সরকার পতনের এক দফা: নতুন কর্মসূচি নিয়ে আসছে বিএনপি

সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে রাজপথে চূড়ান্ত আন্দোলনে যেতে সেপ্টেম্বরকেই টার্গেট করছে বিএনপি। নিজ দল, সমমনা দল ও জোটের সিদ্ধান্ত এবং দেশি-বিদেশি শুভাকাঙ্ক্ষীদের পরামর্শে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিরোধী দলটি। অক্টোবর মাসে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার আগেই দাবি আদায়ে রাজপথেই ফয়সালা করতে চায় তারা।

এ সময়ে ঢাকার রাজপথ নিয়ন্ত্রণে নেয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন সমমনা দল ও জোট। কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সাংগঠনিক শক্তি ও নতুন কৌশল নিয়েই মাঠে নামার সার্বিক প্রস্তুতি নিচ্ছে দলগুলো। বিএনপি নেতাদের আশা, সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সংঘাতের দিকে ঠেলে দেয়ার চেষ্টা করলেও তারা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনেই লক্ষ্য পূরণের চেষ্টা করবেন।

সূত্র জানায়, সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে চূড়ান্ত আন্দোলনের সময়সীমায় কিছুটা পরিবর্তন এনেছিল বিরোধী দল। আগে সেপ্টেম্বর মাসকে টার্গেট করলেও জুলাইয়ের শেষে এসে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আগস্ট মাসের মধ্যেই রাজপথে চূড়ান্ত ফয়সালার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি।

সে পরিকল্পনা অনুযায়ী সারাদেশ থেকে মহাসমাবেশে আসা নেতাকর্মীকে দাবি আদায় ছাড়া ঘরে ফিরে না যাওয়ার নির্দেশনাও দিয়েছিলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একই সঙ্গে আন্দোলনে নতুন ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হিসেবে পরদিন ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচিও ঘোষণা করেন তিনি। নেতাকর্মীকে আগে থেকেই টানা এক সপ্তাহের প্রস্তুতি নিয়ে ঢাকায় আসতে বলেছিল দলটি।

দলীয় সূত্র জানায়, এক দফা আন্দোলনে কিছুটা ‘ছন্দপতন’ হলেও নতুন করে নিবিড় হিসাব-নিকাশ করছে বিএনপি। যুগপৎ আন্দোলনে সমমনা দল ও জোটের সঙ্গে গত কয়েকদিন ধরে দফায় দফায় বৈঠক করে আন্দোলনের নতুন কর্মসূচির পরিকল্পনা করছে তারা। সফল মহাসমাবেশের পরদিন ঢাকার প্রবেশমুখে অপরিকল্পিত অবস্থান কর্মসূচিতে নেতাকর্মীর উপস্থিতি কম হওয়ায় এবার ‘সতর্কতার’ সঙ্গে নতুন কর্মসূচি নেবে বিরোধী দলগুলো। নিজ দলের নেতাকর্মী, সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘ভূমিকা’ মূল্যায়ন করেই আগস্টব্যাপী ধারাবাহিক আরও জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।

সূত্র জানায়, যুগপৎ আন্দোলনের শরিক সমমনাদের সঙ্গে এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত নিয়ে চলতি সপ্তাহে ঘোষণা করা হবে নতুন কর্মসূচি। আগস্ট মাসে সম্ভাব্য জনসম্পৃক্ত নতুন কর্মসূচির মধ্যে থাকতে পারে ঢাকাসহ বিভাগীয় ও জেলা শহরে সমাবেশ, অবস্থান, পদযাত্রা, রোডমার্চ ইত্যাদি। দলীয় কর্মসূচির পাশাপাশি সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশাজীবী, নারী, শ্রমিকদের সম্পৃক্ত করার কর্মসূচি নেয়া হবে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আন্দোলন কখনও চূড়ান্ত দিনক্ষণ দিয়ে হয় না। জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে একটি সময়ে স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান ঘটে। ইতোমধ্যে বিএনপির মহাসমাবেশে বিপুলসংখ্যক মানুষের উপস্থিতিতে সরকারকে সেই বার্তাই দেয়া হয়েছে। দেশপ্রেমিক জনগণকে নিয়ে বিএনপি ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের আন্দোলন করছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, শিগগির গণআন্দোলনে বর্তমান অবৈধ সরকারের পদত্যাগ ঘটিয়ে জনগণের ভোটে প্রকৃত গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে। দাবি আদায়ে নতুন কর্মসূচি দেয়ার ব্যাপারে আমরা দল ও সমমনাদের সঙ্গে বৈঠক করছি। শিগগির নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। রাজনীতিতে উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনা করেই কর্মসূচির গতি-প্রকৃতি পরিবর্তন করতে হয়।

বিএনপির নীতিনির্ধারক নেতারা জানান, দুই মাসের মধ্যে সফল আন্দোলনের মাধ্যমে ফসল ঘরে তুলতে হলে ঢাকার রাজপথ নিয়ন্ত্রণে নিতে হবে। সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের কঠোর অবস্থানের মুখোমুখি হতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। একই সঙ্গে সফল মহাসমাবেশের পরদিন ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি সফল না হওয়ায় খোদ বিএনপি ও সমমনাদের মধ্যে চলছে আত্মসমালোচনা। সেদিন কেন দলের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেননি? দায়িত্ব পালনে কোথাও কোনো ঘাটতি ছিল কিনা? এ ঘটনায় দলের যারা দায়ী ও দোষী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অবশ্য দলটির নেতাদের দাবি, মহাসমাবেশ করে জনপ্রিয়তার বার্তা দিয়েছে বিএনপি। আবার পুলিশও তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এতে সরকার পরোক্ষভাবে সহিংসতার দিকে উস্কে দিচ্ছে। জনগণকে বাধ্য করেছে আত্মরক্ষা করতে। ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশমুখে তার ‘ড্রেস রিহার্সেল’-এর বিষয়টিও বিবেচনায় থাকছে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি বিচার ও বিশ্লেষণ করেই এবার যথেষ্ট প্রস্তুতি ও নতুন কৌশল নিচ্ছে বিরোধী দলগুলো।

সূত্র: সমকাল

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আওয়ামী লীগ দেশটাকে পারিবারিক সম্পত্তি বানিয়েছে: জিএম কাদের

নূর নিউজ

ডুবে যাওয়া লঞ্চে মিলল আরও ২২ মরদেহ

আলাউদ্দিন

ঢাকা থেকে বিদায় নিচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলার

নূর নিউজ