শিশুর তিলাওয়াতে মুগ্ধ বাইডেনের দূত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক বিশেষ দূত রাশাদ হোসাইনের ঢাকা সফরের রেশ এখনো কাটেনি। ১৭-২০শে এপ্রিল বাংলাদেশে ছিলেন তিনি। চারদিন চষে বেড়িয়েছেন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহর। সফরে উল্লেখযোগ্য সময় কাটিয়েছেন মিয়ানমার সীমান্তবর্তী জেলা কক্সবাজারে। যেখানে বাস্তুচ্যুত ১০ লাখের অধিক মিয়ানমার নাগরিকের অস্থায়ী বাস। তিনি তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। তাদের মুখেই শুনেন বর্মী বর্বরতার নিষ্ঠুর সব বয়ান। কেবল রোহিঙ্গা মুসলিমই নন, মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার হিন্দু সমপ্রদায়ের নারী-পুরুষ যারা নির্মমতার কষাঘাত থেকে প্রাণে বাঁচতে আন্তর্জাতিক সীমানা পাড়ি দিতে বাধ্য হয়েছেন তাদের কথাও শুনেছেন।

বাইডেনের দূত শিশু-কিশোরদের পাঠশালা পরিদর্শন করেন।

উপার্জনক্ষম কিশোরী এবং নারীদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোও ঘুরে দেখেন। সব মিলে স্মরণীয় ছিল তার কক্সবাজার ট্রিপ। এমটাই ব্যক্ত করেছেন সিরিজ টুইট বার্তায়। অল্প বয়সী এক কন্যা শিশুর কোরআন তিলাওয়াতে মুগ্ধতার বয়ান মিলেছে অ্যাম্বাসেডর এট লার্জ রাশাদ হোসাইনের টুইটে। উল্লেখ্য, ভারতীয় বংশোদ্ভূত বাইডেনের ওই মুসলিম উপদেষ্টার আইন, দর্শন, রাজনীতিসহ ৪টি সাবজেক্টে উচ্চতর ডিগ্রি গ্রহণের বিষয়টি ব্যাপক প্রচারে থাকলেও তিনি যে কোরআনের হাফেজ তা খোদ বায়োগ্রাফিও উল্লেখ নেই।

মার্কিন দূত তার টুইট বার্তার সঙ্গে জুড়ে দেন অনেকগুলো ছবি, যার একটির ক্যাপশনে লিখেন- অ্যাম্বাসেডর এট লার্জের উদ্দেশ্যে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন থেকে তিলাওয়াত করছেন এক অল্প বয়সী মেয়ে, তার চারপাশে বসে আছেন সহপাঠীরা। বাংলাদেশ সফর নিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় একের পর এক টুইট করেন তিনি। যেখানে লিখেন- বাংলাদেশের জনগণ এবং মার্কিন দূতাবাসের কর্মীদের উষ্ণ অভ্যর্থনার জন্য কৃতজ্ঞ। কক্সবাজারে সরকারি কর্মকর্তা, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি এবং রোহিঙ্গা সমপ্রদায়ের সঙ্গে দেখা করতে পেরে আমি সম্মানিতবোধ করছি। বাস্তুচ্যুত ওই জনগোষ্ঠীর নিধনে সৃষ্ট গণহত্যার বিরুদ্ধে আমাদের কাজ আগের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কক্সবাজার এলাকায় মানবিক কারণে আশ্রয় পাওয়া বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের লাখ লাখ নাগরিকের মধ্যে প্রায় ৩৫ হাজার রোহিঙ্গা রয়েছেন যারা শরণার্থীর মর্যাদা পেয়েছেন। জাতিসংঘের সরাসরি তত্ত্বাবধানে তারা প্রায় তিন দশক ধরে বাংলাদেশে রয়েছেন। ২০১৭ সালের রোহিঙ্গা ঢলের পর ওই শরণার্থীদের থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ফোকাস অনেকটাই নবাগতদের প্রতি। বিশ্ববাসীর উদ্বেগও তাদের নিয়েই।

অ্যাম্বাসেডর এট লার্জের কক্সবাজার সফরকে ঘিরে ৩০ বছর থেকে আটকা শরণার্থীরা মৌলিক দাবি-দাওয়ার প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণে সরব হয়েছেন। একাধিক পোস্টার প্রদর্শন করে মার্কিন দূতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন নয়াপাড়াস্থ শরণার্থীরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তারা প্রতিনিধিরা সক্রিয়। আপিল ফর দ্য জাস্টিজ অব রোহিঙ্গা জেনোসাইড সারভাইভারস নামে একটি অ্যাকাউন্ট থেকে প্রচারিত বার্তায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি জে ব্লিনকেন এবং প্রেসিডেন্টের ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক বিশেষ দূত রাশাদ হোসাইনকে ট্যাগ করে আটকে পড়া রোহিঙ্গারা লিখেন- “মান্যবররা, প্লিজ! আমাদের উদ্ধার করুন। ‘রিফিউজি’ স্ট্যাটাস নিয়ে নয়াপড়ায় বসবাস করা রোহিঙ্গাদের অনেকেই ভুলে গেছেন। বাংলাদেশে নিবন্ধিত শরণার্থী হিসেবে ৩০ বছর ধরে আছি আমরা। ১৯৯২ সাল থেকে আমরা অকথ্য, অবর্ণনীয় ও দুঃখজনক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।” উল্লেখ্য, মার্কিন বিশেষ দূত তার কক্সবাজার সফরের প্রথম টুইটে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিনকেনকে ট্যাগ করেন। এরপর সিরিজ টুইট বার্তায় তিনি লিখেন- রোহিঙ্গা সাংস্কৃতিক স্মৃতি কেন্দ্র বাস্তুচ্যুতদের জন্য তাদের পরিচয় স্ব-সংজ্ঞায়িত করার এবং তাদের অভিজ্ঞতার গভীরতা, সৌন্দর্য এবং স্বতন্ত্রতা প্রদর্শনের জন্য একটি স্থান। তাদের সৃজনশীলতা সহনশীলতার প্রমাণ, একই সঙ্গে এটি উৎসাহব্যঞ্জকও বটে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মসজিদ এবং উপাসনালয় পরিদর্শন শেষে তিনি লিখেন- এজন্য রোহিঙ্গা নেতা এবং ইউএনএইচসিআর-বাংলাদেশ চ্যাপ্টারকে ধন্যবাদ জানাই। যারা স্থানচ্যুত তাদের জন্য নিরাময়ে বিশ্বাস একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হতে পারে।

রাশাদ লিখেন- সকল ধর্মের মানুষের জন্য উপাসনালয়ে প্রবেশাধিকার, তার ধর্ম বা বিশ্বাসের চর্চা স্বাধীনতার একটি অপরিহার্য অংশ। পৃথিবীর কোথাও না কোথাও প্রতিটি ধর্মীয় গোষ্ঠীই সংখ্যালঘু উল্লেখ করে তিনি লিখেন- প্রায়ই তাদের উপর হামলা হয়। আমি গাজীপুরে হিন্দু সমপ্রদায়ের সঙ্গে দেখা করেছি। সেখানকার একটি মন্দির পরিদর্শনের ছবি দিয়ে তিনি লিখেন- গাজীপুরের ওই লোকজন গত অক্টোবরে সামপ্রদায়িক সহিংসতার মুখোমুখি হয়েছিল। আমরা তাদের এবং বাংলাদেশের জনগণের পাশে আছি যারা ঘৃণা ও সহিংসতার অবসান ঘটাতে নিরলস কাজ করছে। বাইডেনের দূত বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা সংক্রান্ত টুইটে লিখেন- বাংলাদেশ প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। তাদের আশ্রয় সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ, রোহিঙ্গাদের প্রতি আমাদের সমর্থন এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে আমি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, ধর্ম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র বিষয়ক সিনিয়র সেক্রেটারিসহ অন্যদের সঙ্গে দেখা করেছি। উল্লেখ্য, সফরের সমাপনী দিনে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধিদের সঙ্গে তার বৈঠক হয়। সফরের প্রথম দিনে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক বিশেষ দূত রাশাদ হোসাইন বাংলাদেশের সংখ্যালঘু ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

ঢাকার পল্টনে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতাদের সঙ্গে পৌনে এক ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে বিশেষ দূত হোসাইন বাংলাদেশে ধর্ম-বিশ্বাসের চর্চা এবং বিদ্যমান ধর্মীয় স্বাধীনতার বিষয়ে জানতে চান। ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রানা দাশগুপ্ত জানান, ক্রমবর্ধমান সামপ্রদায়িকতা ও মৌলবাদী তৎপরতা বাংলাদেশের ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে অস্তিত্বের সংকটে ফেলে দিয়েছে। ভবিষ্যতের নির্বাচন তাদের আরও বেশি শঙ্কাগ্রস্ত করে তুলছে। ওই বৈঠকে ঐক্য পরিষদের ঊষাতন তালুকদার, ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক, নির্মল রোজারিও, দীপেন চ্যাটার্জী, অশোক বড়ুয়া, মনীন্দ্র কুমার নাথ, নির্মল চ্যাটার্জী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আসামে মুসলমানদেরকে ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ ও দমনপীড়ন বন্ধ করুন-ইসলামী ঐক্যজোট

আনসারুল হক

আগামীতে বাংলাদেশ ও সৌদির সম্পর্ক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছাবে

নূর নিউজ

অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধারণ করে সকল নাগরিকের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছি

নূর নিউজ