রিজার্ভ কমে ৪১ বিলিয়ন ডলারের ঘরে

কয়েক মাস আগেও প্রতিনিয়ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ার খবর মিলছিল। রিজার্ভ বেড়ে গত আগস্টে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর ছাড়ায়। এখন তা নেমেছে ৪১ বিলিয়ন ডলারের ঘরে। গতকাল এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে (আকু) প্রায় ২২৪ কোটি ডলার পরিশোধের পর এমন হয়েছে। আগের দিন ৯ মে রিজার্ভ ছিল ৪৪ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানের এ রিজার্ভ দিয়ে ছয় মাসের আমদানি দায় মেটানো সম্ভব। আট মাসের আমদানি দায় মেটানোর মতো রিজার্ভ ছিল গত আগস্টে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক মাসে রিজার্ভ কমে এ পর্যায়ে নেমেছে। এর আগে ধারাবাহিকভাবে যা বাড়ছিল। ১০ বছর আগে ২০১৩ সালের জুন শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল মাত্র ১৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার। পাঁচ বছর আগে ছিল ৩৩ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার। সেখান থেকে বেড়ে গত বছরের আগস্টে প্রথমবারের মতো ৪৮ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলার হয়। গত কয়েক মাসে ধরে রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমছে। সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে রিজার্ভ সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামে গত ৮ মে। ওই দিন রিজার্ভ দাঁড়ায় ৪৩ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন ডলারে। গতকাল ২ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলারের আকু পরিশোধের পর রিজার্ভ ৪২ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমেছে।

সংশ্নিষ্টরা জানান, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এভাবে কমার মূল কারণ আমদানি ব্যয়ে ব্যাপক প্রবৃদ্ধি এবং রেমিট্যান্স কমা। গত মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে আমদানি ব্যয় ৪৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ বেড়ে ৬ হাজার ১৫২ কোটি ডলার হয়েছে। রপ্তানি ৩২ দশমিক ৯২ শতাংশ বেড়ে হয়েছে তিন হাজার ৬৬২ কোটি ডলার। রেমিট্যান্স ১৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ কমে এক হাজার ৫৩০ কোটি ডলারে নেমেছে। এতে করে চলতি হিসাবে রেকর্ড এক হাজার ৪০৭ কোটি ডলারের ঘাটতি হয়েছে। তবে বিদেশি ঋণ ৫৬ দশমিক ৩০ শতাংশ বেড়ে ৬৬২ কোটি ডলার হয়েছে। যে কারণে সামগ্রিক ঘাটতি ৩১০ কোটি ডলার হয়েছে। আগামীতে বৈদেশিক মুদ্রার ঋণ ব্যাপকভাবে পরিশোধ শুরু হলে রিজার্ভের ওপর চাপ আরও বাড়তে পারে।

সতর্কতা জোরদার :বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতন ঠেকাতে সতর্কতা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অস্বাভাবিক আমদানি ব্যয় কমাতে বিলাসপণ্যে এলসি মার্জিনের হার আরও বাড়িয়ে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত নির্ধারণের একটি প্রস্তাব উচ্চপর্যায়ের বিবেচনায় রয়েছে। এর আগে গত ১১ এপ্রিল জ্বালানি, অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যপণ্য, ওষুধসহ কিছু পণ্য ছাড়া অন্য ক্ষেত্রে নূ্যনতম এলসি মার্জিন ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়।

এলসি মার্জিন বৃদ্ধির পাশাপাশি আমদানিকে ব্যয়বহুল করতে ডলারের দর বাড়ানো হচ্ছে। শুধু চলতি বছরের এ কয়েক মাসে আন্তঃব্যাংকে প্রতি ডলারের দর ৯০ পয়সা বাড়িয়ে ৮৬ টাকা ৭০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর গত আগস্ট থেকে ৯ মাসে বেড়েছে এক টাকা ৯০ পয়সা। সর্বশেষ গত সোমবার প্রতি ডলারে ২৫ পয়সা বাড়ানো হয়। এর আগে গত ২৬ এপ্রিল, ২২ মার্চ ও ৬ জানুয়ারি ২০ পয়সা করে বাড়ানো হয়। ডলারের টান শুরু হয় মূলত গত আগস্ট থেকে। আগস্টের শুরুতে আন্তঃব্যাংকে প্রতি ডলারের দর ছিল ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা। আন্তঃব্যাংকের পাশাপাশি ব্যাংকে ও খোলা বাজারে নগদ ডলারে দর বেশি হারে বেড়ে ৯২ থেকে ৯৩ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এর মানে ভ্রমণ, চিকিৎসা বা অন্য কোনো কারণে বিদেশে যেতে এরকম দরে ডলার কিনতে হচ্ছে। গত আগস্টে যা ৮৫ থেকে ৮৬ টাকা ছিল।

সংকট সমাধানে ডলার বিক্রি :ডলার খরচে সতর্কতার পাশাপাশি সংকটের কারণে কেউ যেন আমদানি দায় পরিশোধ কিংবা ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ না হয় সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি অর্থবছর প্রথম ডলার বিক্রি করে গত আগস্টে। এরপর থেকে সোমবার পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ৪৯৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ২০২০-২১ অর্থবছরে যেখানে বাজার থেকে ৭৯৪ কোটি ডলার কেনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সংকট সমাধানে আমদানি ব্যয় নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি চলতি বছর থেকে রেমিট্যান্সে প্রণোদনার হার বাড়িয়ে আড়াই শতাংশ করা হয়েছে, প্রবাসী বন্ডে বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা তুলে দেওয়া হয়েছে। রপ্তানি বাড়াতে নানা উদ্যোগ চলমান রয়েছে। এছাড়া প্রবাসীদের বৈদেশিক মুদ্রায় হিসাব খোলা, বিদেশ থেকে সঙ্গে করে অর্থ আনা ও বিদেশে নেওয়ার সুযোগ-সুবিধা বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গতকাল সচেতনতামূলক একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এবার হেফাজতের ৭ দফা

নূর নিউজ

‘মানাতে না পারলে আর লকডাউন নয়’-জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি

আনসারুল হক

ব্যাংকে থেকে টাকা তুলে ঘরে রাখলে চোরে নিয়ে যাবে

নূর নিউজ