মুসলিম দেশগুলোর বিনিয়োগ পেতে ইসলামি ব্যাংকিং চালু করছে রাশিয়া

রুশ কর্তৃপক্ষ নতুন নন-ক্রেডিট আর্থিক প্রতিষ্ঠান খোলার অনুমোদন দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানগুলো ইসলামি ব্যাংকিংয়ে বিশেষায়িত হবে।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর থেকেই একের পর এক পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় জর্জর রাশিয়া।

চলমান যুদ্ধে রাশিয়াই এখন পর্যন্ত এগিয়ে আছে। আবার নানা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তেল বিক্রি করে ক্ষতি অনেকটাই পুষিয়ে নিচ্ছে মস্কো।

তারপরও এত বেশি সংখ্যক নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বেশ বেকায়দায়ই আছে দেশটি।

এ কারণে বিনিয়োগ টানতে ইসলামি ব্যাংকিং বৈধ করে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে রাশিয়া।

রুশ দৈনিক ‘কমারসেন্ট’-এর বরাত দিয়ে টিআরটি ওয়ার্ল্ড এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, রুশ কর্তৃপক্ষ নতুন নন-ক্রেডিট আর্থিক প্রতিষ্ঠান খোলার অনুমোদন দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানগুলো ইসলামি ব্যাংকিংয়ে বিশেষায়িত হবে। আর এসব প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রক হবে রাশিয়ার সেন্ট্রাল ব্যাংক।

এ উদ্যোগ যত দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়ন করতে চায় মস্কো। সেজন্য ইসলামি ব্যাংকিং নিয়ন্ত্রণ করার জন্য একটি নতুন আইনের খসড়া করছে রাশিয়া।

ইসলামি ব্যাংকিং খাত ক্রমেই বড় হচ্ছে। তাই ইসলামি ব্যাংকিং পরিচালনার আইনি পথ খুলে দিলে মুসলিম দেশগুলো থেকে পশ্চিমা বিনিয়োগ আসতে পারে। সেইসঙ্গে দেশের মুসলিমদেরও সেবা দেয়া যাবে।

‘কমারসেন্ট’ জানিয়েছে, নন-ক্রেডিট ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলো ফাইন্যান্সিং পার্টনারশিপ অরগানাইজেশন (এফপিও) হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এসব প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের শরিয়াহসম্মত পণ্য ও সেবা দেবে।

‘কমারসেন্ট’-এর প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, এফপিওগুলো রাশিয়ার সেন্ট্রাল ব্যাংকের আওতাধীন থাকবে। সেন্ট্রাল ব্যাংক এ ধরনের সমস্ত কোম্পানির রেজিস্টার রাখবে এবং তাদের কার্যক্রমের তদারকি করবে।

আর্থিক বাজার-সংক্রান্ত স্টেট ডুমা কমিটির প্রধান আনাতলি আকসাকভ বলেছেন, নতুন আইনের খসড়াটি চলতি সপ্তাহের শেষ দিকেই অনুমোদনের জন্য রুশ পার্লামেন্ট ডুমা-র লোয়ার হাউসে উঠতে পারে।

উল্লেখ্য, ইসলামি ব্যাংকিং পরিচালিত হয় ধর্মীয় ও নৈতিক নির্দেশনা অনুসারে। ইসলামি ব্যাংকিংয়ে সুদ দেয়া নিষিদ্ধ।

বিশ্বজুড়ে ইসলামি ব্যাংকিং খাতের বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ১৪ শতাংশ। এ খাতের বাজারের আকার আনুমানিক ১ দশমিক ৯৯ ট্রিলিয়ন। আর অ-ইসলামি ব্যাংকিং শিল্পে ইসলামি ব্যাংকিং খাতের হিস্যা ৬ শতাংশ।

ট্রিলিয়ন ডলারের খাত

খসড়া আইন অনুসারে, এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যক্তি ও বৈধ সংস্থার কাছ থেকে তহবিল সংগ্রহ করতে পারে এবং অংশীদারত্বের ভিত্তিতে ইসলামি আইনের নিয়মানুসারে বিভিন্ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে পারে।

খসড়া আইনের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাংক অভ রাশিয়া উদ্ভাবনের জন্য প্রস্তুত—তবে প্রথমে সীমিত পরিসরে নতুন সিস্টেমটি পরীক্ষা করতে চায়।

খসড়া আইনে বলা হয়, ইসলামি আইনে সুদে টাকা ঋণ দেওয়া নিষিদ্ধ। তাই ব্যাংক ও অন্য কোনো ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য দিয়ে এই পরিষেবা দিতে পারে না।

এফপিওগুলো নিম্নলিখিত কার্যক্রম চালাতে পারবে: বৈধ প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের কাছ থেকে ফি না নিয়ে অর্থঋণ প্রদান, কিস্তি বিক্রয় চুক্তি বা লিজ চুক্তি করে বাণিজ্য মধ্যস্থতাকারী হিসেবে তাদের অর্থায়ন করা, অংশীদারত্ব ও নিশ্চয়তা প্রদানের ভিত্তিতে বৈধ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার মূলধনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে উৎপাদন ও বাণিজ্য কার্যক্রমে অর্থায়ন করা।

রাশিয়ার ইসলামি ব্যাংকিং চালুর নতুন আইনের খসড়া প্রণেতারা বলেন, পশ্চিমা আর্থিক বাজারগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার ফলে উদ্ভূত নতুন পরিস্থিতিতে রাশিয়ার নাগরিক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে ইসলামি ব্যাংকিংয়ের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে।

এছাড়া ইসলামি ব্যাংকিং বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা ও বিধিনিষেধ রয়েছে। যেমন ইসলামি আইনে সুদ (রিবা) ও ডেরিভেটিভ সুদের লেনদেন নিষেধ, অনিশ্চয়তা (ঘারার) নিয়ে লেনদেনও নিষেধ। এছাড়া জুয়া, শুকরের মাংস, অ্যালকোহল ইত্যাদিসহ অর্থনীতির নির্দিষ্ট কিছু খাতে অর্থায়নও নিষেধ ইসলামি আইনে।

রাশিয়ায় ইসলামি ব্যাংকিং চালু করার চিন্তা দীর্ঘদিন ধরেই চলছে।

গত বসন্তে সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছিল, ফিনান্সিয়াল মার্কেট-সংক্রান্ত স্টেট ডুমা কমিটি ইসলামি অর্থায়নের উপর একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করবে। সংযুক্ত আরব আমিরাত ও অন্যান্য ইসলামি দেশগুলো থেকে অর্থপ্রবাহকে উৎসাহিত করার জন্য বিভিন্ন আইনে কিছু সুনির্দিষ্ট সংশোধনী আনার কথা ছিল।

২০১৪ সালের নভেম্বরের শেষের দিকে রাশিয়ার সেন্ট্রাল ব্যাংকের প্রধান এলভিরা নাবিউলিনা ফেডারেশন কাউন্সিলে তার বক্তৃতায় বলেছিলেন, ব্যাংক অভ রাশিয়া ইসলামি ব্যাংকিংয়ের জন্য প্রবিধান প্রবর্তনের বিষয়ে সমীক্ষা করছে।

পরবর্তীতে ব্যাংক অভ রাশিয়া মত দেয় যে ধাপে ধাপে অংশীদারত্বে অর্থায়নের ব্যবস্থা তৈরি করা সম্ভব।

নাবিউলিনা বলেছিলেন, ‘এটি অর্থনীতিতে ঋণ প্রদানের বিকাশ এবং আর্থিক খাতের উন্নয়নের জন্য বড় সুযোগ দেবে।’

ইসলামি ব্যাংকিং সম্পদের ৯৩ শতাংশের মালিক কাতার, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত ও পাকিস্তান। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর বাইরে প্রথম ইসলামি ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৪ সালে, যুক্তরাজ্যে।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

ভারতে মুসলিম নির্যাতনের বিবরণ তুলে ধরল ‘নিউইয়র্ক টাইমস’

নূর নিউজ

কুরআন পোড়ানোর প্রতিবাদে সুইডিস ভাষায় ১ লাখ কুরআন ছাপাবে কুয়েত

নূর নিউজ

হামাস ও ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি: ফিলিস্তিনে ‘বিজয়োল্লাস’

আনসারুল হক