সূরা তাকাসূর, পবিত্র কোরআনের ১০২ নম্বর সূরা। এর আয়াত সংখ্যা আট। এটি মক্কায় অবর্তীণ সূরা এবং সূরাটি পবিত্র কোরআনের ৩০তম পারায় অবস্থিত। প্রাচুর্য লাভ করার জন্য মানুষের পরস্পরের অগ্রবর্তী হওয়ার চেষ্টা করা ও প্রতিযোগিতা করা। অন্যের তুলনায় বেশি প্রাচুর্য লাভ করার কথা নিয়ে পরস্পরের মোকাবেলায় বড়াই করে বেড়ানো এবং এর পরিণতি বিষয়ে সূরাটি নাজিল হয়েছে।
সূরা তাকাসূর
اَلۡہٰکُمُ التَّکَاثُرُ ۙ ١ حَتّٰی زُرۡتُمُ الۡمَقَابِرَ ؕ ٢ کَلَّا سَوۡفَ تَعۡلَمُوۡنَ ۙ ٣ ثُمَّ کَلَّا سَوۡفَ تَعۡلَمُوۡنَ ؕ ٤ کَلَّا لَوۡ تَعۡلَمُوۡنَ عِلۡمَ الۡیَقِیۡنِ ؕ ٥ لَتَرَوُنَّ الۡجَحِیۡمَ ۙ ٦ ثُمَّ لَتَرَوُنَّہَا عَیۡنَ الۡیَقِیۡنِ ۙ ٧ ثُمَّ لَتُسۡـَٔلُنَّ یَوۡمَئِذٍ عَنِ النَّعِیۡمِ ٪ ٨
সূরা তাকাসূর অর্থ :
(পার্থিব ভোগ সামগ্রীতে) একে অন্যের উপর আধিক্য লাভের প্রচেষ্টা তোমাদেরকে উদাসীন করে রাখে। যতক্ষণ না তোমরা কবরস্থানে পৌঁছ। কিছুতেই এরূপ সমীচীন নয়। শীঘ্রই তোমরা জানতে পারবে। আবারও (শোন), কিছুতেই এরূপ সমীচীন নয়। শীঘ্রই তোমরা জানতে পারবে। কক্ষণও নয়। তোমরা নিশ্চিত জ্ঞানের সাথে যদি এ কথা জানতে (তবে এরূপ করতে না)। তোমরা জাহান্নাম অবশ্যই দেখবে। তোমরা অবশ্যই তা দেখবে চাক্ষুষ প্রত্যয়ে। অতঃপর সে দিন তোমাদেরকে নিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে (যে, তোমরা তার কী হক আদায় করেছ?)
সূরা তাকাসূরে মানুষকে যে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে
সূরা তাকাসূরের প্রথম আয়াতে বলা হয়েছে, ধন-সম্পত্তি ও প্রাচুর্য মানুষকে এমনভাবে ব্যস্ত করে রেখেছে, যার ফলে তার প্রতি মোহাচ্ছন্নতা এর থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস আখেরাত ও তার জন্য প্রস্তুতি থেকে গাফেল করে দিয়েছে। তার মোহ মানুষকে এমনভাবে আচ্ছন্ন করে রেখেছে যে, মানুষ তারই চিন্তায় নিমগ্ন।
এখানে প্রাচুর্য বলতে এমন সবকিছুই উদ্দেশ্য যা কিছুর প্রাচুর্যের জন্য মানুষ সাধারণত চেষ্টা করে থাকে এবং অহংকার করে থাকে। হতে পারে সেটা ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি, সাহায্য-সহযোগিতাকারী, সৈন্য-সামন্ত, দাস-দাসী, মান-মর্যাদা ইত্যাদি যা-ই মানুষ বেশী পেতে চায় এবং অপরের উপর প্রাধান্য নেয়ার চেষ্টা করে। এবং যেখানে আল্লাহর সন্তুষ্টি উদ্দেশ্য থাকেনা।
আর মানুষের এমন মোহাচ্ছন্নতা তাকে আল্লাহ থেকে, তার সান্নিধ্য লাভ এবং তার দিকে প্রত্যাবর্তন থেকে, তার ভালবাসাকে সবকিছুর ভালবাসার উপর স্থান দেয়া থেকে, যার ইবাদতের জন্য তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে সেটা থেকে গাফেল করে রেখেছে। (বাদায়েউস তাফসীর)
এরপর বলা হয়েছে, প্রাচুর্যের প্রতি মানুষের এই মোহাচ্ছন্নতা তাদের মৃত্যু পর্যন্ত নিয়ে যাবে। কাতাদাহ বলেন, পৃথিবীতে মানুষ বলাবলি করে, আমরা অমুক বংশের লোক, আমরা অমুক গোত্রের চেয়ে বেশী, আমাদের সংখ্যা অনেক। এভাবে বলতেই থাকল। অথচ তারা কমতে কমতে সবাই কবরবাসী হয়ে গেল। অতএব, আয়াতের মর্মার্থ এই যে, বলা হয়েছে, যারা ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততির ভালবাসা অথবা অপরের সাথে বড়াই করায় এমন মত্ত হয়ে পড়ে যে, পরিণাম চিন্তা করার ফুরসন্তই পায় না। (ইবন কাসীর, কুরতুবী)
এরপর বলা হয়েছে, মানুষ যে প্রাচুর্য ও আধিক্যের প্রতিযোগিতা ও গর্বে মত্ত আছে, তা কিন্তু ঠিক নয়। বৈষয়িক সম্পদের এ প্রাচুর্য এবং এর মধ্যে পরস্পর থেকে অগ্রবর্তী হয়ে যাওয়াকেই মানুষ উন্নতি ও সাফল্য মনে করে নিয়েছে। অথচ এটা মোটেই উন্নতি ও সাফল্য নয়। অবশ্যই অতি শীঘ্রই মানুষ এর অশুভ পরিণতি জানতে পারবে। (ইবন কাসীর, আদওয়াউল বায়ান)
এরপর বলা হয়েছে, মানুষ যদি কেয়ামতের হিসাব-নিকাশে নিশ্চিত বিশ্বাসী হতো, তবে কখনও প্রাচুর্যের বড়াই করতো না এবং উদাসীন হতো না এবং মানুষ প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা ও গর্বে লিপ্ত হতো না।
এরপর বলা হয়েছে, মানুষ যে পরকাল ও জাহান্নামকে ভুলে আছে অবশ্যই তারা সেই জাহান্নাম প্রত্যক্ষ করবে। অর্থাৎ, তার আজাব ও শাস্তি ভোগ করবে। জাহান্নামের প্রথম দর্শন হবে দূর থেকে। আর এ চাক্ষুষ দর্শন হবে কাছ থেকে।
আর সেদিন অর্থাৎ কিয়ামতের দিন মানুষকে আল্লাহ-প্রদত্ত নেয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে যে, সেগুলোর শোকর আদায় করেছ কি না, সেগুলোতে আল্লাহর হক আদায় করেছ কি না; নাকি পাপকাজে ব্যয় করেছে?