মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ও ভারত সরকার একযোগে অনেক কর্মসূচি নিয়েছে, যা বন্ধুপ্রতিম এই দুই দেশের মধ্যে আগে কখনও হয়নি।
এবারের বিজয়ের মাসটাকে স্মরণীয় করে রাখতে ৬ ডিসেম্বর দিল্লিতে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মারক বক্তৃতা’ দিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা তথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানাকে।
পাশাপাশি ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে যোগ দিতে ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোভিন্দ তিন দিনের সফরে বাংলাদেশ যাবেন বলেও স্থির হয়েছে। গত ৫০ বছরে বাংলাদেশে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে ভারতের কোনও রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকার-প্রধান অংশ নেননি—সেদিক থেকে এই সফর হবে নজিরবিহীন।
জন্মশতবর্ষে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিকে সম্মান জানাতে দিল্লিতে এখন থেকে প্রতি বছর শেখ মুজিবুর রহমান স্মারক বক্তৃতা আয়োজনের পরিকল্পনা করেছে ভারত। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগী প্রতিষ্ঠান, দিল্লির ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব ওয়ার্ল্ড অ্যাফেয়ার্স’ (আইসিডব্লিউএ)—যারা পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে গবেষণা করে এবং দেশ-বিদেশের বহু অতিথিকে বক্তব্য জানাতে নিয়মিত আমন্ত্রণ জানায়—তারাই নিয়মিত বক্তৃতাটির আয়োজন করবে বলে জানা গেছে।
স্মারক বক্তৃতামালার প্রথম সংস্করণটি দেওয়ার জন্য ভারত যে বঙ্গবন্ধু-কন্যাকে বেছে নিয়েছে, সেটাকে দ্বিপক্ষীয় কূটনীতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলেই মনে করছেন দুদেশের কূটনৈতিক মহল। শেখ রেহানা অবশ্য এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে এই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেননি। কিন্তু পিতার নামাঙ্কিত বক্তৃতা দেওয়ার প্রস্তাবে তার কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া মিলবে বলেই দিল্লি আত্মবিশ্বাসী।
এর আগে ভারত ও বাংলাদেশ যৌথভাবে ঘোষণা করেছিল, যেহেতু একাত্তরের ৬ ডিসেম্বর যুদ্ধের সময়ই স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দিয়েছিল ভারত, তাই তারিখটি স্মরণীয় করে রাখতে ওই দিন ‘মৈত্রী দিবস’ পালন করা হবে।
ফলে সব ঠিক থাকলে এবারের প্রথম মৈত্রী দিবসে দিল্লিতে প্রথম বঙ্গবন্ধু স্মারক বক্তৃতা দেবেন শেখ রেহানা। দিল্লিতে আইসিডব্লিউএ’র সাপ্রু হাউজ মিলনায়তনে সেই বক্তৃতার সময় উপস্থিত থাকবেন ওই প্রতিষ্ঠানের প্রধান তথা ভারতের উপ-রাষ্ট্রপতি ভেঙ্কাইয়া নাইডুও।
এদিকে, বিজয় দিবসের উদযাপনে যোগ দিতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোভিন্দকে। বাংলা ট্রিবিউন জানতে পেরেছে, ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবন সেই আমন্ত্রণে সম্মতিও জানিয়েছেন এবং ডিসেম্বরের ১৫ থেকে ১৭ তারিখের সময়সীমায় তিনি বাংলাদেশ সফরে যাচ্ছেন।
একই সময়ে বাংলাদেশের আমন্ত্রণে ঢাকায় যাওয়ার কথা ভুটানের সাবেক রাজা জিগমে সিঙ্গে ওয়াংচুকেরও। প্রসঙ্গত, ভুটানই বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে প্রথম স্বীকৃতি দিয়েছিল। সেই সিদ্ধান্তে ভূমিকা ছিল ভারতের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর।
গত মাসে বাংলাদেশের নৌ-প্রধানের ভারত সফরের সময়েই স্থির হয়েছিল, ঢাকায় এবারের বিজয় দিবসের উদযাপনে যোগ দিতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি প্রতিনিধিদল ও সামরিক ব্যান্ড বাংলাদেশে যাবে।
ভারতের কোনও রাষ্ট্রপতি শেষবার বাংলাদেশে গিয়েছিলেন আট বছরেরও বেশি আগে। রাষ্ট্রপতি হিসেবে তখন প্রথম বিদেশ সফরে প্রণব মুখার্জি ২০১৩ সালের মার্চে ঢাকায় যান।
এর প্রায় ৯ বছর পর ভারতের কোনও রাষ্ট্রপতির বাংলাদেশ সফর হতে যাচ্ছে সম্পূর্ণ ভিন্ন আবহে ও মুক্তিযুদ্ধের বিজয় উৎসবের পটভূমিতে।