ঋণ মওকুফের এই পদক্ষেপের ফলে মুদ্রাস্ফীতি বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা।
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে লাখ লাখ সাবেক শিক্ষার্থীদের নেওয়া ঋণ মওকুফের ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ২০২০ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণার সময় শিক্ষার্থীদের নেওয়া ঋণ মওকুফের বিষয়ে জো বাইডেন একটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষার্থেই মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই ঘোষণা।
বুধবার (২৪ আগস্ট) মার্কিন প্রেসিডেন্টের দেওয়া ঘোষণা অনুযায়ী, মার্কিন সরকার ঋণগ্রস্ত সাবেক শিক্ষার্থীদের নেওয়া ১০ হাজার মার্কিন ডলার পর্যন্ত ঋণ মাফ করে দেবে। তবে এক্ষেত্রে যাদের বার্ষিক আয় ১ লাখ ২৫ হাজার ডলারের ওপরে, তারা এ সুবিধার পাবেন না।
সাবেক শিক্ষার্থীদের ঋণ মওকুফের ঘোষণার কারণে আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য কংগ্রেসের নির্বাচনে দলীয় ডেমোক্র্যাটদের সমর্থন বাড়াতে পারে। অন্যদিকে, ঋণ বাতিলের আইনি কর্তৃত্ব মার্কিন প্রেসিডেন্টের আছে নাকি, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মার্কিন কংগ্রেসের কিছু রিপাবলিকান।
তবে ঋণ মওকুফের এই পদক্ষেপের ফলে মুদ্রাস্ফীতি বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের ভাষ্যমতে, ঋণ মওকুফের কারণে শত শত বিলিয়ন ডলার মুক্ত হয়ে যাবে যা দিয়ে বাড়ি কেনা বা অন্যান্য বড় ব্যয়ের দিকে গ্রাহকরা ঝুঁকতে পারে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রে মুদ্রাস্ফীতির লড়াইয়ে একটি নতুন অসমতা সৃষ্টির ঝুঁকি রয়েছে।
বুধবার হোয়াইট হাউসে নিজের বক্তৃতার সময় বাইডেন বলেন, “সেসব পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয়, তাদের জন্যই এ পদক্ষেপ। করোনাভাইরাস মহামারিতে মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ”
তবে জো বাইডেনের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে অনেক সমালোচনাও হচ্ছে। সমোলচকদের দাবি, এই পদক্ষেপের ফলে উচ্চ-আয়ের কোনো পরিবার উপকৃত হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট অবশ্য এ রকম কিছু না হওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে জো বাইডেন বলেন, “শ্রমজীবী মার্কিন এবং মধ্যবিত্তদের সাহায্য করার জন্য আমি কখনোই ক্ষমা চাইব না। বিশেষ করে ধনী মার্কিন এবং বৃহত্তম কর্পোরেশনগুলোর উপকারের জন্য যারা ২ লাখ কোটি মার্কিন ডলার কর ছাড়ের পক্ষে ভোট দিয়েছিল, তাদের কাছে তো নয়ই।”
করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর পর থেকে ঋণগ্রহীতা শিক্ষার্থীদের লেনদেন হিমায়িত অবস্থায় রাখা হয়েছে। অর্থাৎ ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীকে ফেডারেল সরকারের এই ঋণের জন্য কোনো অর্থপ্রদানের প্রয়োজন হচ্ছে না।
যদিও ঋণগ্রহীতা শিক্ষার্থীদের ৫০ হাজার মার্কিন ডলার পর্যন্ত ক্ষমা করার জন্য অনেক ডেমোক্র্যাটই বাইডেনের ওপর চাপ দিচ্ছিলেন। অন্যদিকে, অধিকাংশ রিপাবলিকাই সাবেক শিক্ষার্থীদের নেওয়া ঋণ মওকুফের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ছিলেন। তাদের দাবি, এ পদক্ষেপ অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে লোকেদের উচ্চ আয় উপার্জন করতে সহায়তা করবে।
হোয়াইট হাউসের গার্হস্থ্য নীতি উপদেষ্টা সুসান রাইস সাংবাদিকদের বলেন, “কতজন এ সুবিধার আওতাভুক্ত হতে আবেদন করবে, তার ওপর প্যাকেজের মূল্য নির্ভর করছে। এ কারণে প্রশাসন এখনও প্যাকেজের দাম নির্ধারণ করেনি। তবে এ বছরের ৩০ জুনের পরে নেওয়া ঋণ মওকুফের অযোগ্য।”
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি কারিন জিন-পিয়েরে বলেন, “কোভিড মহামারির মতো জাতীয় জরুরি অবস্থার সময় প্রশাসনের কাছে আইনের অধীনে ঋণ ক্ষমা করার আইনি কর্তৃত্ব রয়েছে।” এর আগে, রিপাবলিকান প্রতিনিধি এলিস স্টেফানিক এই পরিকল্পনাকে বেপরোয়া এবং অবৈধ বলে অ্যাখ্যা দিয়েছিলেন।