আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে বিশেষ তিনটি অনুগ্রহ নিয়ে আগমন করে মাহে রমজান। এর শুরুতে থাকে রহমত, মধ্যভাগে মাগফিরাত, শেষভাগে নাজাত। এক হাদিসে হজরত সালমান ফারসি রা. থেকে বর্ণিত—
তিনি বলেন, রাসূল সা. শাবান মাসের শেষ দিন আমাদের মাঝে খতিব হিসেবে দাঁড়ালেন, বললেন (মাহে রমজান) এমন একটি মাস যার প্রথম ভাগ রহমত, মধ্যবর্তী ভাগ মাগফেরাত বা ক্ষমা আর শেষ ভাগে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয়া হয়। অর্থাৎ রমজান মাসের ৩০ দিনের প্রথম ১০ দিন রহমতের, দ্বিতীয় ১০ দিন মাগফিরাতের এবং তৃতীয় ১০ দিন নাজাতের। (সহিহ ইবনে খুজাইমা, ১৮৮৭)
এ মাসে বান্দার আমল ইবাদতের সুবিধার জন্য আল্লাহ তায়ালা শয়তানকে বন্দি করেন। যেন সহজেই আল্লাহর রহমত লাভ করা যায়। এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যখন রমজানের প্রথম রাত প্রবেশ করে তখন বিতাড়িত শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা হয়, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়; তার কোনো দরজা খোলা থাকে না।জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয়; তার কোনো দরজা বন্ধ থাকে না। আর একজন আহবানকারী ডেকে বলেন, হে কল্যাণের অভিযাত্রীরা! অগ্রসর হও। হে অকল্যাণের অভিসারীরা! বিরত হও। এরূপ প্রতি রাতে করা হয়। (তিরমিজি, হাদিস : ৬৮২; নাসাঈ, হাদিস : ২১০৭)
রমজানের প্রথম দুই দশকে রহমত, মাগফিরাতের পর শেষ দশকে আল্লাহ তায়ালা নাজাত বা মুক্তির ঘোষণা দিয়েছেন। এ দশকে বান্দাকে নিজের অনুগ্রহে ডুবিয়ে রাখতে লাইলাতুল কদর দিয়েছেন, এছাড়াও এই দশকের বিশেষ আমল ইতিকাফ। যার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালাকে সহজেই পাওয়া সম্ভব।
বিভিন্ন কারণে রমজানের শুরু ও মধ্যভাগে আমলের সুযোগ হয় না। তবে কোনো কারণে প্রথম দুই দশক অবহেলায় কাটলেও শেষ মুর্হুতেও আল্লাহর কাছে অনুগ্রহ তালাশে তৎপর থাকতে হবে। এ সময় ১০ দিনের ইতিকাফের সুযোগ না পেলেও নিজেকে অন্যসব ব্যস্ততা থেকে পৃথক করে সম্ভব হলে শেষ তিনদিন নফল ইতিকাফ করা যেতে পারে।
জামাতে নামাজের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিত। নফল, সুন্নত ও তাহাজ্জদে মনোযোগী হওয়া উচিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ দশকে রাত জেগে ইবাদত করতেন এবং তার পরিবার-পরিজনকে জাগাতেন। আয়েশা রা. বলেন, ‘যখন শেষ দশ দিন আসত তখন রাসুলুল্লাহ সা. তার পরিধেয় বস্ত্র শক্ত করে বাঁধতেন, রাত্রি জাগরণ করতেন এবং পরিবার-পরিজনকে জাগাতেন।’ (বুখারি, হাদিস : ২০২৪)
এছাড়াও যাদের ওপর যাকাত ফরজ তারা পুরো রমজানে আদায় না করে থাকলে এই সময়ে আদায় করে নিতে পারেন। ঈদের শপিংয়ে গরীব-দুঃখীর জন্য একটি অংশ রাখতে পারেন সামর্থ্য অনুযায়ী। আল্লাহ তায়ালা সবাইকে রমজানের শেষভাগের বরকত ও রহমত লাভের তৌফিক দান করুর। আমিন।