প্রবাস জীবন মানে নিষ্ঠুর, নিঃসঙ্গ জীবনযাপন এবং প্রিয়জনের সান্নিধ্য থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে দেয়ালহীন কারাগারে এতিমের মতো বসবাস। কারও দুঃখ কেউ বুঝতে চেষ্টা করেন না।
নিজের দুঃখ নিজে অন্তরে রেখে নীরবে কান্না করতে হয়। প্রবাস মানেই কি নিঃসঙ্গতা? একাকিত্ব? নাকি প্রবাস মানেই হাড়ভাঙা পরিশ্রম।
কেমন কাটে প্রবাস জীবন? কেউ বলে মলিন নয়তো ফ্যাকাশে। কেউ বলে পানসে। কারও কাছে রোমাঞ্চকর, অতিমাত্রায় স্বাধীনতা। প্রবাসে যারা এসেছেন একমাত্র তারাই প্রবাস জীবন যে কেমন নির্দয় ও নির্মম তার ব্যাখ্যা দিতে পারবেন।
কোথাও বেড়াতে যাওয়ার বাড়তি ইচ্ছাও থাকতে নেই প্রবাসীদের। শত বাধা উপেক্ষা করেও ঈদুল ফিতরের অবসরে বিভিন্ন বিনোদনকেন্দ্রে ঘুরে বেড়িয়েছেন মালয়েশিয়া প্রবাসীরা। এ সময় তারা সন্তানদের সঙ্গে মেতে ওঠেন ঈদ উদযাপনে। মালয়েশিয়ার বিভিন্ন পার্ক ও মলে আয়োজিত ঈদ উৎসবেও ভিড় করেন অনেকে।
বিদেশে ঈদের এই আনন্দঘন মুহূর্তে দেশে থাকা স্বজনদের কথা বারবার মনে পড়েছে তাদের। প্রবাসের ঈদ তাই তাদের কাছে ছিল অপূর্ণ আনন্দ। সেই দুঃখ ভুলে সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান হাজারো মাইল দূরে থাকা মালয়েশিয়া প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
ঈদের দিন বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত হাজারো প্রবাসীর পদচারণায় মুখর ছিল দেশটির রাজধানী শহর কুয়ালালামপুর এবং পুত্রজায়াসহ অন্যান্য দর্শনীয় স্থান। বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে ঘুরে বেড়ানো আর প্রাণখোলা আড্ডায় মেতে ঈদুল ফিতরের আনন্দ উপভোগ করেছেন মালয়েশিয়া প্রবাসী লাখো বাংলাদেশি।
ঈদের অবসরকে আনন্দমুখর করে তুলতে দেশটির বিভিন্ন শহর থেকে অনেকে এসে জড়ো হন বিভিন্ন পার্কে। কর্মব্যস্ত জীবনে ঈদের এই ক্ষণিকের অবসর প্রবাসীদের জন্য বয়ে আনে সুবর্ণ সুযোগ।
মালয়েশিয়ায় ঈদের জামায়াত শেষে চিরাচরিত নিয়ম অনুযায়ী একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি করে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। ঈদ মানে আনন্দ, খুশি। সবার ঈদ আনন্দ আবার এক রকম নয়।
ঝিনাইদহের ২১ বছর বয়সি রিমন হোসেন চার বছর ধরে মালয়েশিয়ায় কাজ করছেন এবং তার পরিবারকে মিস করছেন।
পরিবার থেকে দূরে থাকা খুব কঠিন। প্রতিদিন ভিডিও কলে মা বাবা পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
রিমন বলেন, পরিবার-পরিজন ছেড়ে টানা চার বছর ধরে দেশের বাইরে ঈদ করছি। ঈদের দিনে তার বাবা-মাকে শুভেচ্ছা জানাতে ফোন করেছিলেন।
ঈদের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে চোখের কোণে পানি জমে আসে রিমনের। ঈদে পরিবারের সঙ্গে কাটাতে চান তিনি। কিন্তু ভিসা থাকলেও ছুটি মেলে না। রিমনের সাথে সূর মেলালেন কুমিল্লার মোহাম্মদ রিয়াদ ও মো: কাওছার আহমেদ।
কাওছার এক ঝিলিক হাসিঁ দিয়ে বললেন, এই মাসে তিনি ছুটি পাবেন। দেশে যাবেন ছুটি কাটাতে। কাওছারের এ যেন আলাদা এক অনুভূতি।
তবে দীর্ঘদিন ধরে যারা প্রবাসে আছেন তারা খানিকটা হলেও নিজেদের সামলে নিতে পারেন। কিন্তু পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন আসলে ভিন্ন রকম অনুভূতি। ঠিক এমনটিই বলছিলেন ১৫ বছর ধরে মালয়েশিয়ায় থাকা সিলেটের কামরুল।
তিনি বলেন, ঈদ মানেই আনন্দ, ঈদ মানেই খুশি, তবে আত্মীয়-স্বজনদের ছেড়ে ঈদ উদযাপন করা সত্যিই কষ্টের। বিশেষ এই দিনে মাকে খুব মনে পড়ছে তার।
যে প্রবাসীরা রেমিটেন্সের টাকা পাঠিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখছেন, তারাই তাদের প্রত্যেকেরই ক্যালেন্ডারের পাতায় বয়েছে উৎসবহীন দিন। কিন্তু তারপরও জীবন থেমে থাকে না। পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি দেখেই সব ভুলে যান এই প্রবাসীরা।