প্রখ্যাত সিরিয়ান দার্শনিক আলেম শায়খ জাওদাত সাঈদ ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। স্থানীয় সময় গত রোববার ভোরে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯১ বছর।
তিনি সিরিয়ান হলেও জীবনের শেষ বয়সে ২০১১ সালে মাতৃভূমি ছেড়ে তুরস্কে চলে আসেন এবং এখানেই তার ইন্তেকাল হলো। সিরিয়ায় শায়খ জাওদাত সাঈদ নিজে এবং পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার পর তুরস্কে পাড়ি জমান এবং তুর্কিরা তাকে সাদরে গ্রহণ করেন।
তার বৈপ্লবিক মনোভাবের কারণে যৌবনেই তিনি গ্রেফতার হন, পরে তাকে আরো একাধিকবার গ্রেফতার করে অনেক জুলুম-নির্যাতন করা হয়, কিন্তু তিনি তার আদর্শ থেকে বিচ্যুৎ হননি। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাসার আল আসাদের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থানের সমর্থক ছিলেন তিনি। তবে সবসময়ই চাইতেন সহিংসতামুক্ত শান্তিপূর্ণ আন্দোলন হোক। তবে জুলুমের সাথে আপোস চাইতেন না।
তিনি বলতেন, পৃথিবীতে এমন কোনো শক্তি নেই, যা বল প্রয়োগের মাধ্যমে মানুষের বিশ্বাস ও চিন্তাকে পরিবর্তন করে পারে। পবিত্র কুরআন আমাদের উপদেশ দেয় যে, উৎসাহে চাপ প্রয়োগ না করতে। কেননা, বল প্রয়োগ নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
শায়খ জাওদাত সাঈদ ১৯৩১ সালে সিরিয়ার আল কুনাইতরা জেলার বিরে আজম গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পড়াশোনা মিসরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার আরেকটি বড় পরিচয়, তিনি আলজেরিয়ার মহান মুজাহিদ আলেম, সমাজ দার্শনিক মালিক বিন নবীর সরাসরি ছাত্র। তার পাঠকনন্দিত অনেকগুলো বই আছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, হাত্তা ইয়ুগাইয়্যারু মা ফি আনফুচিহিম, মাজহাবু ইবনু আদাম আল আওয়াল, ফিকদানুত তাওআজুন আল ইজতিমায়ি এবং আল আমালু কুদরাতু ইদারাতিন।
তার মৃত্যুতে তুরস্ক রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক জানিয়েছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ইব্রাহিম কালিন শোকবার্তায় বলেন, মহান এই আলেমের রূহের মাগফিরাতের দোয়া করছি। তিনি গুরুত্বপূর্ণ অনেক কিছু রেখে গেছেন। মহান চিন্তার অধিকারী ছিলেন তিনি। আশাকরি তার আশ্রয়স্থান হবে জান্নাত।
একইসাথে তুরস্কের ধর্ম বিষয়ক প্রধান আলি এরবাশ, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব মুসলিম স্কলারস (বিশ্ব মুসলিম ওলামা সংঘ)-এর সেক্রেটারি জেনারেল শায়খ আলি মুহিউদ্দিন কারাদাগিসহ বিশ্বব্যাপী অনেক ইসলামী স্কলার শায়খ জাওদাত সাঈদের ইন্তেকালে শোক জানিয়েছেন।
সূত্র : আনাদোলু এজেন্সি, আলজাজিরা ও বিবিসি