যে সব খাবার পছন্দ করতেন বিশ্বনবী

যে ক‘টা জিনিস মানুষের মৌলিক প্রয়োজনের অন্তর্ভুক্ত, যেগুলো ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না, খাবার সেসবের মধ্যে প্রধান। একজন সুস্থ বিবেক-সম্পন্ন মানুষ খাবারকে কখনো জীবনের লক্ষ্য বানায় না, বানাতে পারে না, প্রয়োজন হিসেবে গ্রহণ করে মাত্র। খাদ্যগ্রহণে একজন মুসলমানের লক্ষ্য হবে জীবনরক্ষা, শারীরিক সুস্থতা ও ইবাদতে সক্ষমতা অর্জন করা। এর বাইরে তার কোনো উদ্দেশ্য হতে পারে না, হওয়া শোভা পায় না। ভোজনবিলাসী বা ভোগসর্বস্ব জীব হয়ে বেঁচে থাকা মুসলমানের জন্য বিধিত নয়। কেননা নবীজি ﷺ খাবার গ্রহণে অত্যন্ত সংযমী ছিলেন। তাঁর সংযম তিনি উম্মতকেও শিক্ষা দিয়ে গেছেন। নবীজি ﷺ বলেছেন,
. نحن قومٌ لا نأكُلُ حتى نَجُوعَ ، وإذا أكلنَا فلا نَشْبَعَ
“আমরা তো এমন জাতি— ক্ষুধা না পেলে খাই না; আর যখন খাই, পেটপুরে খাই না।”
[মিনহাজুল মুসলিম –১৬৪, আবু বকর আল জাযায়েরী]
নবীজি ﷺ আরো বলেছেন, মুমিন এক অন্ত্রণালীতে খাবার খায়। আর কাফের খায় সাত অন্ত্রণালীতে। (তিরমিযি)

খাবার গ্রহণে নবীজির ﷺ চমৎকার একটা নীতি ছিল। আধুনিককালে স্বাস্থ্যবিজ্ঞান সেটিকে স্বাস্থ্যসম্মত বলে স্বীকার করেছে। হাদিসের ভাষায় মূলনীতিটা এভাবে এসেছে, “মানুষের ভরা পেটের চেয়ে খারাপ পাত্র আর নেই। আদম সন্তানের মেরুদণ্ড সোজা রাখার জন্য কয়েকটি লোকমাই তো যথেষ্ট; সুতরাং সে যদি তাতে তুষ্ট না হতে পারে, তাহলে ‘পেটের এক-তৃতীয়াংশ খাদ্যের জন্য, এক-তৃতীয়াংশ পানির জন্য এবং অপর এক-তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য ঠিক করে নেবে’।”
[তিরমিযী]
অর্থাৎ ভরপেট না খেয়ে কিছু কমিয়ে খাওয়ার কথা নবীজি ﷺ বলেছেন এবং এটাকে মূলনীতি হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। এতে পাকস্থলীর জন্য হজমপ্রক্রিয়া খুবই সহজ হয়ে যায়।

খাবার গ্রহণে নবীজির ﷺ সুন্নাহ

প্রিয়নবীর ﷺ কথা ও কাজ উম্মাহর জন্য অনুসরণীয় ও অনুকরণীয়। ভালোবাসার দাবীও হল, প্রেমাষ্পদের কথা-কাজ এবং তার প্রতিটি নড়াচড়া পর্যন্ত অনুসরণ-অনুকরণ করা। সেই দাবী থেকেই কর্তব্য হল, খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে আমাদের ভালোবাসা, প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তরিকা বা সুন্নাহ কী ছিল; তা আমাদের জানা এবং তা অনুসরণ ও আমলে বাস্তবায়িত করা। তাহলে আসুন, নিচের সংক্ষিপ্ত বিবরণ থেকে আমরা জেনে নিই খাবার গ্রহণে নবীজির ﷺ সুন্নাহ কী ছিল, কেমন ছিল তাঁর পানাহারের পদ্ধতি?

♦ খাওয়ার পূর্বে নবীজির ﷺ সুন্নাহসমূহ

১. হালাল ও পবিত্র জিনিস থেকে খাবার-পানীয় বাছাই করতে হবে। যা হারাম ও সন্দেহযুক্ত তা থেকে বিরত থাকতে হবে। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُلُواْ مِن طَيِّبَٰتِ مَا رَزَقۡنَٰكُم
“হে মুমিনগণ! তোমাদেরকে আমরা যেসব পবিত্র (হালাল) বস্তু দিয়েছি তা থেকে খাও।”
[বাকারা, আয়াত : ১৭২]
আল্লাহ তায়ালা অন্যত্র বলেন,
ويحل لهم الطيبات ويحرم عليهم الخبائث…الآية
অর্থাৎ, তাদের (মানুষের) জন্য হালাল করা হয়েছে পবিত্র জিনিস আর হারাম করা হয়েছে খবিস তথা অপবিত্র বস্তু। [আরাফ–১৭৫]
২. খাবার ও পানীয় গ্রহণ করার দ্বারা ইবাদতের শক্তি অর্জনের নিয়ত করা; যাতে তার পানাহারও ইবাদতে পরিগণিত হয়। কেননা, নিয়ত ঠিক রেখে সুন্নাহ অনুযায়ী চললে মুমিনের আদতও (স্বাভাবিক কাজকর্ম) ইবাদত হয়ে যায়।
৩. খাওয়ার আগে দুই হাত ধুয়ে নেওয়া, যদি হাতে ময়লা থাকে অথবা হাতের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে নিশ্চিত না হওয়া যায়।
৪. টেবিলের উপর না রেখে সমতল বা জমিনের উপর রেখে খাওয়া। কেননা, এটা বিনয়-নম্রতার একেবারেই কাছাকাছি পন্থা। কারণ, আনাস রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন :
« مَا أَكَلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى خِوَانٍ ، وَلَا فِي سُكُرُّجَةٍ
“রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম টেবিলের উপর খাননি এবং কোনো ছোট প্লেটে করেও খাননি।” [বুখারী, হাদিস নং- ৫০৯৯]
৫. বিনয়ীভাবে খাবার খেতে বসা। খেতে বসে কোনকিছুতে হেলান না দেওয়া।
কেননা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
« لَا آكُلُ مُتَّكِئًا ، إنما أنا عبدٌ ، آكُلُ كَمَا يَأْكُلُ الْعَبْدُ ، وَأَجْلِسُ كَمَا يَجْلِسُ الْعَبْدُ » . ).
“আমি হেলান দিয়ে খাইনা। আমি তো (আল্লহর) গোলাম। আমি খাই; যেমনিভাবে একজন গোলাম খায়। আমি বসি; যেমনিভাবে একজন গোলাম বসে।” [বুখারী ও বায়হাকী]

৬. উপস্থিত খাদ্যে সন্তুষ্ট থাকা এবং খাদ্যের দোষ-ত্রুটি না ধরা। যদি ভালো লাগে খাবে, ভালো না লাগলে এড়িয়ে যাবে। কেননা, আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন :
« مَا عَابَ رسولُ الله صلى الله عليه وسلم طَعَامَاً قَطُّ ، إن اشْتَهَاهُ أكَلَهُ ، وَإنْ كَرِهَهُ تَرَكَهُ » . ).
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনও খাদ্যের দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করতেন না; তাঁর রুচিসম্মত হলে খেতেন; আর রুচিসম্মত না হলে খেতেন না।” [আবু দাউদ, হাদিস নং- ৩৭৬৫]

৭. একাকি না খেয়ে কোনো মেহমান, পরিবার, সন্তান, অথবা খাদেমকে সাথে নিয়ে খাওয়া। কেননা, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
« اجْتَمِعُوا عَلَى طَعَامِكُمْ ، وَاذْكُرُوا اسْمَ اللهِ ، يُبَارَكْ لَكُمْ فِيهِ » .).
“তোমরা সম্মিলিতভাবে তোমাদের খাবার খাও এবং আল্লাহর নামে খাও, দেখবে তোমাদের খাদ্যে বরকত হবে।” [আবূ দাউদ, হাদিস নং- ৩৭৬৬]

♦ খাওয়ার মধ্যকার সুন্নাহসমূহ

১. ‘বিসমিল্লাহ’ (আল্লাহর নামে) বলে খাওয়া শুরু করা; কেননা, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
« إِذَا أكَلَ أحَدُكُمْ فَلْيَذْكُرِ اسْمَ اللهِ تَعَالَى ، فإنْ نَسِيَ أنْ يَذْكُرَ اسْمَ اللهِ تَعَالَى في أوَّلِهِ ، فَلْيَقُلْ: بسم اللهِ أوَّلَهُ وَآخِرَهُ » .).
“তোমাদের কেউ যখন খাবার খায়, তখন সে যেন আল্লাহর নাম নিয়ে (শুরু করে); আর যদি শুরুতে আল্লাহর নাম নিতে ভুলে যায়, তাহলে যেন বলে: « بسم اللهِ أوَّلَهُ وَآخِرَهُ » (প্রথমে ও শেষে আল্লাহর নামে খাবার গ্রহণ করছি)।” [আবু দাউদ ও তিরমিযী]

২. আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা জ্ঞাপনের মাধ্যমে অর্থাৎ ‘আল-হামদুলিল্লাহ’ বলে খাওয়া শেষ করা। কেননা, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
« مَنْ أكَلَ طَعَامَاً ، فَقال : الحَمْدُ للهِ الَّذِي أطْعَمَنِي هَذَا ، وَرَزَقنِيهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِنِّي وَلاَ قُوَّةٍ ، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ »
“যে ব্যক্তি খাবার খেয়ে শেষ করার পর বলবে, « الحَمْدُ للهِ الَّذِي أطْعَمَنِي هَذَا ، وَرَزَقنِيهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِنِّي وَلاَ قُوَّةٍ » (সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাকে এ খাবার খাওয়ালেন এবং আমাকে রিযিক দিলেন আমার কোনরূপ চেষ্টা ও শক্তি ছাড়াই) তার পেছনের গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।” [তিরমিযি]]

৩. ডান হাত দ্বারা খাবার গ্রহণ করা, ছোট ছোট লোকমা নেওয়া এবং ভালোভাবে চিবিয়ে চিবিয়ে খাওয়া। আর পাত্রের মাঝখান থেকে না খেয়ে নিজের সামনে থেকে খাওয়া। কেননা, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওমর ইবন আবি সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন,
« يَا غُلامُ ، سَمِّ اللهَ تَعَالَى ، وَكُلْ بِيَمينِكَ ،وَكُلْ مِمَّا يَلِيك
“খোকা! বিসমিল্লাহ বল; ডান হাতে খাও এবং নিজের সামনে থেকে খাও। [বুখারী ও মুসলিম]
তিনি আরও বলেছেন,
« البَرَكَةُ تَنْزِلُ وَسَطَ الطعَامِ ؛ فَكُلُوا مِنْ حَافَتَيْهِ ، وَلا تَأكُلُوا مِنْ وَسَطِهِ
“বরকত খাবারের মধ্যখানে অবতীর্ণ হয়। কাজেই তোমরা তার পাশ থেকে খাও; মাঝখান থেকে খেয়ো না।” [আবু দাউদ ও তিরমিযি]

৪. খাবার ভালোভাবে চিবিয়ে খাওয়া। আর খাবারের পাত্র চেটে খাওয়া এবং হাত মুছে বা ধুয়ে ফেলার পূর্বে আঙ্গুলসমূহ চেটে খাওয়া। কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
« إِذَا أكَلَ أَحَدُكُمْ طَعَاماً ، فَلاَ يَمْسَحْ أَصَابِعَهُ حَتَّى يَلْعَقَهَا أَوْ يُلْعِقَها
“তোমাদের কেউ যখন খাবার খায়, তখন সে যেন তার আঙুলসমূহ মুছে না ফেলে, যতক্ষণ না সে তা চেটে খায় অথবা কাউকে দিয়ে চাটিয়ে নেয়।” [বুখারী, হাদিস নং- ৫১৪০]

তাছাড়া জাবের রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
« إنَّ رَسُول الله صلى الله عليه وسلم أَمَرَ بِلَعْقِ الأَصَابِعِ وَالصَّحْفَةِ ، وقال : إنَّكُمْ لاَ تَدْرُونَ في أيِّ طَعَامِكُمُ البَرَكَةُ
“রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আঙুল ও খাওয়ার পাত্র চেটে খাওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন এবং বলেছেন, তোমাদের জানা নেই, তোমাদের কোন্ খাবারের মধ্যে অর্থাৎ খাবারের কোন অংশে
বরকত রয়েছে।” [মুসলিম, হাদিস নং- ৫৪২০]

৫. খাওয়ার সময় খাবার পড়ে গেলে তা তুলে নিয়ে পরিষ্কার করে খেয়ে নেওয়া। কেননা, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
« إِذَا سَقَطَتْ لُقْمَةُ أَحَدِكُمْ فَلْيَأخُذْهَا ، وَلْيُمِط عنها الأَذى وليَأكُلْها ، وَلاَ يَدَعْها لِلشَّيْطان.
“যখন তোমাদের কারও লোকমা পড়ে যায়, তখন সে যেন তা তুলে নিয়ে পরিষ্কার করে খেয়ে নেয়। লোকমাটিকে যেন শয়তানের জন্য রেখে না দেয়।” [মুসলিম, হাদিস নং- ৫৪২১ ও ৫৪২৬]

৬. গরম খাবারে (ঠাণ্ডা করার জন্য) ফুঁ না দেওয়া এবং তা ঠাণ্ডা না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা। আর পানি পান করা অবস্থায় পানির মধ্যে ফুঁ না দেওয়া এবং উচিৎ হলো তিন শ্বাসে পান করা এবং সেই শ্বাস পানপাত্রের বাইরে নেয়া। কেননা, আনাস রাযিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে এসেছে, তিনি বলেন,
« إنَّ رسول الله صلى الله عليه وسلم كَانَ يَتَنَفَّسُ في الشَّرابِ ثَلاثاً »
“রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানি পান করতে তিনবার শ্বাস নিতেন।” [বুখারী, হাদিস নং- ৫৩০৮]

আর আবু সায়িদ রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
« إنَّ النَّبيَّ صلى الله عليه وسلم نَهَى عَن النَّفْخ في الشَّرَاب »
“নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানীয় বস্তুর মধ্যে ফুঁ দিতে নিষেধ করেছেন।” [তিরমিযী]
তাছাড়া আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন,
« إنَّ النَّبيَّ صلى الله عليه وسلم نَهَى أن يُتَنَفَّسَ في الإناءِ أَوْ يُنْفَخَ فِيهِ »
“নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানির পাত্রে শ্বাস নিতে অথবা তাতে ফুঁ দিতে নিষেধ করেছেন।” [তিরমিযী]

৭. অতিভোজন থেকে বিরত থাকা। কেননা, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
« مَا مَلأَ آدَمِيٌّ وِعَاء شَرّاً مِنْ بَطْنٍ ، بِحَسْبِ ابنِ آدَمَ لُقَيْمَاتٌ يُقِمْنَ صُلْبَهُ ، فإنْ لَمْ يَفْعَلْ فثُلُثٌ لِطَعَامِهِ ، وَثُلُثٌ لِشَرابِهِ ، وَثُلُثٌ لِنَفَسه »
“মানুষের ভরা পেটের চেয়ে খারাপ পাত্র আর নেই। আদম সন্তানের কোমর সোজা রাখার জন্য কয়েকটি লোকমাই তো যথেষ্ট; সুতরাং সে যদি তাতে তুষ্ট না হতে পারে, তাহলে পেটের এক-তৃতীয়াংশ খাদ্যের জন্য, এক-তৃতীয়াংশ পানির জন্য এবং অপর এক-তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য ঠিক করে নেবে।” [তিরমিযী]

৮. অনুষ্ঠানে ডানপাশ থেকে খাবার পরিবেশন করা। কেননা হাদিসে এসেছে,
عن أنس – رضى الله عنه- أن رسول الله – صلى الله عليه وسلم-: أتي بلبنٍ قد شيب بماء، وعن يمينه أعرابيٌ، وعن يساره أبو بكر، فشرب ثم أعطى الأعرابي وقال: «الأيمنُ فالأيمنُ»
হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুল ﷺ এর নিকট পানি মিশ্রিত ধূসর দুধ আসল। নবীজির ﷺ ডানপাশে ছিলেন একজন বেদুইন সাহাবি আর বামপাশে ছিলেন হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু। নবীজি ﷺ একটু পান করে প্রথমে ডানপাশের বেদুইন সাহাবিকে দিলেন এবং বললেন, ডানপাশ থেকে শুরু করে পর্যায়ক্রমে দেওয়া হবে। [বুখারী ও মুসলিম]
তাছাড়া আব্বাস রা. থেকে একটি রেওয়ায়েতে এসেছে,
عن ابن عباس – رضي الله عنهما – قال: دخلت مع رسول الله – صلى الله عليه وسلم- أنا وخالد بن الوليد على ميمونة، فجاءتنا بإناءٍ من لبنٍ، فشرب رسول الله، وأنا على يمينه وخالد على شماله، فقال لي: «الشربة لك فإن شئت آثرت بها خالداً» فقلت: ما كنت أوثر على سؤرك أحد…الحديث
উক্ত হাদিসের বর্ণনায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বামপাশে বসা বয়োজ্যেষ্ঠ খালিদ বিন ওয়ালিদকে দুধ দেওয়ার ব্যাপারে ডানপাশে বসা বয়োকনিষ্ঠ আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহুমের কাছে অনুমতি নিয়েছেন। সুতরাং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক বামপাশের জনের কাছে অনুমতি চাওয়াই প্রমাণ করে যে, ডানপাশে বসা ব্যক্তিই প্রথমে পানীয় পাওয়ার ব্যাপারে বেশি হকদার।” [তিরমিযি ও ইবনে মাজাহ]

→ তবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তিকে প্রথমে খাবার বা পানীয় পরিবেশন করার ব্যাপারেও হাদিস এসেছে। এক্ষেত্রে বয়স্কজনকে দেওয়ার পর ডান দিক থেকে একজন একজন করে খাবার পরিবেশন করতে থাকা।
কেননা, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: « كَبِّرْ كَبِّرْ » অর্থাৎ উপবিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মধ্য থেকে বয়োজ্যেষ্ঠকে দিয়ে শুরু কর।
→ যে মাজলিসে বয়সের দিক থেকে বড়, অথবা মর্যাদার দিক থেকে উত্তম ব্যক্তি আছে, সেখানে আগে নিজে খাবার বা পানীয় গ্রহণ না করা। কেননা, তা শিষ্টাচার পরিপন্থি এবং এমন ব্যক্তিকে লোভী বলে লোকের ধারণা হয়।
→ যারা পরিবেশন করবেন তারা পরে খাবেন যদি কোনো ওজর না থাকে। কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
« إنَّ سَاقِيَ الْقَوْمِ آخِرُهُمْ شُرْبًا »
“কওমের মধ্যে যে সাকী (পানীয় সরবরাহকারী) হবে, পান করার দিক থেকে সে সবার শেষে থাকবে।” [মুসলিম, হাদিস নং- ১৫৯৪]

৯. যৌথ খাবারে সাথীদের প্রতি সদয় হওয়া। সুতরাং অপরজনের চেয়ে বেশি খাওয়ার চেষ্টা না করা, বরং অপরকে অগ্রাধিকার দেওয়া।

১০. খাওয়ার মাঝখানে সাথীদের আড়চোখে পর্যবেক্ষণ না করা। কেননা, এ রকম করলে সাথীরা লজ্জা পাবে। বরং উচিৎ হলো চারি পাশের খাবার গ্রহণকারীদের থেকে তার দৃষ্টিকে অবনমিত করে রাখা।

১১. খাবার সময় এমন কাজ বা কথা থেকে বিরত থাকা যা মানুষ স্বভাবগতভাবে অপছন্দ করে। যেমন, খাবারের মধ্যে হাত ডুবিয়ে দেওয়া বা এমন শব্দ চয়নে কথা বলা যা ময়লা-আবর্জনার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।

♦ খাওয়ার পরে নবীজির ﷺ সুন্নাহসমূহ

১. পেট ভরে খাওয়ার পূর্বেই খাবার গ্রহণ বন্ধ করে দেওয়া। কেননা, টানটান লোড করে খাবার খাওয়া স্বাস্থ্য ও মেধার পক্ষে ক্ষতিকর।
২. হাত চেটে খাওয়া, তারপর তা মুছে ফেলা অথবা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলা। তবে ধুয়ে ফেলাটাই সবচেয়ে ভালো ও সুন্দর।
৩. মুখ পরিষ্কার করার জন্য দাঁত খিলাল করা এবং ভালোভাবে কুলি করা। কেননা মুখ দ্বারা আল্লাহ তায়ালার যিকির করা হয়। তাছাড়া মানুষ সামাজিক জীব হিসেবে
মুখের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা খুবই জরুরী।

৪. পানাহারের পরে ‘আল-হামদুলিল্লাহ’ (الحمد لله) বলে আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা করা।
এবং এই দোয়া পড়া, الحمد لله الذي أطعمنا و سقانا و جعلنا مسلمين
অর্থাৎ, যাবতীয় প্রশংসা ঐ আল্লাহর যিনি আমাদের খাওয়ালেন, পান করালেন এবং আমাদের মুসলমান বানিয়েছেন। [তিরমিযি]

→ আর যখন দুধ পান করবে, তখন বলবে,
اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيمَا رَزَقْتَنَا , و زِدْنا منهُ
অর্থাৎ, হে আল্লাহ! আমাদেরকে তুমি যে রিযিক দান করেছ, তাতে তুমি বরকত দাও এবং আমাদেরকে তা আরও বাড়িয়ে দাও।
→ আর যদি কারো মেহমান হয়ে খানা খায় তাহলে বলবে, الحمد لله اطعم من أطعمني و اسق من سقاني
অর্থাৎ, যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর। হে আল্লাহ! আমাকে যে খাওয়ালো; তুমি তাকে খাওয়াও এবং আমাকে যে পান করালো; তুমি তাকে পান করাও। [তিরমিযি]
→ এবং এই দোয়াও পড়বে,
أَفْطَرَ عِنْدَكُمُ الصَّائِمُونَ ، وَأَكَلَ طَعَامَكُمُ الأَبْرَارُ ، وَصَلَّتْ عَلَيْكُمُ الْمَلاَئِكَةُ
অর্থাৎ, তোমার নিকট রোযাদারগণ ইফতার করুন, নেককারগণ আহার করুন, আর ফেরেশ্তাগণ তোমার জন্য ‘ইস্তিগফার’ তথা ক্ষমা প্রার্থনা করুন। [আবু দাউদ, হাদিস নং- ৩৮৫৬;]
→ এমনও বলবে
اللَّهُمَّ بَارِكْ لَهُمْ فِيمَا رَزَقْتَهُمْ ، وَاغْفِرْ لَهُمْ ، وَارْحَمْهُمْ অর্থাৎ, হে আল্লাহ! তাদেরকে তুমি যে রিযিক দান করেছ; তাতে তুমি বরকত দাও, তাদেরকে ক্ষমা করে দাও এবং তাদের প্রতি রহম কর [তিরমিযী, হাদিস নং- ৩৫৭৬] এরকমন আরো কিছু দোয়া হাদিসে বর্ণিত আছে।

নবীজি ﷺ খেয়েছেন এমন কিছু খাবার

১. খরগোশ :
عن أنس بن مالك رضي الله عنه قال: أنْفَجنَا أرنبًا بمَرِّ الظَّهْران، فسعى القوم فَلَغَبُوا، وأدْرَكتُها فأخذتها وأتيتُ بها أبا طلْحةَ، فذبحها بمَروَة، فبعثَ معي بفَخِذَيها وبِوَركِها إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم فأكله. قيل له: أكله؟ قال: قَبِلَه
হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, মাররুজ জাহরান থেকে একটি খরগোশ ধরে আমি হযরত আবু তালহার নিকট আনলাম। তিনি সেটিকে মারওয়া পাথর দিয়ে জবাই করলেন এবং আমাকে দিয়ে তার দুই রান ও নিতম্ব নবীজির নিকট পাঠিয়ে দিলেন। নবীজি তা খেলেন। [তিরমিযি]

২. মোরগ :
عن زهدم أن أبا موسى أتي بدجاجة فتنحى رجل من القوم، فقال: ما شأنك؟ قال: إني رأيتها تأكل شيئًا قذرته، فحلفت أن لا آكله. فقال أبو موسى: ادنُ فكل؛ فإني رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم يأكله. وأمره أن يكفِّر عن يمينه
জাহ্দাম আল জারমি রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু মুসা রা. একটি মোরগ আনলেন, উপস্থিত এক ব্যক্তি তা খেতে আরম্ভ করলেন। জাহদাম বললেন, মোরগকে তো আমি নোংরা খেতে দেখি, আমি কসম করলাম তা খাব না। তখন আবু মুসা আশয়ারী রা. বললেন, কাছে আসো, খাও। কেননা আমি রাসুল ﷺ কে ইহা খেতে দেখেছি। এবং জাহদামকে তার কসমের কাফফারা দিতে বললেন। [বুখারী ও মুসলিম]

৩. প্রাণীর বাহুর গোশত
عن أبي هريرة قال: أتي النبي صلى
الله عليه وسلم بلحم، فرفع إليه الذراع وكانت تعجبه، فنهس منها نهسة
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবীজির নিকট গোশত আনা হল এবং বাহুর অংশ তাকে দেওয়া হল; তিনি তা পছন্দ করতেন। অতপর তা তিনি চিবিয়ে চিবিয়ে খেলেন। [বুখারী ও মুসলিম]

৪. সারিদ :
عن ابن عباس قال: كان أحب الطعام إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم الثريد من الخبز والثريد من الحيس
ইবনু আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল ﷺ এর প্রিয় খাবার ছিল সারিদভেজা রুটি এবং হাইসের সারিদ।
★ সারিদ হল— ঝাল জাতীয় ঝোল খাবার।
★ হাইস হল— দুধ, ঘি ও খেজুর দিয়ে বানানো মিষ্টি জাতীয় নরম খাবার। [আবু দাউদ]

৫. তরমুজ :
عن عائشة رضي الله عنها قالت: كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يأكل البطيخ بالرطب[20]. “. قال ابن القيم في زاد المعاد: وفي البطيخ عدة أحاديث لا يصح منها شيء غير هذا.
হজরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. তাজা খেজুর দিয়ে তরমুজ খেতেন। তিনি বলতেন, এর ঠান্ডা ওটার গরম কমাবে এবং এর গরম ওটার ঠান্ডা কমিয়ে দেবে। [আবু দাউদ : ৩৮৩৬]

৬. লাউ :
عن إسحاق بن عبد الله بن أبي طلحة أنه سمع أنس بن مالك يقول: إن خياطًا دعا رسول الله صلى الله عليه وسلم لطعام صنعه. قال أنس بن مالك: فذهبت مع رسول الله صلى الله عليه وسلم إلى ذلك الطعام، فقرَّب إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم خبزًا من شعير، ومرقًا فيه دباء وقديد. قال أنس: فرأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم يتتبع الدباء من حوالي الصحفة. قال: فلم أزل أحب الدباء منذ يومئذٍ
হজরত আনাস রা. বলেন, একবার একজন দর্জি রাসুল সা. কে খাবারের দাওয়াত করে। আমিও মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সেই খাবারে অংশগ্রহণ করি। রাসুল সা. এর সামনে যবের রুটি এবং গোশত ও লাউয়ের ঝোল তরকারি পরিবেশন করা হল। আমি দেখেছি, রাসুল সা. প্লেট থেকে খুঁজে খুঁজে লাউ নিয়ে খাচ্ছেন। সেদিন থেকে আমি লাউ পছন্দ করি। [শামায়েলে তিরমিযি : ২৬২]

৭. কিশমিশ :
عن ابن عباس قال: “كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُنْقَعُ لَهُ الزَّبِيبُ فَيَشْرَبُهُ الْيَوْمَ وَالْغَدَ وَبَعْدَ الْغَدِ إِلَى مَسَاءِ الثَّالِثَةِ، ثُمَّ يَأْمُرُ بِهِ فَيُسْقَى أَوْ يُهَرَاقُ”،
অর্থাৎ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূল সা. এর জন্য কিশমিশ ভিজিয়ে রাখা হতো এবং সেগুলো পান করতেন।’ [মুসলিম]

৮. মাখন :
عن ابني بسر السلميين قالا: دخل علينا رسول الله صلى الله عليه وسلم، فقدمنا إليه زبدًا وتمرًا، وكان يحب الزبد والتمر
বুসরের দুই পুত্র থেকে বর্ণিত, তারা বলেন, নবীজি ﷺ আমাদের নিকট আসলেন। আমরা তাঁর সামনে মাখন ও খেজুর করলাম; তিনি মাখন ও খেজুর পছন্দ করতেন। [আবু দাউদ]

৯. হালুয়া ও মধু :
عن عائشة قالت: كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يحب الحلواء والعسل
হজরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিষ্টান্ন ও মধু পছন্দ করতেন।’ [বুখারি : ৫১১৫; মুসলিম : ২৬৯৫]। বুখারি শরিফের আরেকটি হাদিসে রাসূল সা. বলেছেন, ‘মধু হলো উত্তম ওষুধ।’[৫৩৫৯]

১০. খেজুর :
عن يوسف بن عبد الله بن سلام قال: رأيت النبي صلى الله عليه وسلم أخذ كسرة من خبز الشعير فوضع عليها تمرة، فقال: “هذه إدام هذه”. وأكل
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রাযিয়াল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত, আমি রাসূল সা. কে এক টুকরো রুটির ওপর একটি খেজুর রাখতে দেখেছি। তারপর ‘এটিই সালন-মসলা বলে খেয়ে নিয়েছেন। [আবু দাউদ : ৩৮৩০]।
রাসুল ﷺ আবারও বলেন, ‘যে বাড়িতে খেজুর নেই, সে বাড়ির অধিবাসীরা অভুক্ত।’ [আবু দাউদ : ৩৮৩১]। রাসুল সা. সন্তান প্রসবের পর প্রসূতি মাকেও খেজুর খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

১১. রুটির সঙ্গে ঘি :
عن ابن عمر قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ذات يوم: “وددت لو أن عندنا خبزة بيضاء من برة سمراء ملبقة بسمن نأكلها”. قال: فسمع بذلك رجل من الأنصار فاتخذه، فجاء به إليه، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: “في أي شيء كان هذا السمن؟!”. قال: في عكة ضب قال: فأبى أن يأكله
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সা. একদিন বলেন, ‘যদি আমাদের কাছে বাদামি গমে তৈরি ও ঘিয়ে সিক্ত সাদা রুটি থাকত তাহলে সেগুলো আহার করতাম।’ আনসারি এক সাহাবি এ কথা শুনে এ ধরনের রুটি ও ঘি নিয়ে আসেন। রাসুল ﷺ তাকে ঘি কোথায় রাখা ছিল জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, দব্বের (গুইসাপ সদৃশ প্রাণী) চামড়ার থলে। তখন রাসুল ﷺ তা খেতে অসম্মতি জানান। [ইবনে মাজাহ : ৩৩৪০]

১২. দুধ :
أنس – رضى الله عنه- أن رسول الله – صلى الله عليه وسلم-: أتي بلبنٍ قد شيب بماء، وعن يمينه أعرابيٌ، وعن يساره أبو بكر، فشرب ثم أعطى الأعرابي وقال: «الأيمنُ فالأيمنُ»
হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুল ﷺ এর নিকট পানি মিশ্রিত ধূসর দুধ আসল। নবীজির ﷺ ডানপাশে ছিলেন একজন বেদুইন সাহাবি আর বামপাশে ছিলেন হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু। নবীজি ﷺ একটু পান করে প্রথমে ডানপাশের বেদুইন সাহাবিকে দিলেন এবং বললেন, ডানপাশ থেকে শুরু করে পর্যায়ক্রমে দেওয়া হবে। [বুখারী ও মুসলিম]

১৩. শসা :
وعن عبد الله بن جعفر قال: رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم يأكل القثاء بالرطب
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে জাফর রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাজা খেজুরের সঙ্গে শসা খেতে দেখেছি। [মুসলিম]

১৪. জয়তুন
عن عمر بن الخطاب رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: كلوا الزيت وادهنوا به فإنه من شجرة مباركة.
রাসুল সা. বলেন, তোমরা জয়তুন খাও এবং জয়তুনের তেল গায়ে মাখ। কেননা এটি একটি মোবারক বৃক্ষ থেকে তৈরি। [তিরমিযি]

১৫. পনির
عن ابن عمر قال: أُتي النبي صلى الله عليه وسلم بجبنة في تبوك، فدعا بالسكين، فسمى وقطع وأكل
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তাবুকে রাসুল ﷺ এর নিকট পনির নিয়ে আসা হল। নবীজি ﷺ চাকু আনতে বললেন। অতপর বিসমিল্লাহ পড়ে কাটলেন এবং খেলেন। [আবু দাউদ]

১৬. পেঁয়াজ
عن أبي زياد خيار بن سلمة أنه سأل عائشة عن البصل فقالت: إن آخر طعام أكله رسول الله صلى الله عليه وسلم طعام فيه بصل
হযরত আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসুল ﷺ জীবনে শেষ যে খাবার খেয়েছিলেন তাতে পেঁয়াজ ছিল। [আবু দাউদ]

১৭. সিরকা :
عن جابر رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم سأل أهله الإدام، فقالوا: ما عندنا إلا الخل. فدعا به، فجعل يأكل به، ويقول: “نِعم الإدام الخل، نعم الإدام الخل”. قال جابر: فما زلت أحب الخل منذ سمعته من رسول الله صلى الله عليه وسلم
হযরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুল ﷺ তাঁর পরিবারের নিকট তরকারি চাইলেন। পরিবারের লোকজন জবাব দিলেন, আমাদের কাছে তো সিরকা ছাড়া কিছু নেই। নবীজি ﷺ তাই আনতে বললেন এবং খেতে খেতে বললেন, সিরকাই তো উত্তম তরকারি! সিরকাই তো উত্তম তরকারি!! জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবীজির মুখ থেকে এই কথা শোনার পর থেকে আমি সিরকা পছন্দ করতাম। [মুসনাদে আহমাদ]

এ ছাড়া আরও বিভিন্ন বর্ণনায় জানা যায়, রাসুল সা. মরুভূমির এক ধরনের পাখির গোশত, খাসির পায়া, মাশরুম, গাজর, ডুমুর, আঙুর, ডালিম ও সামুদ্রিক মাছ (আম্বর) ইত্যাদি খেয়েছেন।

যেসব খাবার নবীজির ﷺ অপছন্দ ছিল

১. দব্বের গোশত (গুইসাপের মতো দেখতে প্রাণী বিশেষ)
رَواهُ ابن عباس عن خالد بن الوليد حين سأل رسول الله -صلّى الله عليه وسلّم- عن الضبّ، فقال: (أحَرامٌ الضَّبُّ يا رَسولَ اللَّهِ؟ قالَ: لا، ولَكِنْ لَمْ يَكُنْ بأَرْضِ قَوْمِي، فأجِدُنِي أعافُهُ)
যখন খালিদ বিন ওয়ালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু নবীজিকে দব্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন যে, ইয়া রাসুলাল্লাহ দব্ব খাওয়া কি হারাম? নবীজি বললেন, না। কিন্তু এটা যেহেতু আমাদের অঞ্চলে নাই তাই আমার অপছন্দ লাগে।
বি. দ্র. হানাফি মাযহাব মতে দব্ব খাওয়া জায়েয নয়।

২. কাঁচা রসুন ও কাঁচা পেঁয়াজ
عن جابر بن عبد الله -رضي الله عنهما- أن النبي -صلى الله عليه وسلم- قال: «من أكل الثوم والبصل والْكُرَّاثَ فلا يقربن مسجدنا؛ فإن الملائكة تَتَأَذَّى مما يَتَأَذَّى منه بنو آدم».
হযরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, নবীজি ﷺ বলেন, যে (কাঁচা) রসুন, পেঁয়াজ খেয়ে যেন কেউ আমাদের মসজিদের নিকটবর্তীও না হয়। কেননা মানুষ যেসব দুর্গন্ধের কারণে কষ্ট পায়, ফেরেশতারাও তাতে কষ্ট পায়। [বুখারী ও মুসলিম] তবে রান্নাকরা গন্ধহীন পেঁয়াজ রসুন খেতে কোন সমস্যা নেই।

অর্থাৎ মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী কোন বস্তু খেয়ে লোক সমাজে বিশেষত মসজিদে যাওয়াকে নবীজি ﷺ খুবই অপছন্দ করতেন।

৩. অতিরিক্ত গরম খাবার

যে খাদ্য থেকে ধোঁয়া বের হয়, এরূপ খাবার তৎক্ষণাৎ খেতেন না প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। অতিরিক্ত গরম খাবার ঠাণ্ডা হওয়া পর্যন্ত তিনি অপেক্ষা করতেন।
عن ابي هريرة رضي الله عنه ” أن النبي صلى الله عليه وسلم كان لا يأكل الحار ويقول إنه غير ذي بركة وأن الله لم يطعمنا ناراً
হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, নবী করিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গরম খাবার খেতেন না। তিনি বলতেন, গরম খাদ্য বরকতহীন। নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা আমাদের আগুন খাওয়াননি। [বাইহাকি]

মোটকথা, যেসব খাবার হালাল হওয়া সত্ত্বেও নিজের বা অন্যের জন্য কষ্টকর বা ক্ষতিকর হয় তা খাওয়া থেকে নবীজি ﷺ বিরত থাকতেন।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

সাংবাদিকদের কিছু বলতে চান ফখরুল, ডেকেছেন দলীয় কার্যালয়ে

নূর নিউজ

কানাডায় অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি মাওলানা তারিক জামিল

নূর নিউজ

এবারের রমজানেও বন্ধ থাকছে উমরা-ইতিকাফ!

আলাউদ্দিন