প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকারের উন্নয়ন যারা দেখে না, তাদের মনটাই অন্ধ। চোখের অন্ধত্বের চিকিৎসা করা যায়, কিন্তু মনের অন্ধত্ব তো দূর করা যায় না। আগুন দিয়ে যারা মানুষ পোড়ায় তাদের শুধু চোখ না মনই অন্ধকার।
শনিবার (১১ নভেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ উদ্বোধন উপলক্ষ্যে এক সুধী সমাবেশে এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, আমার বাবার বেশিরভাগ সময় কারাগারে থাকতেন, কারাগারে দেখা হতো। কিন্তু যখনই তিনি বাইরে থাকতেন বছরে একবার করে আমাদের শীতকালে কক্সবাজার নিয়ে আসতেন। আমরা যখন কক্সবাজারে আসি তখন এখানে এতো দালানকোঠা ছিল না। সেখানে বেশ কিছু ছোট ছোট কটেজ ছিল। সেই কটেজ ভাড়া করে থাকতো হতো, রান্নাঘর ছিল, নিজেদের রান্না করে খেতে হতো, আমি সেই ৬১ সালের কথা বলছি। তখন থেকে আমরা প্রায় এখানে এসেছি।
বাংলাদেশ গত ১৫ বছরের বদলে গেছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসা মাত্রই আমরা অনেকগুলো উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিই। বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াই, বাংলাদেশের স্বাক্ষরতা হার বাড়াই, দেশের এই রেলপথ থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট, পুল, ব্রিজ, স্কুল, মসজিদ সবকিছুর উন্নয়ন করেছি। যমুনা নদীর ওপর ব্রিজ নির্মান, তার সঙ্গে রেল সংযোগ, গ্যাস পাইপ লাইন, বিদ্যুৎ সংযোগ করে যমুনা সেতু নির্মাণ করে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে আমাদের সংযুক্ত হয়।
তিনি আরও বলেন, রেলকে আমরা গুরুত্ব দিয়েছি যাতে অল্প খরচে সাধারণ মানুষের চলাচল করতে পারে। সেভাবে চিন্তা করি রেলকে আমরা গুরুত্ব দিয়েছি। পাঁচ বছরের মতো ক্ষমতায় ছিলাম। ২০০১ ক্ষমতা হস্তান্তর করি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হয়। আমি গ্যাস বিক্রি করতে রাজি না হওয়ায় আমাকে ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হয়নি, একটা চক্রান্ত করে। তাতে আমার কোনো আফসোস নাই, কারণ আমি বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবের মেয়ে। ক্ষমতার লোভে দেশের সম্পদ কারও হাতে তুলে দিতে আমি রাজি না।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৫ আগস্ট যখন আমার বাবা-মাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়, আমার ছোট বোন রেহানা আর আমি বিদেশে ছিলাম। আমাকে তখন দেশে আসতে দেওয়া হয়নি। আমরা রিফিউজি হিসেবে বিদেশের মাটিতে ছিলাম। ১৯৮১ সালে যখন আমার অবর্তমানে আমাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি করে তখন আমি সিদ্ধান্ত নিই, আমাকে ফিরে আসতে হবে। আমার ছোট ছেলে-মেয়ে। ১০ বছরের ছেলে ৮ বছরের মেয়ে, তাদের বাবা, রেহানার কাছে দিয়ে এসেছিলাম জয়কে। সে দায়িত্ব নিয়েছিল। আমি চলে আসি বাংলার মাটিতে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘কিন্তু আমি জানতাম না, এই দেশে এসে আমি বেঁচে থাকতে পারবো কি না। আমি এমন একটি দেশে এসেছিলাম, যেখানে আমার বিচার পাওয়ার কোনও অধিকার ছিল না। যুদ্ধাপরাধীরা তখন মন্ত্রী। যারা পাকিস্তানের পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশ গিয়েছিল তারাই আবার পাকিস্তানের পাসপোর্ট নিয়ে দেশে ফিরে এসে মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপন করে। সেই ধরনের একটি পরিবেশের মধ্যে আমি ফিরে আসি।’
তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করেছি। বড় বাজেট দিয়ে আমরা আমাদের সক্ষমতা প্রদর্শন করেছি এবং বাস্তবায়নও করেছি। করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে গেছে। আমদানি ব্যয় বেড়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি আছে। এজন্য সবাইকে বলবো, যতটুকু জমি আছে সেখানে কিছু না কিছু চাষাবাদ করুন। নিজের খাদ্য সামগ্রী নিজে উৎপাদন করুন। তাহলে আমরা হতে পারবো স্বনির্ভর।