ভারতের উচিৎ বাংলাদেশ থেকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির শিক্ষা নেওয়া : হেফাজত

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ-এর মহাসচিব আল্লামা শায়েখ সাজিদুর রহমান বলেন, ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির নেতাদের একের পর এক ইসলাম ও মানবতার মুক্তির দূত মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর পরিবার নিয়ে কটূক্তি সারা বিশ্বের মুসলমানদের চরমভাবে ক্ষুব্ধ করেছে।

বিজেপি নেতারা প্রায় ২০০ কোটি মুসলমানের অন্তরে আঘাত করেছে। বিজেপি নেতারা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছে। যেহেতু ভারতের সরকারি দলের জাতীয় মুখপাত্র এ হীন বক্তব্য দিয়েছে যা ইসলাম ধর্মের উপর রাষ্ট্রীয় আঘাতের শামিল। তাই সারা বিশ্বের মুসলমানদের নিকট তাদের প্রকাশ্যে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে এবং দোষীদের গ্রেফতার করে অবিলম্বে যথাযথ শাস্তি প্রদান করতে হবে।

আজ বৃহস্পতিবার ৯ জুন’২২ ইল (বৃহস্পতিবার) হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ আয়োজিত ভারতের বিজেপি নেতাদের মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও উম্মুল মু’মিনিন হজরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা সম্পর্কে কটূক্তির প্রতিবাদে জাতীয় মসজিদ বাইতুল মোকাররমের উত্তর গেইটে আয়োজিত মানবন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন।

আল্লামা শায়েখ সাজিদুর রহমান বলেন, এবারই প্রথম নয়, ক্ষমতায় আসার পর থেকেই লাগাতার ইসলামের ওপর বিদ্বেষ ছড়িয়ে যাচ্ছে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি। দেশটিতে মুসলমানদের ওপর চলছে নানারকম নির্যাতন। দিন দিন তাদের এই প্রবণতা আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এটি সম্ভব হচ্ছে মুসলিম বিশ্ব চুপ থাকার কারণে।

তিনি বলেন, দলের মুখপাত্র নূপুর শর্মা ও দিল্লি শাখার মিডিয়া সেল প্রধান জিন্দালকে বহিষ্কার করা হয়েছে আরব মুসলিম দেশগুলোর চাপে পড়ে। এর মানে স্পষ্ট যে, মুসলিম বিশ্ব যদি সরব হয়, ভারতের ইসলাম বিদ্বেষ অনেকটাই কমে আসতে বাধ্য। আমরা ওআইসি সহ মুসলিম বিশ্বকে আহবান জানাবো, ভারতসহ বিশ্বের যেখানেই ইসলাম বিদ্বেষ ও মানবতার মুক্তির দূত হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে ঘৃণা ছড়ানো হয়, সেখানেই সম্মেলিত প্রতিবাদ করতে হবে।

হেফাজত মহাসচিব আরো বলেন, আমরা ভারত সরকারের কাছে দাবি জানাবো, আপনারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানো বন্ধ করুন। ভারত উপমহাদেশ মুসলমানরা শতশত বছর শাসন করেছে, কিন্তু তারা অন্য কোনও ধর্মের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ায়নি। বরং তারা ভারতকে গড়ে তুলেছে। ভারতের আজাদী আন্দোলনে মুসলমানদের রয়েছে গৌরবময় ইতিহাস। আপনাদের উচিৎ ইতিহাস অধ্যায়ন করা।

তিনি আরো বলেন, ভারতের উচিৎ বাংলাদেশ থেকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির শিক্ষা গ্রহণ করা। বাংলাদেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হলেও এখানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকেরা বরাবরের মতো নিরাপদ ও সম্প্রিতির মধ্যে বসবাস করে যাচ্ছে। ক্ষমতাসীন তো দূরের কথা বাংলাদেশে কোনও রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক ব্যক্তিরাও কোনো সংখ্যালঘু ধর্মকে কটাক্ষ করে বক্তব্য রাখার সাহস করে না। ভারতের উচিৎ এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা।

আল্লামা শায়েখ সাজিদুর রহমান বলেন, আমীরে হেফাজত আল্লামা শাহ মুহিববুল্লাহ বাবুনগরীর নির্দেশে আমরা আজ এই মানববন্ধনের আয়োজন করেছি। আজকে মানববন্ধন হওয়ার কথা থাকলেও ভারী বর্ষণ ও প্রতিকূল আবহাওয়াকে উপেক্ষা করে নবী প্রেমিকদের ঢল নামায় প্রোগ্রাম বিক্ষোভ সমাবেশে রুপ নেই। আমীরে হেফাজত আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী অসুস্থতা জনিত কারণে উপস্থিত হতে পারেননি। তিনি লিখিত বক্তব্য প্রেরণ করেন। লিখিত বক্তব্যে তিনি মুসলিম উম্মাহকে মানবতার মুক্তির দূত হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকতে আহ্বান জানিয়েছেন।

সভাপতির বক্তব্যে হেফাজতের সিনিয়র নায়েবে আমীর অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেন, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের রাজনৈতিক কোনো অভিলাস নেই। তবে আল্লাহ, তার রাসূল সা. এবং দ্বীন ইসলামের ওপর যদি আঘাত আসে তখন হেফাজত ঘরে বসে থাকবে না। আমরা আল্লামা শাহ আহমাদ শফী রহ. এর নীতি আদর্শকে সমুন্নত রেখেই আগামী দিনের সকল কার্যক্রম চালিয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ।

হেফাজতের সিনিয়র নায়েবে আমীর আল্লামা শাহ আতাউল্লাহ হাফেজ্জী বলেন, বিশ্ব নবী সা. সম্পর্কে তাদের কটূক্তি ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য মূর্খতা এবং তূলনামুলক ধর্মতত্ত্ব সম্পর্কে আজ্ঞতার প্রমাণ। আজ আরব বিশ্বসহ সারা বিশ্বের মুসলমানরা এর প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছেন। ভারতীয় পণ্য বয়কটের মতো পদক্ষেপও তারা গ্রহণ করেছেন। এই ধরনের পণ্য বর্জনের নীরব, কিন্তু প্রভাব বিস্তারক প্রতিবাদে আমরাও শামিল হবো, ইনশাআল্লাহ।

এছাড়া হেফাজতের প্রচার সম্পাদক আল্লামা মুহিউদ্দীন রাব্বানী বলেন, বিজিবির উগ্রবাদী যে সকল সমর্থক আরব বিশ্বের এয়ারলাইন্সগুলো বয়কটের ঘোষণা দিয়েছেন তাদের বলব, শুধু এয়ারলাইন্স কেন! তাদের জ্বালানি এবং শ্রম বাজার থেকে নিজেদের সকল লোকদের ফিরিয়ে নিয়ে আরবকে বয়কট করুন।

আল্লামা মুহিউদ্দীন রাব্বানী’র সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মীর ইদরীস, দাওয়া বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম সুবহানী, মাওলানা জহুরুল হক, মাওলানা কেফায়েতুল্লাহ আজহারী, মাওলানা আনিসুর রহমান, মুফতী কামালউদ্দীন, মাওলানা মুস্তাকিম বিল্লাহ প্রমুখ।

মানববন্ধন থেকে ৫ দফা দাবি জানানো হয়।
১- ভারত সরকারকে অবশ্যই কটূক্তিকারী দুই বিজেপি নেতাকে অবিম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

২- বিশ্ব মুসলমানদের কাছে ভারতকে ক্ষমা চাইতে হবে।

৩- অন্যথায় সারা বিশ্বের মুসলমানরা ভারতীয় পণ্য বয়কট করবে।

৪- মুসলমানদের বিশ্বাস ও ধর্মের প্রতি সম্মান জানিয়ে বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে তলব করে প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাতে হবে।

৫- কারাগারে আটক আলেম-উলামা ও ইসলাম প্রিয় তৌহিদী জনতাকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।

এছাড়া দেশের সকল মসজিদে জুম্মার বয়ানে বিশ্ব নবী মুহাম্মদ (সা.) এর অবমাননার প্রতিবাদ জানিয়ে আলোচনা করার জন্য খতীবদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানানো হয়।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

সৌদি দূতাবাসের নামে ভুয়া ওয়েবসাইট খুলে চাকরি দিচ্ছিল একটি চক্র

নূর নিউজ

চা শ্রমিকদের ঘর করে দেবেন প্রধানমন্ত্রী

নূর নিউজ

‘কোরবানির ঈদ পর্যন্ত ভোজ্যতেলের দাম বাড়বে না’

নূর নিউজ