ভয়াবহ দাবানলে জ্বলছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির ১২টি অঙ্গরাজ্যের প্রায় ৩০ লাখ একর জায়গা পুড়ছে ৮৫টি দাবানলে। এক কোটিরও বেশি নাগারিক ‘সিদ্ধ’ হচ্ছেন তাপপ্রবাহে এবং তাপ সতর্কতার মধ্যে।
মঙ্গলবার আরও ১৪টি বড় দাবানলের খবর প্রকাশ করেছে কর্তৃপক্ষ। টেক্সাসে সাতটি, আলাস্কায় দুটি, ওয়াশিংটনে দুটি, অ্যারিজোনা, আইডাহো এবং ক্যালিফোর্নিয়ায় একটি।
দেশটিতে বর্তমানে প্রায় ৬৮০০-এর বেশি বন্য এলাকা অগ্নি নির্বাপণকারীর সঙ্গে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সম্মিলিতভাবে কাজ করছেন আগুন নিয়ন্ত্রণে। কিছু কিছু জায়গার তাপমাত্রা পৌঁছাতে পারে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
কর্তৃপক্ষদের মতে, এমন রেকর্ডভাঙা গরম প্রবাহ করতে পারে পরের সপ্তাহ পর্যন্ত। অপরদিকে ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের রাজধানী বোস্টন থেকে পেনসিলভ্যানিয়ার ফিলাডেলফিয়ায় বুধবার তাপমাত্রা ছিল ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ওয়েস্টার্ন সার্ভিস (এনডব্লিউএস) রেড ফ্ল্যাগ জারি করেছে দাবানল সম্ভাব্য এলাকাগুলোতে। টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের উত্তর এবং মধ্যাঞ্চল, দক্ষিণপশ্চিম ওয়াইওমিং, পশ্চিম নেব্রাস্কা, মিসিসিপি ভ্যালির অন্তর্বর্তী। এপ্রিল থেকে প্রায় ৫০০টিরও বেশি দাবানলের শিকার হয়েছে আলাস্কা অঙ্গরাজ্য।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, চলতি ইউরোপের দাবানলের সংখ্যা বাড়তির মুখ দেখবে দিন দিন। ২০৬০ সাল পর্যন্ত আরও ঘনঘন দাবদাহের কবলে পড়বে বিশ্ব। বিশ্ব আবহাওয়া অধিদপ্তর (ডব্লিউইএমও)-এর মতে, অতিমাত্রায় কার্বন নিরসনকারী দেশগুলোর জন্য সতর্কবার্তা হিসাবে কাজ করবে চলমান দাবদাহ। জলবায়ু প্রশমন প্রচেষ্টার স্বতন্ত্র সাফল্য লাভ করলেও নিয়মিত দাবদাহ এবং এর নেতিবাচক প্রভাব চলবে অন্তত ২০৬০ সাল পর্যন্ত।
ডব্লিউইএমও প্রধান পেট্টেরি টালাস জেনেভায় অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা রেকর্ড ভাঙতে শুরু করেছি, ধন্যবাদ জলবায়ু পরিবর্তনকে। ভবিষ্যতে আরও স্বাভাবিক হয়ে আসবে এমন দাবদাহ। তীব্র হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়বে প্রকোপ। তিনি আরও বলেন, নিরসন এখনো বেড়েই চলছে, তাই ২০৬০ সালে এর শেষ দেখা সম্ভব নাকি নিশ্চিত নয়। যদি কিনা নিরসন বৃদ্ধির বাঁক ঘুরিয়ে ফেলা হয়। বিশেষ করে নিরসনকারী বড় এশিয় দেশগুলোতে।
বিশ্ব আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একটি সম্মিলিত সংবাদ সম্মেলনের আলোচ্য বিষয় ছিল ইউরোপের চলমান তীব্র দাবদাহ। এই দাবানলে সাইসাই করে পুড়ছে ব্রিটেনের বন-বনাদি। তাপমাত্রা ছড়িয়েছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও বেশি। শিগগিরই ছড়াতে পারে ফ্র্যান্স, যুক্তরাজ্য এবং সুইজারল্যান্ডে।
ডব্লিইইএমও-এর প্রয়োগ পরিষেবা প্রধান রবার্ট স্টেফানস্কি জানান, পরের সপ্তাহের মাঝামাঝির আগে এই দাবদাহ শেষ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। আমাদের চিন্তার বিষয়, খুব স্বল্প সময়ের ব্যবধানে ভাঙছে এই রেকর্ডগুলো। ২০০৩ সালে দাবদাহে প্রাণ হারান ৭০ হাজারেরও বেশি মানুষ। শুধু তাই নয়, তীব্র গরমে দেখা দিতে পারে হিটস্ট্রোক, হাইপোথার্মিয়ার মতো নানান অসুখ।