শেখ হাসিনা নির্বাচনে হেরে গেলে দীর্ঘ সংকটে পড়বে বাংলাদেশ

আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনা তথা আওয়ামী লীগ হেরে গেলে বাংলাদেশ দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটে পড়তে পারে বলে সতর্ক করেছে ভারতীয় ম্যাগাজিন ফ্রন্টলাইন। দেশটির প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু পরিচালিত ইংরেজি ম্যাগাজিনটির অনলাইন সংস্করণে গত রোববার (২০ আগস্ট) বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে একটি বিশদ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশের নির্বাচন ঘিরে ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ এশিয়ার স্বার্থ সম্পর্কিত নানা বিষয় উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র ও সম্ভবত একমাত্র নির্ভরযোগ্য অংশীদার হলো শেখ হাসিনার সরকার।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে জো বাইডেনের প্রশাসন বাংলাদেশের ‘গণতান্ত্রিক অধঃপতন’ ঠেকাতে এবং অবাধ ও সুষ্ঠু সংসদ নির্বাচন নিশ্চিত করতে একাধিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ঘোষণা করেছে। তারা র‌্যাবের সাবেক ও বর্তমান বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। নির্বাচনে কারসাজিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞার হুমকিও দিয়েছে ওয়াশিংটন।

যদিও শেখ হাসিনা বরাবরই দাবি করেছেন, বাংলাদেশে সব নির্বাচনই অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। তবু যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলো রাজনৈতিক সমর্থক, কর্মকর্তা ও সরকারি সংস্থাগুলোর লাগাম টেনে ধরতে এবং সব রাজনৈতিক দলকে নির্ভয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিতে তার ওপর চাপ দিচ্ছে।

প্রায় এক দশক ধরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং শেখ হাসিনা শক্তিশালী বিশ্বাস ও আস্থার সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। ভারত-বাংলাদেশ বন্ধনের সাফল্য ভারতের সঙ্গে গঠনমূলক সম্পর্ক অন্য প্রতিবেশীদের কীভাবে উপকারে আসতে পারে সেটি দেখানোর সুযোগ করে দিয়েছে দিল্লিকে।

ফ্রন্টলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনা ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক স্থিতিশীল করেন এবং দেশ থেকে ভারতবিরোধী উপাদান দূর করেন। তবে নয়াদিল্লি এবং ঢাকা আশঙ্কা করছে, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বাইডেন প্রশাসনের সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলো এ সম্পর্ককে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।

বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের ওপর অনেক জোর দেয়। তবে তাদের অতীত ইতিহাস ‘সন্দেহজনক’ রয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র প্রায়ই বিভিন্ন দেশকে গণতান্ত্রিক অধঃপতন রোধের আহ্বান জানায়। কিন্তু যখনই এর সঙ্গে নিজেদের কৌশলগত স্বার্থ জড়িয়ে পড়ে, তারা অন্যদের ক্ষেত্রে একই দোষ উপেক্ষা করে। সুতরাং মূল বিষয় হলো, কেন তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক অধঃপতনের অভিযোগ করা বেছে নিয়েছে।

এর ব্যাখ্যায় ভারতীয় ম্যাগাজিনটি বলেছে, ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ভারত মহাসাগর নিয়ন্ত্রণের জন্য নেতৃস্থানীয় শক্তিগুলোর মধ্যে চলমান ক্ষমতার লড়াইয়ে কোনো পক্ষ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন শেখ হাসিনা।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত ও চীনের কাছে একটি যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে বাংলাদেশ। তারা উভয়েই বাংলাদেশে নিজ নিজ প্রভাব প্রতিষ্ঠা করতে চায়। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় (এলএসি) বিরাজমান উত্তেজনা এই লড়াইকে আরও শক্তিশালী করেছে।

এর মধ্যে নিজেকে জাহির করতে যুক্তরাষ্ট্রের নেওয়া পদক্ষেপ সেই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। বাংলাদেশের ওপর দীর্ঘ ছায়া ফেলেছে চীন-মার্কিন দ্বন্দ্ব।

ভারতীয় ম্যাগাজিনটি লিখেছে, বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের টানাপোড়েন চীনকে শেখ হাসিনা সরকারের কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে।

কিন্তু উদ্ভূত এই পরিস্থিতিকে ‘দ্বিগুণ আঘাত’ হিসেবে দেখছে ভারত। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতার কারণেই প্রত্যাশা বেড়েছে যে, শেখ হাসিনার পক্ষে বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলবে ভারত। আর ঢাকার পাশে চীনের দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত বিষয়টিকে আরও অপরিহার্য করে তুলেছে। যুক্তরাষ্ট্র এটি না মানলে ভারতের ক্ষতি হতে পারে।

ফ্রন্টলাইনের মতে, ভারত আশঙ্কা করছে, শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হলে বাংলাদেশে বৈরী সম্পর্কের সরকার আসতে পারে। চীন বিএনপির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছে, যাদের নেতৃত্ব পাকিস্তানেরও ঘনিষ্ঠ। তাই বিএনপি ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশে চীনের স্বার্থ বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা কম।

বেশিরভাগ হিসাব-নিকাশ বলছে, শেখ হাসিনা নির্বাচনে হেরে গেলে বাংলাদেশ বহু বছরের জন্য রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার মুখে পড়তে পারে এবং সন্ত্রাসী ও মৌলবাদী শক্তির আড্ডায় পরিণত হতে পারে। তাই আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায় শুধু ভারতের জন্য নয়, গোটা অঞ্চলের জন্যই উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

ঈদ পরবর্তী দুর্ঘটনা রোধে সড়কে তদারকি বাড়ানোর নির্দেশ সেতুমন্ত্রীর

নূর নিউজ

বাংলা ভাষায় এক নির্যাতিত শব্দ ‘সংস্কৃতি’ : মাওলানা ইউসুফ নূর

আলাউদ্দিন

আল্লামা তাকি উসমানিকে হত্যাচেষ্টা

আনসারুল হক