সৌদী শায়েখদের উচিত তাবলীগী কাজ নিয়ে উপমহাদেশীয় আলেমদের সাথে কথা বলে মন্তব্য করা

তাবলীগী কাজ সম্পর্কে উপমহাদেশীয় আলেমদের সাথে কথা বলে মন্তব্য করার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ অথরিটি আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি‘আতিল কওমিয়া বাংলাদেশ-এর চেয়ারম্যান, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ-এর সভাপতি, মজলিসে দাওয়াতুল হক বাংলাদেশ-এর আমীর ও যাত্রাবাড়ি মাদরাসার মুহতামিম মুহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমূদুল হাসান।

আজ গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ইসলামের তাবলীগ তথা ঈমান আমলের দাওয়াতের কাজের নিন্দা করার আগে এর ভালোমন্দ সবদিক বিবেচনা করা উচিত। বর্তমান পৃথিবীতে কোটি কোটি মানুষ ঈমান, ইসলাম ও ইহসানের দিকে ধাবিত হচ্ছে তাবলীগের মেহনতের ফলে।

সৌদী আরবের আলেমদের উচিত তাবলীগী কাজ সম্পর্কে উপমহাদেশীয় আলেমদের সাথে কথা বলে মন্তব্য করা। আওলাদে রাসুল (সা.) হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ রাবে হাসানী নদভী, মাওলানা সাইয়েদ আরশাদ মাদানী, মাওলানা মুফতি তাকি উসমানীসহ বিশ্বের সেরা আলেমদের সাথে পরামর্শ করতে হবে। এ মুহূর্তে আরববিশ্বে আল্লামা সাইয়িদ আবুল হাসান আলী নদভী ও মাওলানা সাঈদ খান সাহেব প্রভাবিত আলেমগণকে পরিস্থিতি অনুপাতে সোচ্চার হতে হবে। দেওবন্দ ও এর অনুসারী প্রতিষ্ঠানের মুরব্বিদের আরবের শাসক ও আলেমদের সাথে মতবিনিময় করতে হবে।

সৌদী সরকারের ফরমান, অভিযোগ ও খুতবা প্রচারের বিষয়ে আমাদের মূল্যায়ন সৌদী বড় আলেমদের কাছে পৌঁছেছে। ঢাকায় নিযুক্ত সৌদী রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে শাসক পর্যায়েও পৌঁছে যাবে ইনশাআল্লাহ। প্রচলিত তাবলীগের কাজে তারা সমালোচনা বা সংশোধনী দিতে পারেন, কিন্তু শতবর্ষী একটি দ্বীনি আন্দোলনকে এভাবে একতরফা নিন্দা ও নিরুৎসাহিত করতে পারেন না। অতীতের হুসামুল হারামাইন ফাতওয়ার দুঃখজনক ঘটনার মত কোনো মহলের মিথ্যা প্রচারণা বা একতরফা অপবাদ শুনে তাবলীগী কাজের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিতে পারেন না। এর ফলে সারাবিশ্বে এই কাজে নিষেধাজ্ঞা জারির প্রবণতা দেখা দিতে পারে। মুসলমানদের শত্রুরাই এতে খুশি ও লাভবান হবে‌।

সৌদী প্রজ্ঞাপনটির বক্তব্যে বাংলাদেশ পাক ভারত উপমহাদেশের আহলে হক উলামায়ে কেরাম ও সর্বস্তরের তাওহীদি জনতা খুবই মর্মাহত হয়েছেন। তারা ভেবে পাচ্ছেন না যে, একথা সৌদী আলেমরা কোথায় পেলেন যে, তাবলীগীরা কবরকে সেজদার স্থান বানায়? দুনিয়ার কোথাও এমন নজির নেই, হতে পারে না। ইনসাফের স্বার্থেই তাদেরকে এ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার অনুরোধ জানাই। হারামাইন শরীফাইনের দ্বীনি খিদমতের জিম্মাদারির মহান মর্যাদা তাদেরকে আল্লাহ তাআলা দান করেছেন। তাই দুনিয়ার মুসলমানদের কল্যাণকর দিকগুলো তাদেরকে বিবেচনায় নিতে হবে।

তাবলীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং এর বিরোধিতা সমীচীন হবে না। কারণ বিশ্বে উম্মতের সাধারণ দ্বীনি ফিকির, ঈমানী ভাবনা, ন্যূনতম ঈমান আমলের চর্চা ও মুসলিম জীবনে শরীয়াসংশ্লিষ্টতা, ক্ষেত্রেবিশেষে বেদ্বীনী ও বদদ্বীনী পরিবেশে মুসলিম পরিচয়টুকু ধরে রাখাসহ সারাবিশ্বে অমুসলিমদের মাঝে ইসলাম প্রচারের জন্য এ শতাব্দীতে এই তাবলীগী কাজের সমপর্যায়ের বিকল্প খুঁজে পাওয়া যাবে না।

এ প্রসঙ্গে আমরাও দারুল উলূম দেওবন্দের বিবৃতিটিকে সমর্থন জানাই।
সৌদী আরবে রাষ্ট্রীয়ভাবে তাবলীগ জামাতের বিরুদ্ধে প্রচারণা ও নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে দারুল উলূম দেওবন্দের মুহতামিম মুফতী আবুল কাসেম নূমানী উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, হযরত মাওলানা ইলিয়াস রহ. দারুল উলূম দেওবন্দের সদরুল মুদাররিসীন শাইখুল হিন্দ মাহমুদ হাসান দেওবন্দী রহ.-এর অন্যতম ছাত্র ছিলেন। তিনিই তাবলীগ জামাত প্রতিষ্ঠা করেন। যার অধীনে বড়দের নিষ্ঠাপরায়ণ চেষ্টা ও মেহনত দ্বীনি ও আমলি ক্ষেত্রে উপকার বয়ে আনছে। শাখাগত মতভেদ সত্ত্বেও তাবলীগ জামাত নিজের মিশনে কাজ করে যাচ্ছে। প্রায় গোটা বিশ্বেই তাদের কাজ ছড়িয়ে আছে। এর সাথে যুক্ত সদস্য ও জামাতের সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির ওপর শিরক, বিদআত ও সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। দারুল উলূম দেওবন্দ এর নিন্দা জানাচ্ছে। পাশাপাশি সৌদী সরকারের কাছে আবেদন করছে, তারা যেন নিজেদের এ সিদ্ধান্তের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করেন এবং তাবলীগ জামাতের বিরুদ্ধে এ ধরনের প্রচারণা থেকে বিরত থাকেন।
বাংলাদেশের উলামায়ে কেরাম ও সর্বস্তরের মুসলমানদের পক্ষ থেকে আমিও অনুরূপ আহ্বান জানাই।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করলেন মুফতি ওয়ালিউর রহমান খান

নূর নিউজ

ইজতেমার মাঠে দুই মুসল্লির মৃত্যু

নূর নিউজ

জুমার দিন যাদের দোয়া কবুল হয়

নূর নিউজ