নূর নিউজ: হেফাজতের সাবেক আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফী রহ.-এর পুত্র ও আঞ্জুমানে দাওয়াতে ইসলাহ-এর আমীর মাওলানা আনাস মাদানী বলেছেন, বর্তমানে কওমি মাদ্রাসায় আশঙ্কাজনক এবং ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি বিরাজমান। এ সম্পর্কে আল্লামা শাহ্ আহমদ শফী রহ. আগেই সতর্ক করেছিলেন। তিনি এ সমস্যা থেকে উত্তরণের পদ্ধতিও বাতলে দিয়ে গিয়েছিলেন। অনেকবার সরকারকে তিনি সতর্কও করেছিলেন।
তিনি বলেন, বিরাজমান সংকট থেকে উত্তরণের জন্য তার পদাঙ্ক অনুসরণের বিকল্প নেই। তাই তার কর্ম ও আখলাককে আকড়ে ধরে, জোটবদ্ধ হয়ে দেশের সর্বসাধারণকে সাথে নিয়ে ইসলাম বিরোধী সব অপতৎপরতাকে প্রতিহত করতে হবে। অপ্রত্যাশিত অনাকাঙ্খিত সবকিছু বর্জন করে সতর্কতা ও উদারতার সমন্বয়ে আকাবিরে ওলামায়ে দেওবন্দের রেখে যাওয়া আমানত এই কওমী অঙ্গনকে সুরক্ষা দিতে হবে।
আজ বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) জাতীয় প্রেস ক্লাবে আঞ্জুমানে দাওয়াতে ইসলাহ-এর উদ্যোগে ‘শায়খুল ইসলাম শাহ আহমদ শফীর জীবন, কর্ম, অবদান ও চলমান সংকট থেকে উত্তরণে উলামায়ে কেরামের করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
মাওলানা আনাস মাদানী বলেন, ধর্মীয় অধিকার আদায়, কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি ও স্বীকৃতিসহ নানা আন্দোলনের পুরোভাগে থেকে বৃদ্ধ বয়সেও আল্লামা আহমদ শফী সাহসী পদক্ষেপ নেন। সরকারের সঙ্গে শত্রুতাও দেখাননি তিনি এবং তাদেরকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উপদেশ দিতেও কসুর করেননি। ফলে এই মধ্যমপন্থায় থাকার কারণে তিনি সরকার থেকে অনেক দাবি আদায় করতে পেরেছেন। কওমি স্বীকৃতি তার মধ্যে অন্যতম।
মাওলানা আনাস মাদানী আরও বলেন, অসাধারণ দায়িত্ববোধ, গভীর জীবন দর্শন ও নিরলস শ্রমশীল এক অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন আল্লামা শাহ আহমদ শফী রহ.। জনআকাঙ্খার সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর হিসেবে এক অতুলনীয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হন তিনি। তার দেখানো পথেই চলমান সংকটময় পরিস্থিতি থেকে আমাদের উত্তরণের পথ খোঁজে বের করতে হবে।
তিনি বলেন, আমার আব্বা কর্মজীবনের প্রায় ৮০ বছর দ্বীনের বহুমুখী খেদমত করেছেন। মুসলিম উম্মাহর জন্য রয়েছে তার বিরাট অবদান। আব্বার ইন্তেকালের পর এখন পর্যন্ত জাতীয়ভাবে কোনও আলোচনা সভার আয়োজন করা যায়নি। সে হিসেবে আজ এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। আজ এখান থেকে হেফাজতের কমিটি গঠন বা এ জাতীয় কোনও বিষয়ের সম্ভাবনা নেই।
তিনি বলেন আল্লামা শাহ্ আহমদ শফীর তাঁর হাজার হাজার রুহানি শিষ্য ও খোলাফাদের জন্য তিনি গড়ে তুলেছেন আঞ্জুমানে দাওয়াতে ইসলাহ বাংলাদেশ নামে একটি দ্বীনি সংগঠন। এখন তিনি নেই। তাই এই সংগঠন এখন খলিফাদের। একটি সংগঠন তার সদস্যদের তৎপরতায় এগিয়ে যায়। তাই আমরা সকলে মিলে যদি চেষ্টা করি, আঞ্জুমানে দাওয়াতে ইসলাহ বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে যাবে।
সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত সভার দু’টি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন আল্লামা শাহ্ আহমদ শফী পুত্র মাওলানা ইউসুফ মাদানী। দ্বিতীয় অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন আরেক পুত্র মাওলানা আনাস মাদানী। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ফরিদাবাদ মাদ্রাসার মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, ফরিদাবাদ মাদ্রাসার শায়খুল হাদীস মুফতি নুরুল আমিন, হাটহাজারী মাদ্রাসার সাবেক মুহাদ্দিস মাওলানা নুরুল ইসলাম জাদীদ, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ, মাওলানা মাইনুদ্দীন রুহী, মাওলানা মোশতাক আহমদ খান (সিলেট), মাওলানা আব্দুল হক কাউসারী (পটুয়াখালী), মাওলানা ইসমাতুল্লাহ কাসেমী (ফরিদপুর), বেফাকের সাবেক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণক মুফতি ইউসুফ মাদানী, মাওলানা আমিনুল ইসলাম (ময়মনসিংহ), মাওলানা আব্দুল কাদের (বরিশাল), ড. মাওলানা কামরুল ইসলাম ভূঁইয়া, জমিয়তের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা শেখ মুজিবুর রহমান, মাওলানা সালমান মাওলানা শিব্বির, মাওলানা শিব্বির আহমদ মুহাদ্দিস ওলামা বাজার ফেনী প্রমুখ। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন মুফতি নাসিরুদ্দিন কাসেমী।