সুস্থতা ও অবসর অমূল্য সম্পদ

সুস্থ-সুন্দর জীবন কে না চায়? সেই সাথে দুনিয়ার হাজারো ব্যস্ততার মাঝে মানুষ অন্বেষণ করে একটুখানি স্বস্তি-শান্তিময় অবসর। কিন্তু বহু কাঙ্ক্ষিত সুস্থতা আর অমূল্য সম্পদ অবসর মানুষ কতটা কাজে লাগায়?

ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত—

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, এমন দু’টি নিয়ামত আছে, যে দুটোতে অধিকাংশ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। তা হচ্ছে, সুস্থতা আর অবসর। (বুখারি ৬৪১২)

মানুষ জীবনের মূল লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের ব্যাপারে যারপরনাই উদাসীন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কুরআন মাজিদে বলেন, তোমরা জেনে রেখো, দুনিয়ার জীবন ক্রীড়া-কৌতুক, শোভা-সৌন্দর্য, পারস্পরিক গর্ব-অহঙ্কার আর ধন-মাল ও সন্তানাদিতে আধিক্যের প্রতিযোগিতা মাত্র । তার উদাহরণ হলো বৃষ্টি, আর তা থেকে উৎপন্ন শস্যাদি কৃষকের মনকে আনন্দে ভরে দেয়, তারপর তা পেকে যায়, তখন তুমি তাকে হলুদ বর্ণ দেখতে পাও, পরে তা খড়কুটা হয়ে যায় । (আর আখিরাতের চিত্র অন্যরকম, পাপাচারীদের জন্য), আখিরাতে আছে কঠিন শাস্তি, (আর নেককারদের জন্য আছে) আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টি । আর দুনিয়ার জীবনটা তো ধোঁকার বস্তু ছাড়া আর কিছুই নয়। (আল-হাদিদ-২০)

দুনিয়া দুনিয়া করে মানুষ পাগলপারা। একে-অপরের দিকে তাকিয়ে কেবল‌ই হা‌হুতাশ; অমুকের অমুক হলো; কিন্তু আমি কী পেলাম? মানুষের স্বভাব‌ই যেন শুধু অন্যের ধনসম্পদ দেখে আফসোস আর আক্ষেপ করা। অথচ চিন্তা করলে দেখা যাবে আমার চেয়ে অনেক অভাবী অসহায় মানুষ সমাজে বিদ্যমান। তবু কেবল‌ই মানুষের দৃষ্টি তার উপরের দিকে। তাই লোভের তাড়নায় মানুষ আত্মপরিচয় ভুলে যায়। ভুলে যায় তার স্রষ্টা মহান প্রতিপালক আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের বড়ত্বের কথা। আর তখন সমাজ সংসারে বিবিধ সমস্যা সঙ্কটে আল্লাহকে ছেড়ে সে তারই মতো আরেক মাখলুক মানুষের মুখাপেক্ষী হয়ে পড়ে।

কেউ কেউ আবার তথাকথিত পীর ফকির কবর মাজারের পূজারী হয়ে যায়। আল্লাহর নাম ভুলে গিয়ে খাজাবাবার নাম জপতে থাকে; মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়লাকে ছেড়ে বিভিন্ন জায়গায় ঠোকর খায়। মাজারে শায়িত ব্যক্তির কাছে ছেলে চায় মেয়ে চায়; আরো চায় বাড়ি গাড়ি নারী সম্পদ।

এভাবে শিরক-বিদআতের আখড়ায় গিয়ে সঠিক পথ হারিয়ে পুণ্যের পরিবর্তে পাপের পঙ্কিলতায় ডুবে যায়।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দেয়া অন্যতম নিয়ামত সুস্বাস্থ্য আর অমূল্য অবসরকে অবজ্ঞা ও অবহেলা করে দিন ফুরিয়ে যায়। বিবেক বিবেচনা ও ভালো মন্দের বাছবিচার এমনভাবে লোপ পায় যে, একপর্যায়ে মহামূল্যবান ঈমানটাও সে হারিয়ে ফেলে। পবিত্র কুরআন মাজিদ এবং হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মহান বাণী ছেড়ে সে তখন যোজন যোজন দূরে চলে যায়।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কুরআনুল কারিমে বলেন, আর তিনিই মহান আল্লাহ তায়ালা, (তিনি) ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই; সব প্রশংসা তাঁর জন্য দুনিয়াতে (যেমন) এবং আখেরাতেও (তেমনি), আইন ও বিধান তাঁরই, তোমাদের তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে।

(হে নবী,) এদের জিজ্ঞেস করো, তোমরা কি কখনো ভেবে দেখেছো, যদি আল্লাহ তায়ালা রাতকে তোমাদের ওপর কেয়ামতের দিন পর্যন্ত স্থায়ী করে দেন তাহলে আল্লাহ তায়ালা ছাড়া এমন কোন মাবুদ আছে যে তোমাদের একটুখানি আলো এনে দিতে পারবে; (তারপরও) তোমরা কর্ণপাত করবে না?

তুমি (আরো) বলো, তোমরা কখনো এ কথা কি ভেবে দেখেছো, আল্লাহ তায়ালা যদি দিনকেও (রোজ) কেয়ামত পর্যন্ত (স্থায়ী করে) তোমাদের ওপর বসিয়ে দেন, তাহলে (বলো) আল্লাহ তায়ালা ছাড়া আর কোন মাবুদ আছে যে তোমাদের (জন্য) রাত এনে দিতে পারবে, যেখানে তোমরা এতটুকু বিশ্রাম নেবে, তোমরা কি (আল্লাহ তায়ালার এ নেয়ামত) দেখতে পাও না?

এটা তো তাঁরই রহমত যে, তিনি তোমাদের জন্য রাত ও দিন বানিয়েছেন। যাতে করে তোমরা (রাতে) আরাম করতে পারো এবং (দিনের বেলায়) তাঁর (জীবিকার) অনুগ্রহ সন্ধান করতে পারো, যেন তোমরা তাঁর শোকর আদায় করতে পারো।

সেদিন (আবার) আল্লাহ তায়ালা তাদের ডাক দেবেন এবং বলবেন, কোথায় (আজ) আমার সেসব শরিক যাদের তোমরা (আমার সার্বভৌমত্বে) অংশীদার মনে করতে।

সেদিন আমি প্রত্যেক জাতির মাঝ থেকে এ‌কেকজন সাক্ষী বের করে আনব, অতঃপর (তাদের) বলবা, তোমরা (সবাই তােমাদের পক্ষে) দলিল প্রমাণ হাজির করো, (সে দিন) ওরা সবাই বুঝতে পারবে, (যাবতীয় সত্য) একমাত্র আল্লাহ তায়ালার জন্যই নির্ধারিত, তারা (আল্লাহ তায়ালা সম্পর্কে) যেসব কথা উদ্ভাবন করতো তা নিমিষেই তাদের কাছ থেকে হারিয়ে যাবে। (কাসাস-৭০-৭৫)

মহীয়ান গরিয়ান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর প্রিয় হাবিব মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে ওহি পাঠিয়ে সতর্ক করেছেন শিরকের পাপ থেকে বাঁচার জন্য।

কুরআন মাজিদে আল্লাহ তায়ালা বলেন, অথচ (হে নবী,) তোমরা কাছে এবং সেসব (নবীদের) কাছেও যারা তোমরা আগে অতিবাহিত হয়ে গেছে, এ (মর্মে) ওহি পাঠানাে হয়েছে, যদি তুমি আল্লাহ তায়ালার সাথে (অন্যদের) শরিক করাে তাহলে অবশ্যই তোমরা (সব) আমল নিষ্ফল হয়ে যাবে এবং তুমি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্তদের দলে শামিল হবে। (আয-জুমার : ৬৫)

চিরসত্য চিরঞ্জীব মহান রাব্বুল আলামিন আরো বলেন, কখননো আল্লাহ তায়ালার সাথে তুমি অন্য কোনো মাবুদকে ডেকো না। তিনি ব্যতীত অন্য কোনো মাবুদ নেইও। তাঁর মহান সত্তা ছাড়া প্রতিটি বস্তুই ধ্বংসশীল; যাবতীয় সার্বভৌমত্ব তার জন্যই এবং তোমাদের সবাইকে তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে। (আল-ক্বাসাস : ৮৮)

আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে আন্তরিক আকুতি সবধরনের বাতিল-ভ্রষ্ট পথ ছেড়ে আমাদেরকে সিরাতুল মুস্তাকিমে চলার তাওফিক দান করুন।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

রক্ত দিয়ে বিনিময় গ্রহণ করা কি ঠিক?

নূর নিউজ

নজরদারির অভাবে ভয়াবহ অনৈতিকতায় জড়িয়ে পড়ছে মহিলা মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ

নূর নিউজ

ইবাদতের স্বাদ নষ্ট হয় যে কারণে

নূর নিউজ