মুফতী মুহাম্মদ ইসমাঈল
ইসলামে দান-সাদাকার গুরুত্ব অনেক। রমাদানে দানের গুরুত্ব আরও বেশি। রমাদানকে বলা হয় দানের মাস, কেননা এ মাসে একটি নফল ইবাদত করলে একটি ফরজের সমান সাওয়াব এবং একটি ফরয ইবাদত করলে ৭০টি ফরজের সাওয়াব পাওয়া যায়।
রমাদানে রাসূল (সা.)-এর দানশীলতা
রাসূল (সা.) রমাদানে সবচেয়ে বেশি দান করতেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রাসূল (সা.) ছিলেন মানুষের মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ দাতা। রমাদানে তাঁর দানশীলতা (অন্য সময় থেকে) অধিকতর বৃদ্ধি পেত; যখন জিবরাঈল (আ.) তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। জিবরাঈল (আ.) রমাদানের প্রতি রাতে আগমন করতেন এবং তারা পরস্পরকে কুরআন শোনাতেন। আল্লাহর রাসূল (সা.) তখন কল্যাণবাহী বায়ুর চেয়ে অধিক দানশীল ছিলেন।’ (বুখারি)
দান-সাদাকার আসল উপযুক্ত যারা
সহযোগিতা ও দান-সাদাকা বলতে সাধারণত দরিদ্র, ফকির-মিসকিন, এতিম, অন্ধ ও অসহায় শ্রেণির লোকদের দান করা বোঝায়। তবে এ দান-সদকার প্রকৃত উপযুক্ত কারা, এ সম্পর্কিত এক প্রশ্নের সম্মুখীন হলে মহান আল্লাহ তার প্রিয় রাসূল (সা.)-কে এক প্রত্যাদেশে বলেন, ‘লোকেরা আপনার কাছে জিজ্ঞেস করে, তারা কী ব্যয় করবে? বলে দিন, যে বস্তুই তোমরা ব্যয় কর, তা হবে বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন, এতিম-অনাথ, অসহায় এবং মুসাফিরদের জন্য। আর তোমরা যে কোনো সৎ কাজ করবে, নিঃসন্দেহে তা অত্যন্ত ভালোভাবেই আল্লাহর জানা রয়েছে।’ (সূরা বাকারা: ২১৫)
অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তোমরা আল্লাহ ছাড়া কারও উপাসনা করবে না, বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন, এতিম ও দরিদ্রের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে, মানুষের সঙ্গে সৎ কথাবার্তা বলবে, নামায প্রতিষ্ঠা করবে এবং যাকাত দেবে।’ (সূরা বাকারা: ৮৩)
দানে ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পাবে
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আত্মীয়-স্বজনকে তাদের প্রাপ্য দিন এবং মিসকিন ও মুসাফিরদেরও। এটা তাদের জন্য উত্তম, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে; তারাই সফলকাম। মানুষের ধন-সম্পদে তোমাদের ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পাবে, এ আশায় তোমরা সুদে যা কিছু দাও, আল্লাহর কাছে তা বৃদ্ধি পায় না। পক্ষান্তরে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় পবিত্র অন্তরে যারা দিয়ে থাকে তারাই দ্বিগুণ লাভ করে।’ (সূরা রুম: ৩৮-৩৯)।
অসহায়দের প্রতি সাহায্যের হাত সম্প্রসারিত করে অশেষ সাওয়াব লাভের সর্বোত্তম সময় রমাদান। দান-খয়রাত সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা প্রায় শতাধিক আয়াত অবতীর্ণ করেছেন। কাজেই দান-খায়রাত ও অসহায়কে সহযোগিতা করার বিষয়টি সামর্থ্যবান ও বিত্তশালীদের এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। এতিম, মিসকিন, অভাবগ্রস্ত, ভিক্ষুক, মুসাফির ও অসহায়দের প্রতিও তাদের দায়িত্ব অপরিসীম। অনেক গরিব-দুঃখী মানুষ আছেন, যারা সাহরি ও ইফতারে সামান্য খাবারও জোগাড় করতে হিমশিম খান। এই পবিত্র মাসে এ ধরনের মানুষের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া প্রতিটি মুসলমানের ঈমানি কর্তব্য।
লেখক : বিশিষ্ট দাঈ ও প্রিন্সিপাল, আন-নূর কালচারাল সেন্টার, নিউইয়র্ক