মাকতাবাতুল ইমাম শাফেয়ী রিয়াদ-এর স্বত্বাধিকারী শায়েখ মুহাম্মাদ বিন আবদুল্লাহ আ-লুর রশীদ আমার মুহসিন দোস্ত। হযরত শায়েখ আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রাহ.-এর খেদমতে যাওয়ার তাওফীক হলে কিছু দিন তার ঘরে থাকা হয়েছিল। তার পিতার সঙ্গেও এক ধরনের সম্পর্ক হয়ে গিয়েছিল। কয়েক মাস পরেই মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় আবদুল্লাহ আ-লুর রশীদের ইনতিকাল হয়ে যায়। গোসল, কাফন-দাফনে অধমও শরীক ছিলাম। তার বাড়ি মাশাআল্লাহ বেশ বড় ছিল। পাশেই ছিল তার বড় ছেলে মুহাম্মাদ আররশীদের বাড়ি। সেই বাড়িরই কিতাবঘরে অধম কিছু দিন অবস্থান করেছিলাম।
তার পিতা ইনতিকালের সম্ভবত সাড়ে চার মাস পর তার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। তিনি বললেন, আমার আম্মাজানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাব।
আমি বললাম, তার ঘর তো পাশেই!
বললেন, এখন তিনি এখানে থাকেন না। ইদ্দত পূর্ণ হতেই নিজের জায়গায় চলে গেছেন।
বললাম, কেন?
উত্তরে বললেন, এটা আব্বাজানের বাড়ি ছিল। তার ইনতিকালের পর এখন এটা ওয়ারিসদের হয়ে গেছে। তাই মিরাস বণ্টনের আগে তিনি এখানে কীভাবে থাকবেন? গুনাহ হবে না!১
এই ঘটনা দ্বারা আমার বলা উদ্দেশ্য হল, তাদের অনুভূতি কত সজীব এবং হক ও লেনদেনের বিষয়ে তারা কতটা সজাগ ও সচেতন।
অথচ আমাদের উপমহাদেশে মিরাস বণ্টনের বিষয়ে উদাসীনতা ব্যাপক। মিরাস বণ্টন শরীয়তের গুরুত্বপূর্ণ বিধান; এতে বিলম্ব করা যে গুনাহ- হয়ত এ ব্যাপারে আমাদের কোনো ধারণাই নেই!!
কেউ চাইলে শুধু এই ঘটনা থেকে অনেক কিছু শিখতে পারে। আসলে আমাদের মধ্যে কম মানুষই এমন আছেন, যারা এ বিষয়ে যথাযথ চিন্তা-ভাবনা করেন। আমরা এটা ভাবিই না যে, মিরাস বণ্টনে বিলম্ব করা কত বড় গুনাহ এবং কত গুনাহের জন্ম দেয়।
শরীয়তের বিধান হল, কারো ওফাত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার মিরাস তথা রেখে যাওয়া সম্পত্তির সবকিছুর সঙ্গে সকল ওয়ারিসের হক যুক্ত হয়ে যায়। সেজন্য জরুরি হল, মৃতব্যক্তির দাফনকার্য সম্পন্ন হওয়ার পর খুব দ্রুত সময়-সুযোগ বের করে শরীয়ত-নির্ধারিত অংশ অনুযায়ী ওয়ারিসদের মাঝে মিরাস বণ্টন করে দেয়া।
অবশ্য মিরাস-বণ্টনের আগে তিনটি বিষয় লক্ষ রাখা জরুরি-
এক. মৃতব্যক্তি পুরুষ হোক বা নারী- তার কাফন-দাফনের খরচ কেউ খুশি মনে বহন করলে ভালোকথা। নতুবা কাফন-দাফনের জন্য তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে মধ্যম পর্যায়ের খরচ করা হবে।
দুই. মৃতব্যক্তির জিম্মায় ঋণ থাকলে বণ্টনের আগে তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে আদায় করা হবে। ঋণের মধ্যে স্ত্রীর মোহরও অন্তভুর্ক্ত। যদি মোহর বা মোহরের কিছু অংশ বাকি রয়ে যায়, সেটাও রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে আদায় করতে হবে।
মনে রাখতে হবে, স্বামী যদি স্ত্রী থেকে জোরপূর্বক বা সমাজের প্রচলিত রীতি অনুযায়ী মোহর মাফ করিয়ে নেয়, সেটা ধর্তব্য হবে না। এক্ষেত্রে মোহর অনাদায়ী রয়ে গেছে বলে গণ্য হবে এবং তা ঋণের অন্তভুর্ক্ত হবে। এমনিভাবে স্বামীর মৃত্যুর পর অন্য ওয়ারিসরা যদি তার থেকে জোরপূর্বক বা প্রচলিত রীতি অনুযায়ী মোহর মাফ করিয়ে নেয়, সেটাও ধর্তব্য নয়।
স্ত্রী যদি স্বতঃস্ফূর্তভাবে কোনো ধরনের চাপের সম্মুখীন না হয়ে খুশি মনে পুরো মহর বা তার অংশ বিশেষ ছেড়ে দেয় তাহলে কোনো অসুবিধা নেই। তবে মনে রাখতে হবে, কোনো চাপের সম্মুখীন হয়ে মোহরের হক ছেড়ে দিলে তা ধর্তব্য হবে না।
চাপ বহু ধরনের হতে পারে। যেমন, ভয় দেখিয়ে চাপ সৃষ্টি করা; লজ্জায় ফেলে চাপ সৃষ্টি করা বা তার কোনো হক আটকে রেখে চাপ সৃষ্টি করা। কিংবা সামাজিক প্রচলনের ভয়ে মনে না চাওয়া সত্ত্বেও মাফ করে দেওয়া। এসবকিছুই চাপের মুখে মাফ করা। এগুলো স্বতঃস্ফূর্ত মাফের অন্তভুর্ক্ত নয়।
মৃতব্যক্তির ঋণসমূহের মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঋণ এটাও যে, তার পিতার মিরাস বণ্টনের সময় যদি তার বোনদেরকে প্রাপ্য অংশ না দেয়া হয় কিংবা তার দাদার মিরাস বণ্টনের সময় যদি ফুফুদের অংশ না দেয়া হয় তাহলে মৃতব্যক্তির ভাগে তার ফুফু ও বোনদের স্থাবর বা অস্থাবর সম্পদ থেকে যতটুকু অংশ দাখিল হয়েছে সেটা মৃতব্যক্তির জিম্মায় ঋণ হয়ে আছে। অতএব মিরাসের সম্পত্তি ওয়ারিসদের মধ্যে বণ্টনের আগে এই ঋণও আদায় করা ফরয।
সারকথা হল- মৃতব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পদ অবশিষ্ট থাকাবস্থায় তার কোনো ঋণ যেন অনাদায়ী না থাকে। মিরাস ওয়ারিসদের মাঝে তখনই বণ্টন হবে যখন তার সমস্ত ঋণ পরিশোধ হয়ে যাবে এবং সামনে উল্লেখিত তিন নম্বরের বিষয়টিও সমাধা হয়ে যাবে।
তিন. মায়্যেত (মরহুম/মরহুমা) কোনো জায়েয ওসিয়ত করে গেলে সেটা তার মিরাসের এক-তৃতীয়াংশ থেকে পূরণ করা হবে। এক-তৃতীয়াংশের বেশি ওসিয়ত করলে সেটা ধর্তব্য হবে না।
মিরাসের এক-তৃতীয়াংশ দ্বারা উদ্দেশ্য হল, এক ও দুই নম্বরে উল্লেখিত হক (যদি থাকে) আদায় করার পর যে সম্পদ বাকি থাকবে সেটার এক-তৃতীয়াংশ।
কোন্ ওসিয়ত জায়েয আর কোন্ ওসিয়ত না জায়েয সেটা ফিকহ-ফতোয়ার কিতাবে আছে। কারো প্রয়োজন হলে আলেমগণ থেকে জেনে নেবেন।
এই তিনটি হক আদায়ের পর মিরাসের যা কিছু অবশিষ্ট থাকবে, কম হোক বা বেশি, সেটা ওয়ারিসদের মধ্যে বণ্টন করা ফরয।
মৃতব্যক্তি যা কিছু রেখে গেছে সবই মিরাসের অন্তভুর্ক্ত
মিরাসের মধ্যে শুধু টাকা-পয়সা ও জমি-জমাই অন্তভুর্ক্ত নয়; বরং যা কিছু মৃতব্যক্তি রেখে গেছে সবই এর অন্তভুর্ক্ত। সেগুলোর সাধারণ কোনো জিনিসও মিরাসসংশ্লিষ্ট হক ও বণ্টন থেকে পৃথক রাখা জায়েয নয়।
যেমন-
১. ব্যক্তিগত ব্যবহার্য জিনিসপত্র
কাপড়, জুতা, বাসন, ঘড়ি, সাইকেল, মোটর সাইকেল, গাড়ি (যেমন গাড়িই হোক), ফার্নিচার, কিতাবাদিসহ ব্যবহার্য অন্য সব জিনিসপত্র।
আশ্চর্যের বিষয় হল, মানুষ মৃতব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিসপত্রকে মিরাসের অংশই মনে করে না। যার যেটা পছন্দ, অন্য শরীকদের সন্তষ্টি ছাড়াই দখল করে নেয়। মনে রাখবেন, এ ধরনের কাজ একদম নাজায়েয। আমাদের উসতাযে মুহতারাম হযরত শায়খুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুম তাঁর এক বয়ানে বলেন, ‘আমার আব্বাজান রাহ.-এর ইনতিকাল হয়ে গেলে আমার শায়েখ হযরত ডাক্তার আবদুল হাই আরেফী ছাহেব রাহ. সমবেদনা জানাতে এলেন। তখনও দাফনের কাজ শেষ হয়নি। হযরত রাহ.-এর স্বাস্থ্য তখন তেমন ভালো ছিল না। আব্বাজানের ইনতিকালও তাঁর জন্য আনেক বড় আঘাত ছিল। বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন। আব্বাজান যে শক্তিবর্ধক হালুয়া খেতেন তার খানিকটা ঘরে ছিল। আমরা সেটা তাঁর সামনে পেশ করে বললাম, হযরত খেয়ে নিন, দুর্বলতা কাটবে।] হযরত ডাক্তার আবদুল হাই আরেফী ছাহেব রাহ. বললেন, ভাই এই হালুয়া খাওয়া এখন আমার জন্য জায়েয নয়। এখন ওয়ারিসগণ এর মালিক। সমস্ত ওয়ারিসের অনুমতি না নেওয়া পর্যন্ত এটা খাওয়া আমার জন্য হালাল নয়।] আমরা বললাম, ওয়ারিসদের প্রত্যেকেই বালেগ এবং সকলেই এখানে উপস্থিত। সকলেই খুশিমনে অনুমতি দিয়েছে। সুতরাং আপনি খেতে পারেন, কোনো সমস্যা নেই। অবশেষে তিনি খেলেন।’ (ইসলাহী খুতুবাত, খণ্ড ১১, পৃষ্ঠা ২৭১-২৭২)
২. ঘরের আসবাবপত্র
ঘরের আসবাবপত্রের মধ্যে যেসব জিনিস মায়্যেতের মালিকানাধীন ছিল সব মিরাসের অন্তভুর্ক্ত হবে।
৩. হেবা বা দানের মাধ্যমে প্রাপ্ত যেসব জিনিস ইনতিকালের আগে মায়্যেতের কবজায় এসেছে।
৪. উপার্জনের সরঞ্জাম
মায়্যেতের উপার্জনের সকল সরঞ্জাম, যেগুলো তার মালিকানাধীন ছিল।
৫. স্ত্রীর মোহর
মায়্যেত মহিলা হলে তার প্রাপ্য মোহর তার মিরাসের অংশ হবে। চাই সেটা অনাদায়ী হোক কিংবা এমন আদায়কৃত, যেটা আরেকজনের কবজায় রয়েছে।
৬. জমি-জমা ও ঘর-বাড়ি
এটা তো সকলেরই জানা যে, মৃতব্যক্তির সমস্ত জমি-জমা (চাষের জমি হোক বা ভিটেমাটি, আবাদি হোক বা অনাবাদী) এবং সমস্ত ঘর-বাড়ি, প্লট-ফ্ল্যাট সবকিছু মিরাসের অন্তভুর্ক্ত। যেটা নিজের নামে ক্রয় করেছে আর যেটা কোনো কারণবশত অন্যের নামে ক্রয় করেছে সব এর অন্তভুর্ক্ত। কোনো কারণ বশতঃ কাগজে অন্য কারো নাম লেখার দ্বারা সেই জিনিস তার হয়ে যায় না।
মৃতব্যক্তি জীবদ্দশায় কোনো জমি বা বাড়ি কাউকে হেবা বা দান করেছিল; তবে ওফাতের আগে দখল বুঝিয়ে দিয়ে যায়নি এবং সেও বুঝে নেয়নি; তাহলে এটাও মিরাসের অন্তভুর্ক্ত হবে। কবজা বা দখল হস্তান্তর করা ব্যতীত কেবল হেবা দ্বারা ওই জিনিসের মালিক হয়ে যায় না।
৭. জমানো অর্থ-কড়ি
ব্যাংকে জমানো টাকা-পয়সা এবং কোম্পানি বা ব্যবসায় লাগানো পুঁজি সবকিছু মিরাসের অংশ।
৮. মায়্যেতের পাওনাসমূহ
মানুষের কাছে মৃতব্যক্তির যত পাওনা আছে সব মিরাসের অংশ। যখন যেটুকু উসূল হবে সেটা ওয়ারিসদের মধ্যে হিস্যা অনুযায়ী বণ্টন হতে থাকবে।
৯. ধার বা ভাড়া দেওয়া জিনিসপত্র
মায়্যেত নিজের কোনো জিনিস কাউকে ভাড়া বা ধার দিয়ে থাকলে সেটাও মিরাসের মধ্যে গণ্য হবে।
১০. কপিরাইট
কোনো বইয়ের রচনা ও প্রকাশনা স্বত্ব, তেমনিভাবে কোনো কিছুর উদ্ভাবন বা আবিষ্কারের স্বত্ব এবং এধরনের আরো যেসব অধিকার শরীয়তের দৃষ্টিতে সম্পদ হিসেবে বিবেচিত সেগুলোর সবই মিরাসের অন্তভুর্ক্ত হবে।
১১. মৃত আত্মীয়দের থেকে পাওয়া মিরাসের অংশ
মায়্যেতের জীবদ্দশায় যেসব আত্মীয়ের ওয়ারিস হয়েছিল, যদি তার জীবদ্দশায় তাদের মিরাস থেকে আপন হিস্যা নাও পায় তবু সেটা তার হক। যখনই উসূল হবে, সেটা মায়্যেতের মিরাসের অংশ হয়ে যাবে এবং তাতে ওয়ারিসদের হক সাব্যস্ত হবে।
১২. সরকার বা কোম্পানি থেকে প্রাপ্ত ফান্ড
চাকরিজীবীদেরকে রিটায়ারমেন্ট বা ওফাতের পর যে অর্থ প্রদান করা হয়, প্রভিডেন্ট ফান্ড হিসেবে কিংবা অন্য কোনো ফান্ড হিসেবে, সেটাও মিরাসের অংশ।
অবশ্য যে অর্থ নিয়ম অনুযায়ী চাকরিজীবীর কোনো আত্মীয়কে নির্দিষ্ট করে প্রদান করা হয় সেটা ঐ আত্মীয়ের ব্যক্তিগত মালিকানা; সেটা মিরাসের অংশ হবে না। উদাহরণস্বরূপ মরহুমের স্ত্রীর জন্য জারীকৃত পেনশন, সন্তানদের শিক্ষাভাতা, ঘর বা চিকিৎসা সংক্রান্ত সুযোগ-সুবিধা ইত্যাদি।
মোটকথা, মায়্যেত যা কিছু রেখে গেছে তার সবই মিরাসের অন্তভুর্ক্ত হবে।
নোট :
অবশ্য লক্ষ রাখা জরুরি, মৃতব্যক্তির কাছে কারো আমানত রাখা আছে কি না কিংবা মৃতব্যক্তি কারো কোনো জিনিস ধার এনেছিল কি না অথবা কারো কোনো জিনিস অন্যায়ভাবে দখল করে রেখেছিল কি না- তা খেয়াল রাখতে হবে। এগুলো কোনোভাবেই মিরাসের অংশ নয়। এগুলোকে মিরাস ভেবে বণ্টন করা হারাম। বণ্টন করে দিলেও ওয়ারিসরা এসবের মালিক হবে না।
ইসলামী শরীয়তের অকাট্য বিধান হল- অবৈধভাবে দখলকৃত জিনিস হাত বদলের কারণে পরবর্তী ব্যক্তি তার মালিক হয়ে যায় না।
এমনিভাবে মৃতব্যক্তির রেখে যাওয়া টাকা-পয়সা, জায়গা-জমি ও ঘর-বাড়ির মধ্যে কোনো জিনিস যদি এমন হয়, যার ব্যাপারে নিশ্চিতভাবে জানা গেছে যে, এটা হারামভাবে উপার্জন করা হয়েছে তাহলে সেটাও মিরাসের অংশ হবে না। সেটার মালিকের পরিচয় জানা গেলে তাকে ফেরত দিতে হবে। মালিকের পরিচয় না জানা গেলে সওয়াবের নিয়ত ছাড়া সদকা গ্রহণের উপযুক্ত ব্যক্তিদেরকে সদকা করে দিতে হবে। এমন হারাম জিনিস বণ্টন হয়ে গেলে যার ভাগে যেটুকু পড়েছে সেটা মালিকের কাছে ফিরিয়ে দেবে (মালিক জানা থাকলে) নতুবা সওয়াবের নিয়ত ছাড়া সদকা করে দেবে।
ইসলামী শরীয়তের অকাট্য বিধান হল- শুধু হাত বদলের দ্বারা হারাম জিনিস হালাল হয়ে যায় না।
মিরাস বণ্টন না করার ক্ষতিসমূহ
মিরাস বণ্টন না করা বা বণ্টনে বিলম্ব করার মাঝে অনেক ক্ষতি। এই এক গুনাহ অনেক গুনাহের জন্ম দেয়। নিচের বিষয়গুলো নিয়ে ধীর-স্থিরভাবে চিন্তা করুন-
এক. বণ্টনের আগে মিরাসের সম্পদ মুশা‘ (مُشاع)-এর অন্তভুর্ক্ত
মুশা‘ শরীকী সম্পত্তির একটি প্রকার। যে সম্পদে একাধিক ব্যক্তি শরীক তবে প্রত্যেকের অংশ আলাদাভাবে চিহ্নিত নয়, এরূপ সম্পদকে মুশা‘ (مُشاع) বলে।
ব্যক্তির ইনতিকালের সঙ্গে সঙ্গে তার সকল সহায়-সম্পত্তি, আসবাবপত্র ও জমিজমা সবকিছু থেকে তার মালিকানা শেষ হয়ে যায়। এখন এর সঙ্গে তার সমস্ত ওয়ারিসের হক যুক্ত হয়ে গেছে। সেজন্য যতক্ষণ শরীয়তের বিধান মতো এর বণ্টন না হবে, সেটা মুশা‘-এর অন্তভুর্ক্ত থাকবে। আর মুশা‘-এর বৈশিষ্ট্য হল, এর প্রত্যেক অংশে প্রত্যেক মালিকের হিস্যা রয়েছে। সেজন্য মুশা‘ সম্পত্তি থেকে উপকৃত হওয়ার জন্য শর্ত হল, সেটা বণ্টন করে প্রত্যেকের হক ও হিস্যা নির্ধারিত হয়ে যাওয়া বা সব শরীকের স্বতঃস্ফূর্ত অনুমতি লাভ করা। অন্যথায় যদি কেউ তা থেকে নিজের অংশ অনুপাতেও ফায়দা গ্রহণ করে তবু সেটা নাজায়েয হবে। কারণ প্রত্যেকের অংশ নির্দিষ্ট না হওয়া পর্যন্ত এই সম্পদ বা জায়গার প্রত্যেক অংশে প্রত্যেকের হিস্যা রয়েছে।
শরীয়তের এই বিধান জেনে গেলে ওই অজ্ঞতাও ইনশাআল্লাহ দূর হয়ে যাবে, যেটা মানুষের মধ্যে ব্যাপক হয়ে আছে।
ওয়ারিসদের মধ্যে যার দখলে মায়্যেতের যে জিনিস থাকে সে সেটাকে এই বাহানায় ব্যবহার করতে থাকে যে, মিরাসে তার অংশ রয়েছে। মনে রাখবেন, এই অজুহাতে মিরাসের কোনো অংশ কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির জন্য নির্ধারিত হয়ে যায় না। সেজন্য সবার অংশ ঠিক না করে শুধু ছুতো বের করে এক-দুই ব্যক্তির জন্য সম্পূর্ণ মিরাস বা তার কোনো অংশ ব্যবহার করা বা দখলে রাখা জায়েয নয়। এই গুনাহ থেকে বাঁচার আসল পন্থা হল, অনতিবিলম্বে মিরাস বণ্টন করে ফেলবে। মিরাস বণ্টনে বিলম্ব করা শরীয়তের দৃষ্টিতে জায়েয নয়।২
দুই. এই সম্পদ যাকাত থেকে দূরে রাখা হচ্ছে কেন?
অনেক সময় ওয়ারিসদের সবাই বা তাদের কেউ কেউ নেসাবের মালিক হয়ে থাকে। মিরাস ভাগ হবার পর তার হিস্যায় যা কিছু আসবে সে সেটারও যাকাত আদায় করবে। কখনো এমন হয় যে, মিরাসের অংশই এত অধিক হয় যে, শুধু সেটাই নেসাব পরিমাণ হয়ে যায়। মিরাস বণ্টন হয়ে হিস্যা হকদারের কাছে পৌঁছলেই তো সে তার যাকাত আদায় করবে; কিন্তু বণ্টনের বিলম্বের কারণে এধরনের শরীকী সম্পদের যাকাতের ব্যাপারে কম মানুষই ভাবেন।
তিন. মিরাস সম্পর্কিত বিষয়গুলো কে সামলাবে?
যতদিন মরহুম/মরহুমা জীবিত ছিলেন ততদিন তো তিনি নিজেই নিজের বিষয়গুলো দেখাশোনা করতেন। তার ইনতিকালে এখন এগুলো কে দেখাশোনা করবে? শুধু একটি দৃষ্টান্তের মাধ্যমেই ইনশাআল্লাহ বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে। মনে করুন, মরহুমের এক বা একাধিক বাড়ি ভাড়া দেয়া আছে। তার ইনতিকালের সাথে সাথেই এই ভাড়া-চুক্তি শেষ হয়ে গেছে। এখন ওয়ারিসরা এই বিষয়টি দেখাশোনা করবে। বণ্টন হয়ে গেলে প্রত্যেকে নিজের অংশ ভাড়া দেবে; আগের ব্যক্তির কাছেও দিতে পারে কিংবা অন্য কারো কাছে। আবার চাইলে অন্য কোনোভাবেও সেটা ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু বণ্টন না হওয়া অবস্থায় ওয়ারিসদের কোনো একজন যদি নিজের পক্ষ থেকে পূর্বের ভাড়া চুক্তি বহাল রাখে কিংবা নতুন কারো কাছে ভাড়া দেয় তাহলে এটা কীসের ভিত্তিতে করা হল? এই ঘর/ঘরগুলোর মধ্যে তো অনেক মানুষের হক রয়েছে। সে একা কীভাবে এটাকে ভাড়া দিয়ে দিচ্ছে এবং ভাড়া উসূল করছে? এখন যদি সে ভাড়ার অর্থ খরচ না করে সংরক্ষণই করে রাখে তবু শরীয়তের দৃষ্টিতে এটা ‘ফুযূলীর কাজ’।৩ আর ফুযূলীর কাজটা মৌলিকভাবে আপত্তিকর। তা যথা নিয়মে অনুমোদন না পেলে মওকুফ হিসেবে গণ্য হবে। যদি সে ভাড়া দেয়ার ক্ষেত্রে এবং ভাড়ার অর্থের মাঝে কোনো খেয়ানত করে তাহলে তো সেটা স্পষ্ট খেয়ানত, আত্মসাৎ ও যুলুম।
মোটকথা, সকল শরীকের শরয়ী অনুমতি ব্যতীত তাদের এক বা একাধিক ব্যক্তি যদি মিরাসের মধ্যে কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ করে তাহলে সেটা ‘ফুযূলী’র কাজ বা আত্মসাৎ। আর এটা মিরাস বণ্টনে বিলম্ব করার অতি সাধারণ একটি ক্ষতি।
কেউ এখানে এই অজুহাত বের করতে পারে যে, ওয়ারিসদের মধ্যে যে ব্যক্তি মরহুম বা মরহুমার জীবদ্দশায় তার প্রতিনিধি হিসেবে এসব বিষয় আঞ্জাম দিতেন তিনি এখনও এসব বিষয় আঞ্জাম দেবেন। একথা এজন্য সঠিক নয় যে, মরহুম বা মরহুমার ইনতিকালের পর তার প্রতিনিধিত্বও শেষ হয়ে গেছে। অতএব এখন যতক্ষণ পর্যন্ত মিরাস বণ্টন না হবে, কিংবা কমপক্ষে সকলের ঐকমত্যে ও সন্তুষ্টিতে শরীয়তের বিধান মোতাবেক বিষয়গুলো দেখাশোনার যিম্মাদার নির্ধারণ না হবে, কিংবা যিম্মাদারি বণ্টন না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত মিরাসের কোনো অংশে কেউ হস্তক্ষেপ করলে সেটা হয়ত ফুযূলীর হস্তক্ষেপ হবে, নতুবা সরাসরি আত্মসাৎ, খেয়ানত ও যুলুম হবে।
চার. মিরাসের সম্পদে ব্যবসা বা চাষাবাদের মাধ্যমে যা যুক্ত হচ্ছে সেটাকে অপবিত্র কেন বানানো হচ্ছে?
সম্পূর্ণ মিরাস বা তার কোনো অংশে যদি কোনো ওয়ারিস আত্মসাৎমূলক হস্তক্ষেপ করে এবং সেটাকে ব্যবসা বা চাষাবাদে লাগিয়ে কিংবা অন্য কোনো পন্থায় ব্যবহার করে উপার্জন করে তাহলে এই উপার্জন নিঃসন্দেহে হারামভাবে হয়েছে। সেটা তার জন্য একেবারে হারাম। সে যদি পরবর্তীতে তা মিরাসের মধ্যে অন্তভুর্ক্ত করে দেয় তাহলে সেই বর্ধিত সম্পদের বিধান কী হবে- সেটা শরীকগণ গ্রহণ করতে পারবে, নাকি সদকা করে দিতে হবে- এই মাসআলা মুফতীয়ানে কেরাম থেকে জেনে নেবেন। আমার উদ্দেশ্য একথা বলা যে, মৌরসী সম্পদ এভাবে ফেলে রাখলে ক্ষতি। আর কেউ আত্মসাৎমূলক হস্তক্ষেপ করলে সেটা হারাম। এই পন্থায় বর্ধিত সম্পদ ভুলভাবে উপার্জিত হওয়ায় তাতে অপবিত্রতা অবশ্যই যুক্ত হয়েছে।
এমনকি আত্মসাৎমূলক হস্তক্ষেপ যদি নাও করে; ভালো উদ্দেশ্যে করে এবং বর্ধিত সম্পত্তি মিরাসের সঙ্গে যুক্ত করে দেয়ার ইচ্ছাও থাকে তবু সেটা শরীয়তের বিধান মোতাবেক অন্য শরীকদের স্বতঃস্ফূর্ত অনুমোদন অনুযায়ী না হওয়ায় তা ফুযূলীর হস্তক্ষেপ বলে ধর্তব্য হবে; ফলে বর্ধিত অংশে কিছু না কিছু অপবিত্রতা এই অবস্থাতেও যুক্ত হবে।
সবচেয়ে বড় কথা হল, এই অন্যায় হস্তক্ষেপের কারণে মিরাসের কোনো অংশ নষ্ট বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার দায় কার উপর বর্তাবে? কোনো সন্দেহ নেই, যার অন্যায় হস্তক্ষেপে এমনটা হয়েছে, দায়টা তার উপরই বর্তাবে এবং সে সমস্ত শরীকের কাছে ঋণগ্রস্ত থাকবে। সম্পূর্ণ বা আংশিক যতটুকু নষ্ট হবে তার ভতুর্কি দেয়া তার উপর ফরয।
পাঁচ. হকদারদের বঞ্চিত রাখার দায় কার উপর বর্তাবে?
বণ্টনে যত বিলম্ব হবে, হকদারকে তার প্রাপ্য হক থেকে বঞ্চিত রাখার গুনাহ তত বাড়তে থাকবে। কাউকে তার হক থেকে বঞ্চিত রাখলে কত যে অনিষ্ট, সে বিষয়ে যথাযথভাবে আমরা কমই ভাবি। চিন্তা করুন-
ক. প্রথম কথা হল, হকদারদের কাছে তাদের হক পৌঁছাতে বিলম্ব করা বা বিলম্বের কারণ হওয়া শরীয়তের দৃষ্টিতে জায়েয নেই।
খ. বিনা কারণে হকদারের কাছে তার হক পৌঁছাতে বিলম্ব করলে তার জন্য কষ্টের কারণ হয়। অথচ কাউকে অন্যায়ভাবে কষ্ট দেয়া কবীরা গুনাহ।
গ. কাউকে তার হক থেকে বঞ্চিত রাখার অর্থ হল, সে সম্পদশালী হওয়া সত্ত্বেও অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকবে। শিক্ষা থেকে বঞ্চিত থাকবে। চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত থাকবে। বিয়ে করা বা বিয়ে দেয়ার প্রয়োজনীয় খরচাদি থেকে বঞ্চিত থাকবে এবং তার উপর অর্পিত অন্যদের হক আদায় করা থেকে বঞ্চিত থাকবে। এছাড়া আরো অনেক জরুরি ও প্রয়োজনীয় বিষয় থেকে বঞ্চিত হবে। এই সবকিছুর দায় তাদের উপর বার্তাবে, যারা মিরাস বণ্টনে বিলম্বের কারণ হবে।
ঘ. কেউ নিজের হিস্যায় প্রাপ্ত সম্পদের মাধ্যমে কোনো নেক কাজ (দান-সদকা, ওয়াকফ বা অন্য কোনো নেক কাজ) করতে চায়। কিন্তু বণ্টনের বিলম্বের কারণে ওই নেক কাজ বিলম্বিত হচ্ছে।
ঙ. মিরাসের অংশীদারদের মধ্যে যদি মায়্যেতের ইনতিকালের সময় থেকেই কোনো এতীম থাকে কিংবা তার ওফাতের কিছুদিন পর তাদের সঙ্গে কোনো এতীম যুক্ত হয় (যেমন মায়্যেতের পর তার কোনো ছেলে মারা গেল। তাহলে তার নাবালেগ সন্তানরা সবাই এতীম, যারা তাদের দাদার মিরাসে অংশীদার হবে।) তাহলে বণ্টনে বিলম্ব করার অর্থ হল, এতীমকে তার হক থেকে বঞ্চিত রাখা। আর সম্পূর্ণ মিরাস বা তার কোনো অংশ যদি কারো ব্যবহারে থাকে, সে এতীমের সম্পদ ব্যবহার করছে। অথচ আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারীমে ইরশাদ করেন-
اِنَّ الَّذِیْنَ یَاْكُلُوْنَ اَمْوَالَ الْیَتٰمٰی ظُلْمًا اِنَّمَا یَاْكُلُوْنَ فِیْ بُطُوْنِهِمْ نَارًا وَ سَیَصْلَوْنَ سَعِیْرًا.
যারা এতীমের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করে তারা তো তাদের উদরে আগুন ভক্ষণ করে; তারা অচিরেই জ্বলন্ত আগুনে জ্বলবে। -সূরা নিসা (৪) : ১০
ছয়. কয়েক প্রজন্মের মিরাস অন্যায়ভাবে ব্যবহার কীভাবে মেনে নেয়া যায়?
মিরাস বণ্টনে অলসতা বা উদাসীনতা করতে করতে কখনো কখনো এমন হয় যে, কয়েক প্রজন্মের মিরাস অবণ্টিত রয়ে যায় কিংবা বণ্টন হলে সেটা হয় যুলুমপূর্ণ। কোনো হকদারকে (যেমন বোন) একেবারে বঞ্চিত করা হয় অথবা কম দেয়া হয়। তাহলে হাতবদল হয়ে যার বা যাদের কাছে এই মিরাস পৌঁছেছে চিন্তা করলে দেখা যাবে, কত প্রজন্মের এবং কত মানুষের অংশ তাদের কাঁধের উপর বোঝা হয়ে আছে। অথচ তারা এই ভেবে খুশী যে, তারা সচ্ছল ও ভালো অবস্থায় আছে!!
সাত. খেয়ানত, আত্মসাৎ ও যুলুম
শেষকথা, এই বণ্টনে বিলম্ব করার উদ্দেশ্য যদি হয় এক বা একাধিক অংশীদার সবসময়ের জন্য বা কয়েক বছরের জন্য কিংবা কয়েক মাসের জন্য অথবা কয়েক দিনের জন্য মিরাস থেকে ফায়দা উঠাতে থাকুক; অন্যরা বঞ্চিত হলে হোক, বিশেষত তাদের মানসিকতা যদি এই হয় যে, কয়েক বছর বা কয়েক মাস বঞ্চিত থাকলে কী সমস্যা- (নাউযু বিল্লাহ) তাহলে তা অনেক ভয়ানক ব্যাপার। এতে সরাসরি তিনটা কাবীরা গুনাহ রয়েছে-
ক. আমানতের খেয়ানত।
খ. অন্যের হক আত্মসাৎ।
গ. যুলুম।
এগুলোর প্রত্যেকটিরই ক্ষতি শুধু আখেরাতেই নয়, বরং দুনিয়াতেও বর্ণনাতীত কঠিন।
বণ্টনে বিলম্ব করার বাহানাসমূহ
উপরের আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, মিরাস বণ্টন না করা বা বণ্টনে বিলম্ব করা কত বড় গুনাহ। এতদসত্ত্বেও অনেক হিলা-বাহানা করে মানুষ বণ্টনে বিলম্ব করতে থাকে। মনে রাখবেন, কোনো ছুতোর আড়ালে এই কাজ জায়েয হয়ে যাবে না; গুনাহ গুনাহই থাকবে। আল্লাহ তাআলা আলিমুল গাইব। তাঁর সকল হুকুম ও সকল ফায়সালা ইনসাফের উপর প্রতিষ্ঠিত। তাঁকে হিলা-বাহানার দ্বারা ধোঁকা দেয়া সম্ভব নয়। সেজন্য আমাদের কর্তব্য- সবধরনের হিলা-বাহানা ছেড়ে শরীয়তের বিধান মোতাবেক যত দ্রুত সম্ভব মিরাস সংশ্লিষ্ট হকগুলো আদায় করা এবং ওয়ারিসদের মধ্যে বণ্টন করে দেয়ার প্রতি পরিপূর্ণ গুরুত্বারোপ করা।
এখানে কিছু বিষয় আলোচনা করা মুনাসিব মনে হচ্ছে, যেগুলোকে সাধারণত হিলা-বাহানা বানিয়ে মিরাস বণ্টনে বিলম্ব করা হয়। এগুলো একদম অনুচিত।
১. মা জীবিত আছেন!
কেউ বলে, মা জীবিত আছেন, এখন কীভাবে আমরা মিরাস বণ্টন করব? অথচ মা’র অস্তিত্ব আল্লাহ তাআলার অনেক বড় নিআমত। তিনি থাকাবস্থায়ই মিরাস বণ্টনের বরকতপূর্ণ কাজ অতি দ্রুত সমাধা করে ফেলা উচিত। অথচ উল্টো এটাকে বণ্টন বিলম্ব করার বাহানা বানায়। শরীয়ত তো যত দ্রুত সম্ভব বণ্টনের হুকুম করে আর আমরা মায়ের ইনতিকাল পর্যন্ত মুলতবি করি; এর কী বৈধতা আছে? এই অজুহাতে টালবাহানা করলে বা বিলম্ব করলে বণ্টনে বিলম্ব করার গুনাহসহ আরো যত গুনাহের জন্ম হয়- এগুলোর মধ্যে কি কোনো কমতি হবে? নিজের মন মতো কোনো কারণ দেখিয়ে কাকে ধোঁকা দিতে চায়?
২. মা বাধা দেন বা বড় ভাই সম্মত নয়!
কেউ বলে, আমরা তো বণ্টন করতে চাই, কিন্ত মা বাধা দেন কিংবা আমাদের বড় ভাই বা অমুক ভাই সম্মত নয়! সবাই বোঝে, এটা কোনো ওযর নয়। শরীয়তের অকাট্য বিধান-
لا طاعة لمخلوق في معصية الله عز وجل.
‘আল্লাহ তাআলার অবাধ্য হয়ে কারো আনুগত্য করা হারাম।’
৩. জায়গা-জমি বণ্টনযোগ্য নয়
কখনো বলে, মিরাস এত ছোট একটা ঘর যে, সেটা শরীকদের মধ্যে ভাগ করে দিলে আর কাজে লাগবে না। এটাও ধোঁকা। কারণ শরীয়ত বাহ্যিকভাবে বণ্টনযোগ্য নয়, এমন জিনিস কীভাবে বণ্টন করবে, তার বিধানও দিয়েছে, যা ফিকহ-ফতোয়ার কিতাবসমূহে কিসমা অধ্যায় (كتاب القسمة) ও তাখারুজ পরিচ্ছেদ (فصل في التخارج)-এর অধীনে শরীয়তের দলীলসহ উল্লেখ আছে। এসব বিধান জেনে সে অনুযায়ী আমল করা ফরয। পুরো মিরাস বা মিরাসের কোনো অংশ অবণ্টনযোগ্য হওয়াকে বণ্টন না করা বা বিলম্ব করার ছুতো বানানো ঠিক নয়। এটুকু তো সবাই বোঝে যে, অবণ্টনীয় জিনিসের ন্যায্য দাম নির্ধারণ করে তার মূল্য সবার মধ্যে বণ্টন করে দেয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে একটি আশ্চর্যজনক ঘটনাও দেখার সুযোগ হয়েছিল। পিতার ইনতিকালের পর ভাইয়েরা নিজেদের অংশ তো বণ্টন করেছে, কিন্তু বোনদেরকে হিস্যা বুঝিয়ে দেয়নি। এক বোন বলল, আমার অংশ মসজিদের (বাড়ির সামনে অবস্থিত মসজিদ) জন্য ওয়াকফ করে দিলাম। তখন এক ভাই বলল, তোমার অংশ তো পুকুরেও আছে, হাম্মামেও আছে; এখন সেটা মসজিদের জন্য কীভাবে দেবে!! চিন্তা করুন, মানুষ অন্যের হক আদায় না করার জন্য কত আশ্চর্যজনক বাতিল ব্যাখ্যা দাঁড় করায়। সেই বেচারীর অংশ অন্যায়ভাবে ব্যবহার করছে- এতে কোনো সমস্যা নেই। মসজিদের জন্য দেয়ার কথা উঠেছে; তাই এখন যত হিলা-বাহানা!
৪. জায়গা-জমি নিয়ে মামলা চলছে
এটাও বাহানা। কারণ জমিতে বাস্তবেই যদি অন্যের হক থাকে, সেটা আদায় করা ফরয। আর মোকদ্দমা যদি যুলুমের কারণে হয় এবং বাস্তবেই তা বণ্টনে প্রতিবন্ধক হয় তাহলে সবাই মিলে এ ব্যাপারে পরামর্শ করে ও চিন্তা-ভাবনা করে মোকদ্দমার ফয়সালা করাতে হবে; চুপচাপ বসে থাকার কী অর্থ?
এটাও অবাক করা বিষয় যে, মিরাসের জায়গা-জমি এক বা একাধিক ওয়ারিসের দখলে বা ব্যবহারে থাকবে- এক্ষেত্রে মোকদ্দমা প্রতিবন্ধক নয়; কিন্তু কোনো হকদার যখন নিজের অংশ চায় তখন মোকদ্দমা প্রতিবন্ধক হয়ে যায়। এটা তামাশা নয় তো কী?
৫. সকল অংশীদার বণ্টন করতে চায় না
এটাও মিথ্যা অজুহাত। কারণ কেউ বণ্টনের দাবি না করলেও বণ্টন করা জরুরি। আর একজনও যদি দাবি করে তখন বণ্টন করা তো আরো বেশি জরুরি হয়ে যায়; কারো না চাওয়ার কারণে বণ্টনে বিলম্ব করা জায়েয নয়।
৬. আরো কিছু বাহানা
কখনো বলে, ‘কোনো কোনো ওয়ারিস ছোট; সেজন্য এখন বণ্টন করা মুনাসিব নয়। তারা বড় হোক, শিক্ষা-দীক্ষা পূর্ণ হোক এরপর বণ্টন করব।’
‘কোনো কোনো ভাই-বোনের বিয়ে হয়নি। তাদের বিয়ে হলে পরে বণ্টন করব।’ এটাও নিছক বাহানা। এ কারণে মিরাস বণ্টনে বিলম্ব করা জায়েয নয়।
কেউ বলে, ‘কী জিনিসই বা রেখে গেছে। এগুলো ভাগ করে দিলে প্রত্যেকের অংশে কতটুকুই বা পড়বে’। মনে রাখবেন, এটাও নিছক বাহানা । যদি প্রত্যেক শরীক এক টাকা বা আট আনা করে পায় তাহলে সেটাও তাদের হক। ভাগ করে প্রত্যেককে তাদের অংশ দিয়ে দেয়া জরুরি।
কিছু লোক তো এমন, যাদের কাছে মিথ্যা অজুহাতও নেই। তখন তারা এই বলে যে, ওয়ারিসরা সবাই সচ্ছল। কিংবা অমুক অমুক সচ্ছল। তাদেরকে মিরাসের অংশ দেয়ার প্রয়োজন নেই। অথবা বলে, এই মাত্র বাবার/মা’র/ভাইয়ের/চাচার ইনতিকাল হল। এখনই মিরাস বণ্টনে বসে গেলে মানুষ কী বলবে?
কে না বোঝে, এগুলো-
عذر گناہ بدتر از گناہ.
(গুনাহের অজুহাত দাঁড় করানো গুনাহের চেয়েও জঘন্য)-এর অন্তভুর্ক্ত। শরীয়তের হুকুম জানার পর এ ধরনের অজুহাতের আশ্রয় নেয়া স্পষ্ট হারাম। ‘লোকে মন্দ বলবে’- এ কারণে শরীয়তের বিধান বাস্তবায়নে বিলম্ব করা জায়েয নয়। তেমনিভাবে ‘সে তো সচ্ছল’ একথা বলে শরীয়ত-নির্ধারিত হক থেকে কাউকে বঞ্চিত রাখাও জায়েয নয়।
শরীয়তের দৃষ্টিতে মিরাস বণ্টনে বিলম্ব করার সুযোগ যে নেই এর একটি স্পষ্ট প্রমাণ হল, বিলম্বের যে দু-একটি কারণ বাহ্যিকভাবে যুক্তিসঙ্গত মনে হয় সেগুলোর জন্যও শরীয়ত বণ্টনে বিলম্ব করার ব্যাপক অনুমতি দেয়নি। উদাহরণস্বরূপ একটি ওযর এই হতে পারে, মরহুম ইনতিকালের সময় তার স্ত্রীর গর্ভে সন্তান রেখে গেছেন। মিরাসের মধ্যে এই বাচ্চারও অংশ রয়েছে। সে জীবিত প্রসব হলে মিরাসের অংশ পাবে। এখন প্রশ্ন হল, এই বাচ্চা জীবিত প্রসব হবে, নাকি মৃত? ছেলে হবে নাকি মেয়ে? এ বিষয়টি স্পষ্ট হওয়ার আগে অংশীদারদের হিস্যা নির্ধারণ করা কঠিন। এই অবস্থায় বাহ্যিকভাবে বণ্টনে বিলম্ব করার পরামর্শ দেয়া উচিত মনে হয়। অথচ মাসআলা কিন্তু ঢালাওভাবে এমন নয়। এই মাসআলারও বিভিন্ন সুরতে বণ্টনে বিলম্ব না করারই হুকুম। তবে তার পদ্ধতি কী হবে সেটি মুফতীয়ানে কেরাম থেকে জেনে নিতে হবে। ফিকহ-ফাতাওয়ার কিতাবে এ সংক্রান্ত মাসআলাগুলো ফাসলুন ফিল হামলি এবং কিতাবুল কিসমাতে বর্ণিত আছে।
এমনিভাবে একটি ওযর এই হতে পারে, মরহুমের স্ত্রীর ইদ্দত তো ঐ বাড়িতেই পালন করতে হবে, যেখানে তিনি স্বামীর জীবদ্দশায় থাকতেন। সেই ঘর যদি স্বামীর মালিকানাধীন হয় তাহলে ওই ঘরও তো মিরাসের অংশ। অতএব অন্তত ঐ ঘরের বণ্টন তো নিঃসন্দেহে ইদ্দত পুরো না হওয়া পর্যন্ত বিলম্ব করতে হবে। আসলে আমরা জরুরি মাসআলাগুলো জানি না এবং জানার চেষ্টাও করি না। নিশ্চিতভাবে জেনে রাখুন, এই অবস্থাতেও বিধান হল, সেই ঘরে স্ত্রীর যেটুকু অংশ আছে (কোনো অবস্থায় এক-চতুর্থাংশ আর কোনো অবস্থায় এক-অষ্টমাংশ) সেটা যদি তার অবস্থানের জন্য যথেষ্ট হয় তাহলে ওই ঘরেই ইদ্দত পুরো করবে। স্পষ্ট কথা, এ হালতে তার অবস্থানের নিমিত্তে ইদ্দত শেষ হওয়া অবধি বণ্টনে বিলম্ব করার কোনো প্রয়োজন নেই। কিন্তু ঘরের মাঝে তার অংশটুকু যদি তার অবস্থানের জন্য যথেষ্ট না হয় তাহলে সকলের সন্তুষ্টিক্রমেই সে সেখানে ইদ্দত পালন করবে। যদি হকদারগণ আপত্তি জানায় তাহলে মহিলার উচিত- অন্যত্র গিয়ে ইদ্দত পূর্ণ করা। কিতাবুল আছলে আছে-
ولو كان المنزل لزوجها فكان نصيبها منه لا يكفيها، وأخرجها أهل المنزل، فهي في سعةٍ من الخروج.
(কিতাবুল আছল, খ. ৪, পৃ. ৪০৭)
ইমাম সারাখসী রাহ. মাবসূতে লেখেন-
وَإِنْ كَانَتْ فِي مَنْزِلِ زَوْجِهَا فَمَاتَ الزّوْجُ إنْ كَانَ نَصِيبُهَا مِنْ ذَلِكَ يَكْفِيهَا فَعَلَيْهَا أَنْ تَسْكُنَ فِي نَصِيبِهَا فِي الْعِدّةِ … وَإِنْ كَانَ نَصِيبُهَا لَا يَكْفِيهَا فَإِنْ رَضِيَ وَرَثَةُ الزّوْجِ أَنْ تَسْكُنَ فِيهِ سَكَنَتْ وَإِنْ أَبَوْا كَانَتْ فِي سَعَةٍ مِنْ التّحَوّلِ لِلْعُذْرِ.
(মাবসূত, শামসুল আইম্মা সারাখসী, খ. ৬, পৃ. ৩৪)
আমাদের সমাজে মিরাস বণ্টন সংক্রান্ত আরো অনেক অপরাধ, নাজায়েয চিন্তা ও প্রথা প্রচলিত আছে। এগুলোর সংশোধন করা ফরয। আলহামদু লিল্লাহ উলামায়ে কেরাম এসব বিষয়ে কমবেশি সতর্কও করছেন। হায়াতে থাকলে আরেক সংখ্যায় আরো কিছু বিষয় পেশ করার ইচ্ছা আছে। অবশ্য এখানে উসতাযে মুহতারাম হযরত মাওলানা মুফতী আবদুর রউফ সাখখারবী দামাত বারাকাতুহুমের পুস্তিকা থেকে দুটি ঘটনা উদ্ধৃত করছি। এর দ্বারা মিরাস বণ্টনের বিষয়ে আমাদের বুযুর্গগণ কত গুরুত্ব দিতেন সেটাও সামনে আসবে।
মুফতী ছাহেব ‘তাকসীমে ওয়ারাসাত কী আহাম্মিয়াত’ পুস্তিকায় লেখেন- ‘আমার দাদা মুহতারাম হযরত মাওলানা আবদুল আযীয ছাহেব রাহ. হযরত থানভী রাহ.-এর হাতে বাইআত ছিলেন এবং হযরত মাওলানা খায়ের মুহাম্মাদ ছাহেব রাহ.-এর খলীফায়ে মুজায ছিলেন। হযরত থানভী রাহ.-এর তালীম-তারবিয়তের একটি উজ্জ্বল বৈশিষ্ট্য এই ছিল, তাঁর নিকট বান্দার হক আদায় করা ও করানোর প্রতি অনেক গুরুত্ব ছিল। এ বিষয়ে তিনি অনেক তাকীদ করতেন।…
যেহেতু মিরাস বণ্টনও বান্দার হকের অন্তভুর্ক্ত সেহেতু হযরত থানভী রাহ.-এর মুরীদগণের মধ্যে এ বিষয়টিরও অনেক গুরুত্ব ছিল। সেজন্যই আমাদের দাদা হযরত মাওলানা আবদুল আযীয ছাহেব রাহ.-এর মাঝেও মিরাস বণ্টনের বিষয়ে অনেক চিন্তা-ফিকির দেখা যেত। (এটা মূলত শরীয়ত ও সুন্নতের অনুসারী সকল বুযুর্গ ও তাঁদের অনুসারীদের বৈশিষ্ট্য। যার মধ্যে এর গুরুত্ব থাকবে না, সে কীভাবে অনুসরণীয় হতে পারে?) আমার দাদা রাহ.-এর কাছে যে মিরাস পৌঁছেছিল সেটা উপরের কয়েক ধাপ পর্যন্ত বণ্টিত হয়নি। এ বিষয়ে তাঁর অনেক দুশ্চিন্তা হল- এই মালের হকদার ও ওয়ারিস তো অনেক। কারণ এটা কয়েক প্রজন্ম ধরে অবণ্টিত রয়ে গেছে। সেজন্য দূর-দূরান্তের ওয়ারিসদের খুঁজে বের করেন এবং তাদের প্রত্যেকের অংশ আলাদা করেন। সকলের নামে খাম বানিয়ে সেগুলোতে তাদের অংশ রাখেন। সময়ের বিবেচনায় কোনো খামে দুই আনা, কোনোটাতে চার আনা, কোনোটাতে আট আনা। আবার কোনোটাতে এক রুপি ও কোনোটাতে দুই রুপি। এরপর ওয়ারিসদের খোঁজ করে তাদের কাছে তাদের অংশ পৌঁছে দেন। স্পষ্ট, দুই আনা, চার আনা পৌঁছানো কত কঠিন কাজ। কিন্তু এটা সেই মানুষই করতে পারেন, যার অন্তরে আল্লাহর ভয় আছে। এদিকে আমরা লাখ লাখ রুপি অন্যায়ভাবে খেয়ে বসে আছি, কোনো পারোয়া নেই অথচ ওদিকে দুই দুই আনা পৌঁছানোর জন্য ফিকির হচ্ছে। আল্লাহর ভয় থাকলে দুই আনা পৌঁছানো সহজ, নতুবা লাখ লাখ রুপি খেয়ে ফেললেও কোনো পরোয়া হয় না।
আমার দাদা রাহ.-এর আরেকটি অভ্যাস ছিল। বংশের কেউ ইনতিকাল করলে দাফনের পর কবরস্তান থেকে সোজা মায়্যেতের ঘরে চলে যেতেন এবং দরজার বাইরে বসে পড়তেন। তখন মানুষের কাছে খুব বেশি অর্থ-সম্পদ থাকত না। তিনি ঘরের লোকদের বলতেন, মায়্যেত যা কিছু রেখে গেছেন বাইরে নিয়ে আসো, আমি সেগুলো ওয়ারিসদের মধ্যে বণ্টন করে দেব। ঘরের লোকেরা মায়্যেতের যা কিছু থাকত সেগুলো বাইরে পাঠিয়ে দিত। হযরত দাদাজান মরহুম তখনই সেখানে বসে মিরাস বণ্টন করে তারপর ঘরে যেতেন। আসল পদ্ধতি এটাই- কাফন-দাফনের পর প্রথম কাজ হল, যত দ্রুত সম্ভব মৃতব্যক্তির মিরাস বণ্টন করে ফেলা এবং এতে বিলম্ব না করা।’ (তাকসীমে ওয়ারাসাত কী আহাম্মিয়াত, পৃ. ১৮৫-১৮৭)
هذا، وصلى الله تعالى وبارك وسلم، على نبينا خاتم النبيين، ورحمة للعالمين، وعلى آله وأصحابه أجمعين، وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين .
-মুহাম্মাদ আবদুল মালেক
০৭-০৪-১৪৪৩ হিজরী
শনিবার
১. সম্ভবত এই বাড়ি ছাড়া মিরাসের অন্যান্য সম্পত্তি বণ্টন হয়ে গিয়েছিল, এটাই স্বাভাবিক। অবশ্য তখন বিষয়টি জিজ্ঞেস করা হয়ে ওঠেনি।
২. অবশ্য কখনো এমন হয়, সকল ওয়ারিস বালেগ। তারা সকলে খুশিমনে এ বিষয়ে একমত হয়েছে যে, বণ্টনের আগ পর্যন্ত মিরাসের যিম্মাদার হবেন অমুক। তিনি এই দায়িত্ব নির্ধারিত জায়েয নিয়ম অনুযায়ী পালন করবেন। তিনি তার দেখভাল করবেন এবং তা থেকে প্রাপ্ত সমস্ত আয় শরীয়তের বিধান মোতাবেক বণ্টন করবেন। এক্ষেত্রে যদি সকল ওয়ারিসের হকের প্রতি যথাযথ লক্ষ রাখা হয় তাহলে ইনশাআল্লাহ মিরাস বণ্টনে বিলম্ব করার গুনাহ হবে না। তবে শর্ত হল, এই পন্থা সকল ওয়ারিসের ঐকমত্যের ভিত্তিতে ও প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ কোনো ধরনের চাপ ছাড়া খুশিমনে নির্ধারিত হতে হবে।
ওয়ারিসদের কেউ নাবালেগ হলে এই পন্থা তো শুরুতেই অকার্যকর। নাবালেগ অনুমতি দিলেও ঐ পন্থা গ্রহণ করা জায়েয হবে না। তৎক্ষণাৎ বণ্টন করে তার হিস্যা আলাদা করতে হবে।
এমনিভাবে সকল ওয়ারিসের সন্তুষ্টি ও ঐকমত্য ব্যতীত কোনো ওয়ারিস যদি এই পন্থা গ্রহণ করে, সেটা একদম নাজায়েয হবে। এর দ্বারা মিরাস বণ্টনে বিলম্ব করার গুনাহ থেকে বাঁচা যাবে না। সঙ্গে খেয়ানত, আত্মসাৎ ও যুলুমের গুনাহ তো আছেই।
তেমনিভাবে এধরনের পন্থা অবলম্বনের উদ্দেশ্য যদি হয় বণ্টন না করে কাউকে পুরোপুরি বঞ্চিত করা বা কাউকে তার প্রাপ্য অংশের চেয়ে কম দেয়া তাহলে এটাও হারাম।
একইভাবে যদি এই পন্থা এই উদ্দেশ্যে গ্রহণ করা হয় যে, এর দ্বারা মিরাস সংশ্লিষ্ট আরো যেসব হক রয়েছে (যেমন কারো ঋণ বা জায়েয ওসিয়ত) সেগুলোকে এড়ানো, তাহলে সেটাও হারাম।
৩. ফুযূলী বলা হয়, যে অন্যের মালিকানায় তার অনুমতি ছাড়া বা যৌথ মালিকানায় শরীকের অনুমতি ছাড়া তাদের উপকার ভেবে কোনো হস্তক্ষেপ করে। নিজের স্বার্থে এমন করে থাকলে সে সরাসরি গাসিব তথা আত্মসাৎকারী গণ্য হবে।