যেভাবে রাষ্ট্রপতি হন সাহাবুদ্দীন আহমদ

সাবেক রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ ইন্তেকাল করেছেন।

শনিবার সকালে ঢাকার সিএমএইচ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

মৃত্যুর আগ পর্যন্ত রাজধানী ঢাকার গুলশান-২ নম্বরের ধূসর রঙের একটি বাড়িতে থেকেছেন দুইবারের রাষ্ট্রপতি। বাড়িটির নাম ‘গ্র্যান্ড প্রেসিডেন্ট কনকর্ড’। যদিও মানুষের কাছে এটি প্রেসিডেন্ট হাউস হিসেবে পরিচিত।

২০১৮ সালের ৩০ জানুয়ারি সাহাবুদ্দীন আহমদের সহধর্মিণী আনোয়ারা বেগম মারা যান।

এর পর জীবনের শেষ সময়টুকু ওই বাড়িটির দ্বিতীয় তলার একটি ফ্ল্যাটে ছোট ছেলে সোহেল আহমেদের সঙ্গেই কাটিয়েছেন একসময়ের আলোচিত এ রাষ্ট্রপতি।

যেভাবে রাষ্ট্রপতি হন সাহাবুদ্দীন আহমদ

বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত আইনবিদ ও ৬ষ্ঠ প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ। ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে কর্মজীবন শুরু করা এই ব্যক্তি দুইবার রাষ্ট্রপতির আসনে বসেন।

রাজনীতিক না হয়েও বাংলাদেশের রাজনীতি ও গণতান্ত্রিক ইতিহাসের এক অন্যতম আলোচিত নাম সাহাবুদ্দীন আহমদ। তিনিই বাংলাদেশের প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান।

সাহাবুদ্দিন আহমদের রাজনীতিতে আসাটা কিছুটা নাটকীয়। ১৯৯০ সালের ৫ ডিসেম্বর মওদুদ আহমেদ উপ-রাষ্ট্রপতির পদ থেকে ইস্তফা দিলে সাহাবুদ্দীন উপ-রাষ্ট্রপতির পদে অধিষ্ঠিত হন।

রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলনের মুখে একই বছরের ৬ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ পদত্যাগ করলে বাংলাদেশ অভিভাবকশূন্য হয়ে পড়ে।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের শূন্য রাষ্ট্রপতির পদে এবং নির্বাচন হবার আগ পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানরূপে কে আসীন হবেন তা নিয়ে প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারছিল না।

এক দল অন্য দলের প্রার্থীর প্রতি অনাস্থা পোষণ করছিল। সে সময় প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন সাহাবুদ্দীন।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে যখন বিচারপতি সাহাবুদ্দীনের নাম এল, তখন বিএনপি ও আওয়ামী লীগ দুটি দলই ঐকমত্য পোষণ করে। বিচারপতি সাহাবুদ্দীন-ই একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে পারেন বলে মত দেয় দুই শীর্ষ দল।

সে সময় তিন রাজনৈতিক জোট সর্বসম্মতভাবে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান মনোনীত করে প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীনকে।

অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমেদ। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন তিনি।

তার অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপি বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে।

সাহাবুদ্দীনের শর্ত অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন শেষে তাকে প্রধান বিচারপতি পদে ফিরিয়ে নেয়া হয়। এ জন্য সংসদে সর্বসম্মতভাবে সংবিধানের একাদশ সংশোধনী করা হয়।

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের ৫ম জাতীয় সাধারণ নির্বাচনের পর সাহাবুদ্দীন আবার তার মূল পদ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসেবে যোগদান করেন।

বিচারপতি হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে সাহাবুদ্দীন আহমদকে আবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করে।

সে বছরের ২৩ জুলাই আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পান সাহাবুদ্দীন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফের বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।

বাংলাদেশের সংসদীয় গণতন্ত্রে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা খুবই সীমিত। এর মধ্যেই রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তার সততা এবং প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশের সকল স্তরের মানুষের ভালোবাসা ও সম্মান জয় করেন সাহাবুদ্দীন আহমদ। ২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর রাষ্ট্রপতির পদ হতে অবসর গ্রহণ করেন তিনি।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

ড. ইউনূস আদালতের রায়ে দণ্ডিত, এখানে আওয়ামী লীগের কোন দায় নেই

নূর নিউজ

আমাদের সন্তানদেরকে নাস্তিক বানাতে দিতে পারি না: চরমোনাই পীর

নূর নিউজ

কুরআনী অনুশাসন ছাড়া দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়: আল্লামা বাবুনগরী

আলাউদ্দিন