সাদা-কালো নেই ভেদাভেদ, খাবার-সংস্কৃতি ভাগাভাগির অনন্য উৎসব

পবিত্র মাস রমজান। মুসলিমদের কাছে আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য বছরের সবচেয়ে সেরা সময় এটি।

রমজানে কানাডায় মুসলিমদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করে —ছবি সংগৃহীত
প্রতিটি দেশেই রমজান মাস নিয়ে মুসলিমদের মধ্যে রয়েছে আলাদা সংস্কৃতি। তবে সবার উদ্দেশ্য এক তা হলো- আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও পবিত্র মাসের তাৎপর্য মেনে চলা। বিশ্বের ১৬০ কোটি মুসলিম ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে রমজান মাস উপভোগ করছেন। বিশ্বের অন্যতম উন্নত দেশ কানাডায়ও রমজানে বিশেষ উৎসবের আমেজ বিরাজ করে মুসলিম কমিউনিটির মধ্যে। ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির ও ভিন্ন ভিন্ন দেশের সব মুসলিমরা একত্র হোন এক উদ্দেশ্যে এবং একই উৎসবে।

অনন্য কানাডিয়ান রমজান সংস্কৃতি

কানাডায় মুসলিম কমিউনিটি বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে রমজানের একটি অনন্য সংস্কৃতির উদ্ভব হচ্ছে। মসজিদে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মুসলিমরা রোজা ভাঙ্গার জন্য একত্রিত হন। এসময় একটি চমৎকার পরিবেশের সৃষ্টি হয়। ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির মিলনমেলায় পরিণত হয়।

রমজানজুড়ে বিভিন্ন দেশের মুসলিমরা তাদের ঐতিহ্যবাহী খাবার রান্না করেন। কমিউনিটির অন্যান্যদের সঙ্গে সেসব খাবার ভাগাভাগি করেন। প্রায় প্রতিটি মহাদেশের খাবারের স্বাদ নিতে পারেন মুসলিমরা। এর মধ্যে যেমন রয়েছে ভারতীয় উপমহাদেশের স্বাদের বিরিয়ানি, তেমন রয়েছে ইথিওপিয়ান ইনজেরা বা ইউক্রেনিয়ান পেরোজিও।

বাচ্চাদের বিশেষ স্মৃতিতে ব্যস্ত বাবা-মা

রমজানে মুসলিম পরিবারগুলো বাচ্চাদের বিশেষ স্মৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে চায়। তারা রমজানের বিভিন্ন খাবারের আয়োজনসহ ধর্মীয় নানা বিষয় শিক্ষা দেন। যাতে শিশু তাদের ধর্মীয় সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারে এবং নিজের অস্তিত্ব সম্পর্কে ভালো ধারণা পেতে পারে। অনেক পরিবার কমিউনিটির অন্যান্য বাচ্চাদের নিয়ে স্লিপওভারের আয়োজন করে। যেখানে বাচ্চারা খাবার ভাগ করে নেয় এবং মজা করে। তারা যতক্ষণ চায় ততক্ষণ জেগে থাকতে পারে।

সংস্কৃতি ভাগাভাগি করার সুযোগ

রমজান কানাডার মুসলিমদের কাছে সংস্কৃতি ভাগাভাগির একটি অনন্য সুযোগ নিয়ে আসে। শিশুরা স্কুলে গিয়ে সহপাঠী ও শিক্ষকদের কাছে রমজান সম্পর্কে কথা বলতে উত্তেজিত থাকে। বড়রা তাদের কর্মস্থলে সহকর্মীদের সঙ্গে নিজের সংস্কৃতি ভাগাভাগি করেন। এটি রমজানের সাংস্কৃতিক এবং আধ্যাত্মিক দিকগুলো ভাগ করে নেওয়া এবং মুসলিম হওয়ার বিষয়ে তাদেরকে একটি ধারণা দেয়।

প্রতিবেশী মুসলিমদের আলংকারিক লণ্ঠন উপহার দেন অন্য মুসলিমরা। এটি রমজানের আরবীয় সংস্কৃতি যা কানাডার মুসলিমদের মধ্যে বেশ শক্ত অবস্থান করে নিয়েছে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে মুসলিমরা এসব লণ্ঠন বিতরণ করেন।

কানাডায় রমজান অনেকটাই শান্ত

মুসলিম প্রধান দেশগুলোর মতো কানাডায় রমজানে হৈ-হুল্লোড় হয় না। সেখানকার রমজান অনেকটাই শান্ত। বিভিন্ন দেশ থেকে আসা এসব মুসলিমরা তাদের দেশে রমজানের বিশাল আয়োজনের কথা স্মরণ করেন। কানাডায় শান্তভাবে পালিত হয় রমজান। মুসলিমরা মসজিদে একত্রিত হন এবং ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে রমজান উদযাপন করেন। কানাডায় রমজান তেমন পাবলিক না হলেও সবার মধ্যে মনোযোগ থাকে শতভাগ।

বেশ কয়েক বছর ধরে উইনিপেগের গ্র্যান্ড মসজিদ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ইফতারের আয়োজন করে আসছে এবং বার্ষিক ‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস’ ইভেন্টটি রমজানে মুসলিমদের সাহায্য করে। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন মসজিদে ইফতারির বিশাল আয়োজন করা হয়। দিনভর পরিশ্রম করেও শিশুদের নিয়ে মসজিদে হাজির হন অনেকে।

কানাডা ন্যাশনাল হাউসহোল্ড সার্ভে অনুযায়ী, কানাডায় বাস করে ১০ লাখেরও বেশি মুসলমান। বিদেশি নাগরিকদের ক্ষেত্রে কানাডা বিশ্বের অন্যতম গ্রহণযোগ্য দেশ হিসাবে পরিচিতি পাওয়ার কারণে বৈচিত্র্য এবং বহুসংস্কৃতির মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। দেশটির প্রতিটি প্রদেশেই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুসলিম রয়েছে। তবে মুসলিমদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি- অন্টারিও, কুইবেক, আলবার্টা, ব্রিটিশ কলাম্বিয়া ও ম্যানিটোবা।

বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সবচেয় বেশি সময় ধরে রোজা রাখতে হয়, কানাডা তার মধ্যে অন্যতম। দেশটিতে এ বছর জায়গা ভেদে প্রায় ১৬ ঘণ্টা রোজা পালন করতে হচ্ছে। দীর্ঘ সময়ের রোজা রেখেও বেশিরভাগ মুসলিম তাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। রমজান আসলে বেশিরভাগ কর্মস্থলেই তারা সহকর্মীদের কাছ থেকে উষ্ম অভ্যর্থনা পেয়ে থাকেন।

রমজান মাসে বাংলাদেশের মতো এখানেও বাঙালিরা ছোলা মুড়ি মেখে মুয়াজ্জিনের আজানের ধ্বনির অপেক্ষায় থাকেন। ইফতারের আয়োজনে থাকে পেঁয়াজি, কলা, আলুর চপ, জিলাপি, খেজুর, চিকেন হালিম আর শরবত। বিশেষ খাবার হিসেবে কমলা, আঙুর, আপেলসহ নানা দেশের বৈচিত্র্যময় ফল। বাংলাদেশি হোটেলগুলোতেও ইফতারিসহ খিচুড়ি ও বিরিয়ানির বেচাকেনা চলে জমজমাটভাবে।

রমজান মাস শেষে মুসলিমরা ঈদের আনন্দে মাতেন। এ উপলক্ষে রমজান মাসে নতুন জামাকাপড়সহ নানা কেনাকাটা করেন। বাচ্চাদের নতুন নতুন জিনিস কিনে দেন। এছাড়া প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনদের দাওয়াত দেন এবং একসঙ্গে ঈদ উদযাপন করেন। সূত্র: সিবিসি, এইচআররিপোর্টার ডট কম, কানাডিয়ান ভিসা ডট ওআরজি।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

পুলিশের গুলিতে আবার কৃষ্ণাঙ্গ তরুণ নিহত, যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভ

আনসারুল হক

একাত্তরে পাকিস্তানের গণ’হত্যা নিয়ে মার্কিন পার্লামেন্টে প্রস্তাব

নূর নিউজ

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন মসজিদ মাদরাসায় মুফতি শহিদুল ইসলাম রহ. এর জন্য দোয়া

নূর নিউজ