সূরা আত-তারিক। পবিত্র কোরআনের ৮৬ নম্বর সূরা। সূরাটি কোরআনের ৩০তম পারায় অবস্থিত। এর আয়াত সংখ্যা ১৭। এটি মাক্কী সূরার অন্তর্ভুক্ত। বক্তব্য, বিষয়ের উপস্থাপনা পদ্ধতির দিক দিয়ে মক্কায় অবতীর্ণ প্রাথমিক সূরাগুলোর সাথে এর মিল দেখা যায়।
মক্কার কাফেররা যখন কোরআন ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইসলামের আহ্বানকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য সব রকমের প্রচেষ্টা চালাচ্ছিল ঠিক সে সময়ই এ সূরাটি নাযিল হয়।
শানে নুযুল
হজরত খালেদ ইবনে আবু জাবাল উদওয়ানী (রা.) বলেন যে, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বনু সাকীফের পূর্ব দিকে দেখলাম, তিনি ধনুক অথবা লাঠির উপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি তাদের কাছে সহযোগিতা চাইতে এসেছিলেন।
আমি সেখানে তার মুখ থেকে পাঠ করা সূরা তারিক শুনলাম। আর আমি তা মুখস্থ করে নিলাম। আমি তখন মুশরিকই ছিলাম।
এরপর (আল্লাহ আমাকে ইসলাম দিয়ে ধন্য করলেন।) মুসলিম হওয়ার পর আমি তা পাঠ করলাম । (মুসনাদে আহমাদ ৪/৩৩৫, মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৭/১৩৬)
হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) একদিন মাগরিবের নামাজে সূরা বাকারাহ এবং সূরা নিসা পাঠ করলেন।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তা জানতে পারলেন, তখন তিনি বললেন, হে মুয়াজ! তুমি কি মানুষকে বিপদে ফেলতে চাইছো! তোমার জন্য ‘সুরা তারিক, শামস’ এবং এজাতীয় সূরাগুলি পাঠ করাই যথেষ্ট ছিল। (নাসাঈ ইফতিতাহ অধ্যায় মাগরিব নামাযে সূরা পাঠ করা পরিচ্ছেদ)
সূরা তারিকে যেসব আলোচনা
এই সূরায় আল্লাহ তায়ালা আকাশ ও নক্ষত্রের শপথ করে বলেছেন, প্রত্যেক মানুষের ওপর একজন তত্ত্বাবধায়ক ফেরেশতা নিযুক্ত করা আছে। সে তার সব কাজকর্ম ও নড়াচড়া দেখে এবং জানে।
সব কিছুই আল্লাহর কাছে সংরক্ষিত
এর পরিপ্রেক্ষিতে মানুষের চিন্তা করা উচিত যে, সে পৃথিবীতে যা কিছু করছে, এর সবগুলোই কিয়ামতের দিন হিসাব-নিকাশের জন্য আল্লাহর কাছে সংরক্ষিত রয়েছে। তাই কোনও সময় ও মুহূর্তের জন্য কিয়ামতের চিন্তা থেকে গাফেল হওয়া উচিত হবে না।
পুনরুজ্জীবন নিয়ে সন্দেহ ও সন্দেহের অবসান
এরপর পুনরুজ্জীবন সম্পর্কে শয়তান মানুষের মনে যে সন্দেহ ও অসম্ভব্যতা সৃষ্টি করে তার উত্তর দিয়ে বলা হয়েছে, মানুষ যেন খেয়াল করে দেখে যে, সে কিভাবে বিভিন্ন অণু, কণা ও বিভিন্ন উপকরণ থেকে সৃষ্টি হয়েছে। যিনি সারা বিশ্বের বিভিন্ন অণু ও কণা একত্র করে প্রথমবার একজন জীবিত, দেখতে পারে এবং শুনতে পারে এমন- মানুষ সৃষ্টি করতে পেরেছেন তিনি তাকে মৃত্যুর পরও আবার সেভাবেই সৃষ্টি করতে পারবেন।
এরপর কিয়ামতের কিছু পরিস্থিতির কথা বর্ণনা করে আবার আকাশ ও পৃথিবীর শপথ করে বলা হয়েছে, মানুষকে পরকাল চিন্তার যে শিক্ষা দেওয়া হয়েছে, সে যেন তা হাসি-তামাশা মন না করে। এটা এমন এক বাস্তব সত্য যা অবশ্যই সংঘটিত হবে। অবশেষে দুনিয়াতেই কেন আজাব আসে না- কাফেরদের এই প্রশ্নের উত্তর দিয়ে সূরাটি শেষ করা হয়েছে।
সূরা তারিক আরবি উচ্চারণ :
وَالسَّمَآءِ وَالطَّارِقِۙ ١ وَمَاۤ اَدۡرٰٮكَ مَا الطَّارِقُۙ ٢ النَّجۡمُ الثَّاقِبُۙ ٣ اِنۡ كُلُّ نَفۡسٍ لَّمَّا عَلَيۡهَا حَافِظٌؕ ٤ فَلۡيَنۡظُرِ الۡاِنۡسَانُ مِمَّ خُلِقَؕ ٥ خُلِقَ مِنۡ مَّآءٍ دَافِقٍۙ ٦ يَّخۡرُجُ مِنۡۢ بَيۡنِ الصُّلۡبِ وَالتَّرَآٮِٕبِؕ ٧ اِنَّهٗ عَلٰى رَجۡعِهٖ لَقَادِرٌؕ ٨ يَوۡمَ تُبۡلَى السَّرَآٮِٕرُۙ ٩ فَمَا لَهٗ مِنۡ قُوَّةٍ وَّلَا نَاصِرٍؕ ١٠ وَالسَّمَآءِ ذَاتِ الرَّجۡعِۙ ١١ وَالۡاَرۡضِ ذَاتِ الصَّدۡعِۙ ١٢ اِنَّهٗ لَقَوۡلٌ فَصۡلٌۙ ١٣ وَّمَا هُوَ بِالۡهَزۡلِؕ ١٤ اِنَّهُمۡ يَكِيۡدُوۡنَ كَيۡدًا ۙ ١٥ وَّاَكِيۡدُ كَيۡدًا ۚۖ ١٦ فَمَهِّلِ الۡكٰفِرِيۡنَ اَمۡهِلۡهُمۡ رُوَيۡدًا ١٧
সুরা তারিক বাংলা উচ্চারণ :
১. ওয়াছ ছামাই ওয়াততা-রিক। ২. ওয়া মাআদরা-কা মাত্তা-রিক। ৩. আন্নাজমুছছা-কিব। ৪. ইন কুল্লুনাফছিল লাম্মা-‘আলাইহা-হা-ফিজ। ৫. ফালইয়ানযুরিল ইনছা-নুমিম্মা খুলিক। ৬. খুলিকা মিম্মাইন দা-ফিকি। ৭. ইয়াখরুজুমিম বাইনিসসুলবি ওয়াত্তারাইব।
৮. ইন্নাহূ‘আলা-রাজ‘ইহী লাকা-দির। ৯. ইয়াওমা তুবলাছ ছারাইর। ১০. ফামা-লাহূমিন কুওওয়াতিওঁ ওয়ালা-না-সির। ১১. ওয়াছ ছামাই যা-তির রাজ‘ই। ১২. ওয়াল আরদিযা-তিসসাদ‘ই। ১৩. ইন্নাহূলাকাওলুন ফাসল। ১৪. ওয়ামা-হুওয়া বিল হাঝলি। ১৫. ইন্নাহুম ইয়াকীদূনা কাইদাওঁ। ১৬. ওয়া আকীদুকাইদা-। ১৭. ফামাহহিলিল কা-ফিরীনা আমহিলহুম রুওয়াইদা-।
সূরা তারিকের বাংলা অর্থ :
১. শপথ আসমানের এবং রাতে যা আবির্ভূত হয় তার। ২. তুমি কি জান যা রাতে আসে তা কী? ৩. উজ্জ্বল নক্ষত্র। ৪. প্রত্যেক জীবের উপরই তত্ত্বাবধায়ক রয়েছে।
৫. অতএব মানুষ যেন চিন্তা করে দেখে তাকে কী থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। ৬. তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে সবেগে স্খলিত পানি হতে। ৭. এটা নির্গত হয় মেরুদণ্ড ও পঞ্জরাস্থির মধ্য থেকে।
৮. নিশ্চয় তিনি তাকে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম। ৯.যেদিন গোপন বিষয়সমূহ পরীক্ষিত হবে। ১০. সেদিন তার কোন সামর্থ্য থাকবে না, এবং সাহায্যকারীও নয়।
১১. শপথ বারবার বর্ষণশীল আকাশের। ১২. এবং শপথ যমীনের, যা বিদীর্ণ হয়। ১৩. নিশ্চয় তা (কোরআন সত্য-মিথ্যার) পার্থক্যকারী বাণী। ১৪.এবং এটা নিরর্থক নয়।
১৫.নিশ্চয় তারা ভীষণ চক্রান্ত করে। ১৬. এবং আমিও ভীষণ কৌশল করি। ১৭. অতএব অবিশ্বাসীদেরকে অবকাশ দাও, তাদেরকে অবকাশ দাও কিছুকালের জন্য।