিরাত গ্রন্থটির একটি অধ্যায়ে হিন্দু ধর্মগ্রন্থগুলোতে রাসুল সা. কে নিয়ে যে আলোচনা করা হয়েছে, তাও উল্লেখ করা হয়েছে। ১১. বাইবেলে রাসুল সা. এর আলোচনাও উল্লেখ করা হয়েছে।

১২. রাসুল সা. কে নিয়ে হিন্দুস্তান, ইউরোপিয়ান, পশ্চিমা পণ্ডিতদের মন্তব্যও যুক্ত করা হয়েছে।

মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ রাহমানী অত্যন্ত দরদ ও মুহব্বত নিয়ে এ সিরাত গ্রন্থটি রচনা করেছেন। তিনি ফিকহি মাসায়েল দাওয়াত ও তার বয়ান সব ক্ষেত্রে মানবিকতাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। ঠিক তেমনই তিনি এ সিরাত গ্রন্থের ক্ষেত্রেও করেছেন। মানবতার নবিকে মানবজাতির কাছে ফুটিয়ে তুলেছেন। আর তাই তিনি তার গ্রন্থের নাম করন করেছেন ‘পয়গম্বরে আলম’ বিশ্ববাসীর নবি রাসুলে আকরাম সা.। এ নবি শুধু মুসলিমদের নয় শুধু আরবদের নয়। এ গ্রন্থের মাধ্যমে মানুষের এ ভুল ধারণা দূর হবে। যে নবি শুধু মুসলিমদের নবি, ইসলামের নবি। নবি কারিম সা. শুধু মুসলিমদের নবি ছিলেন না। বরং তিনি গোটা বিশ্বের সমস্ত মানুষের নবি ছিলেন।

তিনি ‘পয়গম্বরে আলম’ রচনা করে শুধু উম্মতের উলামায়ে কেরামেরই ফরজে কেফায়া আদায় করেননি, বরং তিনি সিরাতে নববির পিপাসার্ত মানবজাতির উপর অনেক বড় ইহসান করেছেন। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কখনো কখনো তার অধম বান্দাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করতে উসিলা খুঁজেন। তাই আমার মত অধমের উপর এ মহান গ্রন্থের ভূমিকা লিখার দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে। রাসুলে আকরাম সা. এর সিরাত বিষয়ে আমি অধম কলম ধরতে সাহস করিনি।

গ্রহণযোগ্য একজন ব্যক্তিত্বের কিতাবে আমার মত নগণ্য ব্যক্তি কী বা লিখতে পারে। ব্যস আল্লাহই জানেন আমি আসলে এ দায়িত্ব পেয়ে গাবড়ে গিয়েছি। কিন্তু মাওলানার বারবার তাগিদে আমি আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানের সমন্বয়ে কিছু লিখার সাহস করেছি।

আমি অধম অমুখাপেক্ষি মহান রব, রহমান ও রহিম আল্লাহর দরবারে আমার অন্তরের অন্তস্থল থেকে প্রার্থণা করি, ফকিহুল ইসলাম মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ মানব জাতির জন্য যে পুরস্কার প্রস্তুত করেছেন, দীনের দরদ ও মুহাব্বত থেকে রাসুল সা. এর যে সিরাত রচনা করেছেন, এরজন্য তাকে মহা প্রতিদান দান করুন। সমস্ত মানবজাতির কাছে সিরাতে নবি সা. এর শিক্ষা পৌঁছে যাক। এ গ্রন্থকে বিশ্বের সমস্ত মানুষের কাছে রাসুল সা. এর শিক্ষা ও আদর্শ পৌঁছানো একটি মাধ্যম হিসেবে কবুল করুন।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

জুমার দিন যে আমল করতে বলেছেন নবীজি

নূর নিউজ

তাবলিগে নিয়মিত পড়া হয় যে ৩ বই

নূর নিউজ

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জানাজা কিভাবে হয়েছিল?

নূর নিউজ