রাশিয়া ও ইউক্রেনে ঝড়ের তাণ্ডবে কমপক্ষে চারজন নিহত হয়েছেন। এছাড়া বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন উভয় দেশের ২০ লাখ মানুষ। ঝড়ের জেরে প্রবল বাতাস এবং ব্যাপক বন্যার কারণে এই অবস্থার মধ্যে পড়েছেন বিপুল সংখ্যক মানুষ।
সোমবার (২৭ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শক্তিশালী বাতাস এবং ব্যাপক বন্যার কারণে দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ১৯ লাখ মানুষ বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন বলে রাশিয়া জানিয়েছে। এখানে দক্ষিণাঞ্চল বলতে রাশিয়া নিজের অঞ্চল ছাড়াও গত বছর অবৈধভাবে সংযুক্ত ইউক্রেনীয় অঞ্চলের কথাও উল্লেখ করেছে।
রাশিয়ার জ্বালানি মন্ত্রণালয় বলছে, দাগেস্তান, ক্রাসনোদার ও রোস্তভের পাশাপাশি ইউক্রেনের দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন, জাপোরিঝিয়া এবং ক্রিমিয়া সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্থানীয় গণমাধ্যমে ঝড়ের কারণে অন্তত চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
ইউক্রেন বলেছে, তুষারঝড়ের পর দেশের ২ হাজার ১৯ টি গ্রাম ও শহরে বিদ্যুৎ নেই। এছাড়া রাশিয়া ও ইউক্রেনের পাশাপাশি ঝড়টি মলদোভা, জর্জিয়া এবং বুলগেরিয়াতেও আঘাত হেনেছে।
বিবিসি বলছে, রাশিয়ার কৃষ্ণসাগরীয় বন্দর সোচিতে বড় বড় ঢেউ শহরের সমুদ্র উপকূলে আঘাত হানতে দেখা গেছে। এছাড়া সেখানকার একটি তিনতলা ভবন ধসে পড়তে দেখা গেছে একটি ভিডিও ফুটেজে।
রাশিয়ার কৃষ্ণসাগর উপকূলে আনাপা শহরের কাছে ২১ জন ক্রুসহ একটি পণ্যবাহী জাহাজ তলিয়ে গেছে। রাজধানী মস্কোতে ভারী তুষারপাতের পরে কর্তৃপক্ষকে রাস্তা পরিষ্কার করতে বিশেষজ্ঞ যন্ত্রপাতি নামাতে হয়েছিল।
অন্যদিকে ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় ক্রিমিয়া উপদ্বীপে মস্কো-নিযুক্ত কর্মকর্তারা উপকূলীয় অঞ্চলে বন্যার কথা জানিয়েছেন। উপদ্বীপটির বিভিন্ন শহরের রাস্তায় গাছ ও অন্যান্য ধ্বংসাবশেষ পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
ক্রিমিয়ার সেভাস্তোপল বন্দরে সামুদ্রিক বন্যায় সেখানকার একটি ঐতিহাসিক জাদুঘর-অ্যাকোয়ারিয়াম ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর প্রায় ৮০০ বিদেশি মাছ মারা গেছে বলে জাদুঘরের পরিচালক জানিয়েছেন। এছাড়া ক্রিমিয়ার বেশ কয়েকটি পৌরসভায় এখন জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।
ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আন্তন হেরাশচেঙ্কো বলেছেন, ঝড়ে ‘অধিকৃত ক্রিমিয়ার সৈকতে রুশ সেনাবাহিনীর তৈরি করা পরিখা ভেসে গেছে’। রাশিয়ার সেনাবাহিনী অবশ্য ইউক্রেনের এই দাবির বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি।
এদিকে ইউক্রেনের ডিএসএনএস জরুরি পরিষেবা বলেছে, তুষারঝড় এবং প্রচণ্ড বাতাস দেশের ১৬টি অঞ্চলে আঘাত হেনেছে। সংস্থাটি বলেছে, দক্ষিণ-পশ্চিমে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ওডেসা অঞ্চলে আটকে পড়া যানবাহন থেকে শিশুসহ ৪৮ জনকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
কিছু জায়গায় তুষারপাত দুই মিটারের বেশি হওয়ার কারণে ৮৪০টির মতো যানবাহনকে সরিয়ে নিতে হয়েছিল বলেও জরুরি পরিষেবা জানিয়েছে। অন্তত ১ হাজার ৩৭০টি পণ্যবাহী লরি বর্তমানে আটকে আছে।
সেখানে অন্তত ছয়জন হাইপোথার্মিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। বর্তমানে ১৪টি মোটরওয়েতে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ইউক্রেনের দক্ষিণ মাইকোলাইভ অঞ্চলও ঝড়ে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বিবিসি বলছে, ইউক্রেনজুড়ে এখন পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালাতে দেড় হাজারেরও বেশি উদ্ধারকারীকে মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ, সীমান্তরক্ষী এবং ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যরাও তাদের সাহায্য করছেন।