বিভিন্ন সময়ে হিন্দুস্থানের দালাল বলে ‘উসকানিমূলক বক্তব্য’, ‘বিভিন্ন বিষয়ে কাল্পনিক মতবাদ’, ‘করোনার সঙ্গে কথোপকথন’ বিষয়ে ব্যাখ্যা জানতে মুফতি কাজী ইব্রাহীমকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদে তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি বলে দাবি করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ কারণে তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার প্রস্তুতি চলছে। নথিভুক্ত হওয়ার পর সেই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হবে তাকে।
গতকাল (২৭ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ২টার দিকে রাজধানীর লালমাটিয়ার জাকির হোসেন রোডের বাসা থেকে মুফতি ইব্রাহীমকে আটক করে ডিবির একটি দল।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশের কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ডিবি কার্যালয়ে হেফাজতে নিয়ে মুফতি ইব্রাহীমকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। বিভিন্ন সময় তিনি করোনা নিয়ে মিথ্যাচার, ধর্মীয় উসকানিমূলক বক্তব্য, বিভিন্ন মাধ্যমে মানুষকে হিন্দুস্থানের দালাল ও ‘র’ এর এজেন্ট বলে আখ্যায়িত করেন।
এসব বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তবে তিনি এসব ব্যাপারে সন্তোষজনক কোনো উত্তর দিতে পারেননি। মূলত তিনি বিতর্কিত ও বিভ্রান্তিকর সব তথ্য ছড়িয়েছেন। যা আইনত অপরাধ। এজন্য তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (উত্তর) যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের তার নিজ কার্যালয়ে ব্রিফিং করেন।
তিনি বলেন, বিভিন্ন মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষকে হিন্দুস্থানের দালাল ও ‘র’ এর (ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা) এজেন্ট বলছেন মুফতি ইব্রাহীম। কারা এই দালাল বা ‘র’ এর এজেন্ট- তাদের পরিচয়সহ বিভিন্ন বিষয় জানতেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
পরে হারুন অর রশীদ জানান, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তার (মুফতি ইব্রাহীম) বিরুদ্ধে মামলা প্রস্তুতি চলছে। বুধবার তাকে আদালতে পাঠানো হবে।
সম্প্রতি জুমার খুতবাহ, ওয়াজ মাহফিল, ইউটিউব চ্যানেল, ফেসবুক আইডি ও পেজে তিনি নানা ধরনের বক্তব্য, তত্ত্ব ও সূত্র দিয়ে আলোচিত-সমালোচিত হন। তার বক্তব্যের অনেক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কয়েক দফা ভাইরাল হয়েছে।
এই আলোচনা সমালোচনার মধ্যেই সোমবার দিবাগত রাত ২টার দিকে রাজধানীর লালমাটিয়ার জাকির হোসেন রোডের বাসা থেকে তাকে আটক করে ডিবির একটি দল। এর আগে সোমবার ফেসবুক লাইভে কাজী ইব্রাহীম বলেন, ‘র’ এর এজেন্ট, গুণ্ডা ডিবি পুলিশ তার বাসা ঘেরাও করেছে। ২০ মিনিটের বেশি সময় লাইভে কথা বলেন মুফতি ইব্রাহীম।
মুফতি কাজী ইব্রাহীম করোনা শুরুর প্রথম দিকে মামুনুল নামের একজনের স্বপ্নে করোনার সঙ্গে সাক্ষাৎকারের বিশাল ফিরিস্তি দেন। সেখানে করোনা কাদের আক্রমণ করবে, কাদের আক্রমণ করবে না- এমন তথ্য দিয়ে নানা কল্পনিকতার গল্প বলেন। তিনি এক বক্তব্যে করোনাভাইরাসের টিকা আবিষ্কারের গাণিতিক সূত্রও দিয়েছিলেন। সেটি হচ্ছে ১.য়৭+৬=১৩ ।
তার এমন বক্তব্যে সামাজিক মাধ্যমে প্রচুর হাস্যরসের সৃষ্টি হয়। তিনি জুমা খুদবায় বিভিন্ন সময় করোনার চিকিৎসা, করোনায় মুসলিমরা আক্রান্ত হবে না, পৃথিবীর সৃষ্টি ও ভৌগলিক বিভিন্ন বিষয়ে মতবাদ দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচিত হয়েছেন। তিনি ‘এন্টারকটিক’ নামে নতুন এক মহাদেশ যেটা নাকি লুকিয়ে রেখেছে বলে মত দেন। ‘হিটলার মারা যাননি’, ‘শেক্সপিয়ারের প্রকৃত নাম শেখ যুবায়ের’ প্রভৃতি বক্তব্য দিয়েও ভাইরাল হন মুফতি ইব্রাহীম।
তার সমালোচিত মতবাদের মধ্যে আরও হলো- করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়ার কারণে নারীর দাঁড়ি গজাচ্ছে, পুরুষের কণ্ঠ পাল্টে নারীকণ্ঠ হচ্ছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, টিকা দেওয়ায় নারীর দাঁড়ি গজাচ্ছে এবং পুরুষের কণ্ঠ পাল্টে যাচ্ছে।