আল্লাহ আমাদের রব। তিনিই আমাদের স্রষ্টা। স্রষ্টা আমাদেরকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। সময় শেষে আমাদেরকে তার কাছেই ফিরে যেতে হবে। পৃথিবীতে থাকার সময়টা মানুষের জন্য স্রষ্টার কাছে পছন্দনীয় হওয়ার কাল। এ সময়ে মানুষকে নিজের ইবাদতের মাধ্যমে রবের প্রিয় হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। তিনি কীসে সন্তুষ্ট এবং কীসে অসন্তুষ্ট তা জেনে মেন চলার চেষ্টা করতে হবে। তবেই রবের কাছে ফিরে তাঁর প্রিয়পাত্র হওয়া যাবে।
স্বভাবজাতধর্ম হিসেবে ইসলাম মানুষের জীবনের সবধরনের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে এবং এর উপকরণগুলো অবলম্বন করতে বলে। একইসঙ্গে রবের দরবারে নিজেকে উপস্থাপনের জন্য প্রস্তুত করতে যাপিত জীবনের পাশাপাশি বিভিন্ন ফরজ, সুন্নত ও নফল ইবাদত পালনের প্রতি নির্দেশ ও উৎসাহিত করেছে।
এই ইবাদতগুলোর মধ্যে ফরজ যেমন রয়েছে, সুন্নত, নফল ইবাদতও রয়েছে। নফল ইবাদতের মধ্যে অন্যতম একটি ইবাদত হলো, রাতের তাহাজ্জুদ নামাজ। এই নামাজ মানুষকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে এবং তাঁর প্রিয় করে তোলে।
তাহাজ্জুদ নামাজকে পবিত্র কোরআনে রহমান বা দয়ালু প্রভুর বিশেষ বান্দাদের গুণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বর্ণিত হয়েছে—
وَ عِبَادُ الرَّحۡمٰنِ الَّذِیۡنَ یَمۡشُوۡنَ عَلَی الۡاَرۡضِ هَوۡنًا وَّ اِذَا خَاطَبَهُمُ الۡجٰهِلُوۡنَ قَالُوۡا سَلٰمًا وَ الَّذِیۡنَ یَبِیۡتُوۡنَ لِرَبِّهِمۡ سُجَّدًا وَّ قِیَامًا
আর রহমানের বান্দা তারাই যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং অজ্ঞ লোকেরা যখন তাদেরকে সম্বোধন করে তখন তারা বলে ‘সালাম’। আর তারা রাত কাটায় তাদের প্রতিপালকের উদ্দেশে সাজদায় অবনত ও দন্ডায়মান অবস্থায়। ( সূরা ফুরকান, আয়াত : ৬৪-৬৫)
এই আয়াতে রহমানের বান্দার বিশেষ গুণ হিসেবে রাত জেগে তাহাজ্জুদ পড়ার কথা বলা হয়েছে। কারণ, রাতের ঘুম মানুষের কাছে অত্যন্ত আরামের। এ সময় নামাজ ও ইবাদাতের জন্য দণ্ডায়মান হওয়া যেমন বিশেষ কষ্টকর, তেমনি এতে লোকদেখানো ও নাম যশের আশংকাও নেই।
তাহাজ্জুদের ফজিলত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিয়মিত তাহাজ্জুদ আদায় কর, কেননা, এটা তোমাদের পূর্ববর্তী সকল নেককারদের অভ্যাস ছিল। এটা তোমাদেরকে আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য দানকারী, মন্দ কাজের কাফফারা এবং গুনাহ থেকে নিবৃত্তকারী। (সহিহ ইবনে খুযাইমাহ, হাদিস : ১১৩৫)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, যে ব্যক্তি এশার সালাত জামাতে আদায় করে, সে যেন অর্ধারাত্রি ইবাদাতে অতিবাহিত করে এবং যে ব্যক্তি ফজরের সালাত জামাআতের সাথে আদায় করে, তাকে অবশিষ্ট অর্ধারাত্ৰিও ইবাদাতে অতিবাহিত্যকারী হিসেবে গণ্য করা হবে। (মুসলিম, হাদিস ৬৫৬)