সাদাকাতুল ফিতর : কে, কাকে, কখন দেবেন

মুফতী মুহাম্মদ ইসমাঈল

সদকাতুল ফিতরকে আমরা ‘ফিতরা’ বলে জানি। রমাদান ও ঈদুল ফিতরের সাথে এটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। নবীজি ইরশাদ করেছেন, “যতক্ষণ পর্যন্তÍ সদকাতুল ফিতর আদায় করা না-হয়, ততক্ষণ আসমান ও জমিনের মাঝখানে রোযা ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে”। (কানজুল ওম্মাল)

ফিতরা কাদের উপর ওয়াজিব

যারা নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক, তাদের উপর ফিতরা ওয়াজিব। ওয়াজিব মানে আবশ্যক। এটির নিসাব যাকাতের নিসাবের মতো। নিত্যপ্রয়োজনীয় সম্পদ ব্যতীত সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার সমমূল্যের সম্পদ থাকা। তবে এক্ষেত্রে একবছর স্থায়ী হওয়া শর্ত নয়। ঈদের দিন সুবহে সাদিকের সময় ঐ পরিমাণ সম্পদের মালিক হলেই ফিতরা ওয়াজিব। ফিতরার জন্য বালেগ হওয়া শর্ত নয়।
সুতরাং ঈদের দিন সকালে জন্মগ্রহণ করা শিশুর পক্ষ থেকেও ফিতরা আদায় করতে হবে। পুরুষ অভিভাবক তার নাবালেগ সন্তানদের পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করবে; তবে মায়ের দায়িত্বে থাকা নাবালেগ সন্তানদের ফিতরা দেয়া তার উপর ওয়াজিব নয়। পিতা না থাকলে সন্তানদের দায়িত্ব পিতামহ বা দাদা গ্রহণ করবে; যদি দাদা বেঁচে থাকে। বালেগ সন্তানের দায় পিতার উপর নেই, তবে আদায় করলে আদায় হয়ে যাবে। কোনো কারণে রোযা রাখতে না-পারলেও ফিতরা আদায় করতে হবে। (বাহারে শরিয়ত, রদ্দুল মুখতার, আলমগীরী)

ফিতরা কাদের দেবেন

যাদের যাকাত দেয়া যায়, তাদের ফিতরাও দেয়া যাবে। অর্থাৎ, সকল প্রকার গরিব, মিসকিন, ঋণগ্রস্ত, মুসাফির ও হতদরিদ্রদের ফিতরা দেয়া যাবে। তবে ফিতরা উত্তোলনকারী (নিয়োজিত ব্যক্তি) এ পর্যায়ে পড়বে না। তবে সে যদি যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত হয়, তাকেও ফিতরা দেওয়া যাবে। (রদ্দুল মুখতার)

ফিতরা কখন দেবেন

ঈদের দিন সকালেই ফিতরা দেয়া সুন্নাত। (দাতা ও গ্রহীতার সুবিধার্থে রমাদানের যে কোনো সময়ও প্রদান করা যায়) আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, “নবীজি (সা.) ঈদের নামাযের জন্য বের হবার পূর্বেই সদকাতুল ফিতর আদায়ের নির্দেশ দিতেন।” (সহিহ বুখারি)।

সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হয় মূলত ঈদের দিন সুবহে সাদিকের পরপর। হাদিসের ভাষ্যমতে সুবহে সাদিকের পর থেকে ঈদের নামাযের আগে দেওয়াই উত্তম। তবে এ-সময়ে দেয়া সম্ভব না-হলে এর আগে বা পরেও দেয়া যাবে। (আলমগীরী)

ফিতরার পরিমাণ

ফিতরার পরিমাণ সম্পর্কেও অনেকগুলো হাদিসে বর্ণনা এসেছে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, “নবীজি (সা.) সদকাতুল ফিতরের পরিমাণ হিসেবে এক সা পরিমাণ খেজুর অথবা এক সা পরিমাণ যব দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। অতঃপর লোকেরা যবের সমপরিমাণ হিসেবে অর্ধ সা গম দিয়েও আদায় করতে থাকে।” (সহিহ বুখারি)

উল্লেখ্য, বর্তমান এক সা সমান প্রায় চার কেজি একশ গ্রাম। সুতরাং অর্ধ সা সমান দুই কেজি পঞ্চাশ গ্রাম। মহামারি অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ বা খাদ্যসঙ্কট দেখা দিলে খাবার দিয়ে আদায় করাই উত্তম। তখন ঐ অঞ্চলের খাদ্যাভ্যাসে যেটি অগ্রগণ্য, খেজুর বা যবের টাকা হিসাব করে ঐ টাকায় যতটুক পরিমাণ প্রয়োজনীয় খাদ্য পাওয়া যায়, তা-ই দিতে হবে। এছাড়া নগদ অর্থ দিয়ে আদায় করা উত্তম। ২০২৫ সালের ফিতরার হার নির্ধারণ করা হয়েছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ঘোষণা অনুযায়ী, এবার জনপ্রতি সর্বনিম্ন ফিতরা ১১০ টাকা ও সর্বোচ্চ ২,৮০৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর এই হার ছিল যথাক্রমে ১১৫ টাকা ও ২,৯৭০ টাকা।সামর্থ্যবানরা সর্বোচ্চ পরিমাণকেই গ্রহণ করবে। সর্বোচ্চ পরিমাণের বেশি কেউ দিলে অতিরিক্ত অংশটি সাধারণ দান হিসেবে গণ্য হবে।

লেখক : বিশিষ্ট দাঈ ও প্রিন্সিপাল, আন-নূর কালচারাল সেন্টার, নিউইয়র্ক

এ জাতীয় আরো সংবাদ

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন মসজিদ মাদরাসায় মুফতি শহিদুল ইসলাম রহ. এর জন্য দোয়া

নূর নিউজ

নবীজির রওজা জিয়ারতের সময় যেসব ভুল করবেন না

নূর নিউজ

আল্লাহ তায়ালার রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম

নূর নিউজ