যোগাযোগ ও অন্যান্য খাতে শক্তিশালী উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতাকে জোরদার করতে চায় ভারত।
ঢাকা সফররত দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বৈঠক করেন বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বৈঠক শেষে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ‘আমাদের অনেক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা, বাংলাদেশ ও ভারত যেভাবে একসঙ্গে কাজ করেছি, তা ইতিহাসে বিরল।
আমাদের সেই প্রেরণা রয়েছে একত্রে কাজ করার। সেই প্রেরণার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের যত ধরনের ছোটখাটো সমস্যা রয়েছে, সেগুলো সমাধানের অঙ্গীকার করেছি। বড় বড় সমস্যা আমরা সব সমাধান করেছি।’
এস জয়শঙ্কর বলেন, ‘কানেকটিভিটি এবং জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের বেশ কিছু প্রকল্প সময়ের আগে শেষ হচ্ছে। ভারত শক্তিশালী উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা দেখতে চায়। বিশেষ করে জলবিদ্যুৎ খাতে দুই দেশের মধ্যে অভিন্ন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সহযোগিতার সুযোগ রয়েছে। ভারত বিদ্যুতের অন্যতম বড় উৎপাদক ও ভোক্তা।
বিবিআইএন-এর আওতায় জলবিদ্যুতে প্রতিবেশীর সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করতে ভারত প্রস্তুত। জলবিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন ও বাণিজ্যে অংশীদারত্বের মাধ্যমে ভারত নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করবে।’
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি নিয়ে জানতে চাইলে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কর্মকর্তাদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। এগুলোতে অনেক বিস্তারিত আলোচনা করতে হয়।এজন্য অপেক্ষা করতে হবে।
এস জয়শঙ্কর আরও বলেন, করোনা চ্যালেঞ্জের মধ্যেও বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অব্যাহত যোগাযোগ ছিল। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে আমাদের বেশ অগ্রগতি হয়েছে। আমার সফরের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সম্পর্ককে আরও গভীর করা। প্রতিবেশী হিসেবে আমাদের সম্পর্কের যে ধারা, তা একে অন্যের প্রতি বিশ্বাস ও আস্থার প্রতিফলন। আমাদের শীর্ষ নেতারা একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগে রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে জয়শঙ্কর বলেন, ‘সাক্ষাতের সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানিয়েছি। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুবিধা অনুযায়ী ভারতে সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ সময় দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ছাড়াও আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে।’
র্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে বাংলাদেশের পাশে ভারতের দাঁড়ানোর প্রসঙ্গও সামনে এসেছে। এ নিয়ে প্রশ্ন করলে এস জয়শঙ্কর বলেন, ‘এ বিষয়ে আপনাদের (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) এ কে আবদুল মোমেনকে প্রশ্ন করা উচিত বলে মনে করি।’ এ সময় এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা কাজ করছি।’
আগামী নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর রাজনৈতিক কোনো প্রভাব ফেলবে কি-না, জানতে চাইলে জয়শঙ্কর বলেন, আমার এখনো জানা নেই কখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফর করবেন। সফরটি সম্পূর্ণ তার সুবিধাজনক সময়ের ওপর নির্ভর করে। আমাদের সফর চূড়ান্ত হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকায় আসেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। এ সময় বিমানবাহিনীর বঙ্গবন্ধুঘাঁটিতে তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। ঢাকায় অবতরণের পর বিকেল ৪টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন এস জয়শঙ্কর। তার পর দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বৈঠক করেন।
আগামীকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টায় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে।