জুবায়ের আহমদ, বিশেষ প্রতিবেদক:
বিশ্বব্যাপী চলছে করোনা মহামারি। এরই মধ্যে দেশে দেখা দিয়েছে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব। সঙ্গে আছে মৌসুমি সর্দি-জ্বর। সব মিলিয়ে দেশে এখন ঘরে ঘরে জ্বর। এ অবস্থায় হঠাৎ বেড়ে গেছে প্যারাসিটামল ট্যাবলেটের চাহিদা। আর এ সুযোগে দামও বাড়িয়ে নিচ্ছেন দোকানিরা। ওষুধ কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে দাম বাড়ানো না হলেও আগের চেয়ে বেশি দামেই বহুল পরিচিত কয়েকটি ব্র্যান্ডের প্যারাসিটামল ট্যাবলেট বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। এ জন্য সরবরাহ সংকটকেই যুক্তি হিসেবে দাঁড় করাচ্ছেন তাঁরা। যদিও ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর বলছে, বাজারে সার্বিকভাবে প্যারাসিটামল ট্যাবলেটের সংকট নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাজারে বেক্সিমকো কোম্পানির নাপা–৫০০, নাপা এক্সটেন্ট ও নাপা এক্সট্রা, স্কয়ার ফার্মার এইচ–৫০০, এইচ এক্সআর, এইচ প্লাস ও এইচ পাওয়ার, অপসোনিন কোম্পানির রেনোভা–৫০০, রেনোভা এক্সআর ও রেনোভা প্লাস এবং অ্যারিষ্টোফার্মার এক্সপা এক্সআর ট্যাবলেট আগে রচেয়ে বশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর পুরান ঢাকার লালবাগ এলাকার মডেল ফার্মেসি আলিফ লাম মিম–এর বিক্রয় প্রতিনিধি জান্টু খন্দকার বলেন, ঈদের আগে থেকে বাজারে বেক্সিমকো ফার্মার নাপা, নাপা এক্সটেন্ট ও নাপা এক্সট্রা এবং স্কয়ার ফার্মার এইচ ট্যাবলেটসহ বড় কোম্পানিগুলোর তৈরি প্যারাসিটামল ট্যাবলেটের সরবরাহ সংকট রয়েছে। আর এ কারণে ৮০ পয়সার ৫০০ মিলির প্যারাসিটামল ১ থেকে এক টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রি হচ্ছে। ১ টাকা ৫০ পয়সার নাপা এক্সটেন দুই টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কেরানীগঞ্জের কালিন্দী ভাংনা মসজিদ রোডে অবস্থিত মেসার্স আসলাম ফার্মার মালিক শফিক হোসেন জানান, বাজারে স্কয়ার, বেক্সিমকোসহ বিভিন্ন কোম্পানির তৈরি প্যারাসিটামল ট্যাবলেটর চাহিদা বেড়েছে। আর এতে দামও বেড়েছে। আগে ৫০০টি প্যারাসিটামল ট্যাবলেট কিনতেন ৩৫০ টাকায়। বর্তমানে তা ৬০০ টাকাও সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানান তিনি।
রাজধানীর সেগুনবাগিচার অপেরা ফার্মার বিক্রয় প্রতিনিধি জানান, বেক্সিমকো ও স্কয়ার কোম্পানির প্যারাসিটামল ট্যাবলেটের সংকট রয়েছে। আগে ১০টি নাপা ট্যাবলেট তিনি ৮ টাকায় বিক্রি করতেন। বর্তমানে তা ১০ টাকায় বিক্রি করছেন তিনি। তবে কোথাও কোথাও আরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
করোনা ও ডেঙ্গুর এই মৌসুমে জ্বরে আক্রান্ত রোগী বেড়ে যাওয়া প্যারাসিটামলের ব্যবহারও বেশি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মেডিসিন রোগ বিশেষজ্ঞ স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আবু আজহার। তিনি বলেন, ব্যবস্থাপত্রে নামি–দামি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ওষুধ বেশি লেখা হয়। আর এ কারণে হয়তো তাদের ওষুধ সরবরাহ সংকট থাকতে পারে। তবে বাজারে প্যারাসিটামল ট্যাবলেটর সংকট হবে না।
প্যারাসিটামলের সরবরাহে কোন সংকট চলছে কী না জানতে চাইলে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাব্বুর রেজা আজকের পত্রিকাকে বলেন, বাজারে প্যারাসিটামল যত চাহিদা রয়েছে তার ৫০ ভাগই বেক্সিমকো কোম্পানি পূরণ করে। সম্প্রতি প্যারাসিটামল ট্যাবলেটের চাহিদা বাড়ায় কোম্পানির পক্ষ থেকে ৩০ শতাংশ বেশি ওষুধ বাজারে সরবরাহ করা হয়েছে। এরপরও কেন সংকট হলো বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে। কিন্তু করোনার কারণে সেটিও করা যাচ্ছে না।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বাজারে প্যারাসিটামল ট্যাবলেটের সংকট নেই। তবে কয়েকটি কোম্পানির ওষুধ বেশি ব্যবহার হওয়ায় তাদের সংকট চলছে।
নূর নিউজ/জু.আ