রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে দক্ষ হাফেজ, ইমাম ও আলেম তৈরির পদক্ষেপ নিতে হবে: মাওলানা রাব্বানী

নিজস্ব প্রতিবেদক

পবিত্র কুরআনুল কারিমের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সহি ও শুদ্ধভাবে যাদের মুখস্থ আছে তারাই হলো হাফেজ সম্প্রদায়। হাফেজে কুরআনরা পবিত্র কোরআনের এক গৌরবময় উজ্জ্বল প্রামাণ্য মোজেজা। তাই হাফেজে কুরআনকে বলা হয় ‘জীবন্ত কুরআন’। তারা পুরো কুরআনকে নিজেদের হৃদয়ে সংরক্ষিত রাখে। কুরআন ধারণ করা যেমন অত্যন্ত কঠিন একটি কাজ, তেমনি মহান আল্লাহর এ এক অসীম রহমত।

আমাদের দেশে অসংখ্য কুরআনে হাফেজ রয়েছে। তারা সম্পদে পরিণত হয়েছে। নীরবে-নিভৃতে ইসলামের খেদমতে কাজ আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছে। তাদের খোঁজ-খবর খুব কম মানুষই রাখে। অগোচর ও অন্তরালে থাকা এই হাফেজরাই বিভিন্ন সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখছে। কখনো চ্যাম্পিয়ন, কখনো প্রথম সারিতে স্থান পাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় গত ফেব্রুয়ারীতে ইরানে অনুষ্ঠিত ৩৮ তম আন্তর্জাতিক হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের প্রতিযোগী হাফেজ সালেহ আহমাদ তাকরীম প্রথম স্থান অর্জন করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিযোগীদের মধ্য থেকে কঠিন এক পরীক্ষায় তার এই অর্জন অসামান্য।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ আইম্মাহ্ পরিষদের সভাপতি মাওলানা মুহিউদ্দীন রাব্বানী এক বিবৃতিতে বলেন; আমাদের দেশে বিগত কয়েক বছর ধরে রমজানে দু’য়েকটি টেলিভিশনে কুরআনে হাফেজদের নিয়ে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়ে থাকে। রমজানের পুরো মাস ধরে এই প্রতিযোগিতা চলে। ঈদের আগেই ফলাফল ঘোষণা করা হয়। তাছাড়া হুফফাজুল কুরআন ফাউন্ডেশনেরমত কিছু সংগঠন এ নিয়ে কাজ করে। এছাড়া আর তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না। অথচ প্রতিবছরই অনেকে কুরআনে হাফেজ হচ্ছে। এ বিষয়টি তেমন প্রচার-প্রচারণাও পায় না। যখন কোনো আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় তাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ অংশগ্রহণ করে চ্যাম্পিয়ন হয়, তখনও আমাদের দেশের মিডিয়াগুলো এ সংবাদ প্রকাশে কুণ্ঠাবোধ করে।

কুরআনে হাফেজরা যে শুধু ইসলামের খেদমত করে তা নয়, তারা বিশেষায়িত পেশা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারদের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে তৈরি হলেও, কুরআনে হাফেজ কিংবা একজন দক্ষ ইমাম ও আলেম তৈরির ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের তরফে জোরালো উদ্যোগ নিতে দেখা যায় না। কিছু ডেডিকেটেড আলেম, হাফেজ ও ইসলামী ব্যক্তিদের উদ্যোগে এবং সাধারণ মানুষের আর্থিক সহায়তায় সিংহভাগ হাফেজ, ইমাম ও আলেম তৈরি হচ্ছে। তারাও যে বিশেষায়িত পেশাজীবী হতে পারে, সরকার এ বিষয়টি নিয়ে খুব একটা ভেবেছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে না।

তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের মুসলমান দেশগুলোতে সংখ্যার দিক দিয়ে হাফেজ ও ইমাম কম। অথচ আরবী ভাষা হওয়ায় ওইসব দেশেই এ সুযোগ বেশি। দেখা যায়, বাংলাদেশসহ অনারব দেশ থেকে যাওয়া হাফেজ-ইমাম মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো দায়িত্ব পালন করছে। এও লক্ষ্যযোগ্য, বিশ্বজুড়েই হাফেজ-ইমামের চাহিদা রয়েছে এবং দিন দিন চাহিদা বাড়ছে। আমাদের দেশে প্রতিবছর যে বিপুল সংখ্যক কুরআনে হাফেজ ও ইমাম তৈরি হচ্ছে, তাদেরকে যদি ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ারদের মতো বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাঠানো যায়, তাতে তাদের কর্মসংস্থান হবে, দেশের সুনাম বৃদ্ধি পাবে এবং প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জিত হবে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে আরবীর পাশাপাশি ইংরেজী ভাষায়ও যাতে তারা দক্ষ হতে পারে তার ব্যবস্থা নিলে কর্মসংস্থান সহজ হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কুরআনে হাফেজ ও ইমামের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। সরকারের উচিৎ দেশের হাফেজ ও ইমামদের উন্নত প্রশিক্ষণের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ইসলামিক ফাউন্ডেশন এক্ষেত্রে তার কর্মপরিধিকে আরও বিস্তৃত করতে পারে।

যেসব মাদরাসা কুরআনের হাফেজ ও ইমাম তৈরিতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে, সরকারী উদ্যোগে তাদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া জরুরি। বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার বাজারে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন রফতানি খাত সৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের দেশে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে জনশক্তি রফতানি অন্যতম বৃহত্তম খাত। এ খাতের সাথে বিশেষায়িত জনশক্তি হিসেবে দক্ষ হাফেজ, ইমাম ও আলেমদের যুক্ত করা হলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা যেমন অর্জিত হবে, তেমনি বিশ্বে ইসলামের খেদমতের পথও প্রসারিত হবে। এতে দেশের ভাবমর্যাদাও উজ্জ্বল হবে। বিষয়টি বিবেচনা করে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে দক্ষ হাফেজ, ইমাম ও আলেম তৈরির পদক্ষেপ নিতে হবে।

তিনি আরো বলেন, ত্রিশ পারা কুরআন মজিদ আপন সিনা মোবারকে আগলে রাখেন হাফেজে কুরআন। দুনিয়ার আরেকটি ত্রিশ পারা বই বা গ্রন্থ পাওয়া যাবে না, যা কেউ মুখস্থ রাখতে পেরেছে। কুরআন মজিদের ৬ হাজার ৬৬৬টি আয়াত একজন হাফেজ মুখস্থ করতে সক্ষম হন তা বিশাল একটি কৃতিত্বের ব্যাপার। এটাই কুরআন মজিদের অলৌকিকতা, বিশেষ বৈশিষ্ট্য ও মুজেজা। কিয়ামত পর্যন্ত হাফেজে কুরআনরাই কুরআন মজিদ সংরক্ষিত করে রাখবেন। কিন্তু সেই হাফেজদের জন্য রাষ্ট্রীয় ভাবে কোনো কিছু করা হচ্ছে না। এটা দুঃখজনক।

রাষ্ট্রীয়ভাবে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার তৈরির নানা উদ্যোগ থাকলে হাফেজ তৈরির জন্য থাকবে না কেন। হাফেজরা এখন দেশের উন্নয়নে অনেক ভূমিকা রাখছেন। হাফেজরা এখন দেশের উন্নয়নে অনেক ভূমিকা রাখছেন। গণতান্ত্রিক ধারায় এখন অনেক কোরআনের হাফেজ ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার, চেয়ারম্যান ও বিভিন্ন সংগঠনের সদস্য হয়ে গ্রাম উন্নয়নে ভূমিকা রাখছেন। গ্রামের লোকেরা সামাজিক ও পারিবারিক সমস্যা সমাধানের জন্য অনেক সময় হাফেজ এবং ইমামদের শরণাপন্ন হয়ে থাকেন। রাষ্ট্রীয়ভাবে হাফেজ ইমাম তৈরি করাটা এখন সময়ের দাবি।

বিশ্বের বিভিন্ন মর্যাদাপূর্ণ প্রতিযোগিতায় দেশের হাফেজরা দেশের মান উজ্জল করছে। অথচ সেই হাফেজদের রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো সুবিধা দেয়া হয় না, এটা আমাদের জন্য লজ্জার। সরকারের কাছে দাবি জানাবো, দেশের মানুষের নৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশে হাফেজ এবং ইমাম পাঠাতে প্রয়োজনীয় উদোগ নিতে হবে, দক্ষ এ জনশক্তি রপ্তানির মাধ্যমে রেমিটেন্স বৃদ্ধি করতে হবে এবং সর্বোপরি আমাদের সমাজে হাফেজদের স্থায়ী ভাবে কোন কাজ বা চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আল্লামা নূরউদ্দীন গহরপুরী রহ.-এর সহধর্মিণীর ইন্তেকাল

আনসারুল হক

এই ঢাকা চেনা যায়?

নূর নিউজ

আসামে মুসলমানদেরকে ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ ও দমনপীড়ন বন্ধ করুন-ইসলামী ঐক্যজোট

আনসারুল হক