রাত ২টার পর হাসপাতাল সংলগ্ন ওষুধের দোকান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত দিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখেও অনড় অবস্থানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।তিনি বলেন, ‘রাত দুইটার পর হাসপাতাল সংলগ্ন ওষুধের দোকান খোলা রাখতে হলে যৌক্তিক কারণ দেখিয়ে আবেদন করতে হবে।’
মেয়রের প্রশ্ন, ‘রাতের বেলা চিকিৎসকই পাওয়া যায় না, সেখানে ওষুধের দোকান কেন খোলা রাখা হবে?’
মঙ্গলবার বিকালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নগর ভবনে সিটি করপোরেশনের দ্বিতীয় পরিষদের ষোড়শ করপোরেশন সভার সূচনা বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
মেয়র তাপস বলেন, ‘আমরা ঢাকা শহরের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে একটি সময়সূচি উপস্থাপন করেছি এবং আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে এটা কার্যকর করতে চাই। সেখানে দোকান-পাট, বিপণি বিতান, কাঁচাবাজার, রেস্তোরাঁর রান্নাঘর ও খাবার সরবরাহ, চিত্ত-বিনোদনসহ প্রেক্ষাগৃহ ইত্যাদির জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।এ ছাড়া ওষুধের দোকানগুলোর জন্য বিশেষভাবে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। পাড়া-মহল্লার ওষুধের দোকানের জন্য আমরা রাত ১২টা পর্যন্ত সময় দিয়েছি এবং হাসপাতালের সঙ্গে যে ওষুধের দোকান রয়েছে, সেগুলোকে রাত ২টা পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে।’
‘এর বাইরে যদি কোনো প্রতিষ্ঠান বা স্থাপনায় ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালাতে হয়, তাহলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাছে লিখিত আবেদন করতে হবে। তার প্রতিষ্ঠান বা কার্যক্রম কেন অত্যাবশ্যকীয়, সেটার যথাযথ যুক্তি প্রদর্শন করতে হবে। আমরা সেটা বিচার-বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা কার্যক্রমকে বর্ধিত সময় দেব। কিন্তু ঢাকা শহরকে একটি সুনির্দিষ্ট সময়সূচির মধ্যে আনতেই হবে।’
বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের লক্ষ্যে গত ২২ আগস্ট গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। সেখানে রাতে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত দোকান ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশনাসহ ওষুধের দোকানের ক্ষেত্রেও সময় বেঁধে দেওয়া হয়। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেকেই। তীব্র সমালোচনা হচ্ছে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে।
সিটি করপোরেশনের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলে একজন চিকিৎসক বলেন, হাসপাতালের সঙ্গে থাকা ফার্মেসি সব সময় খোলা থাকা কতটা জরুরি, তা বোঝার জন্য কারো বিশেষজ্ঞ হতে হয় না।
খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকও এতে একমত নন। তিনি গত ২৫ আগস্ট এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, হাসপাতালের মতো ওষুধের দোকানও জরুরি সেবার আওতাভুক্ত। এ কারণে ওষুধের দোকানগুলো সব সময় খোলা থাকবে। ফার্মেসি বন্ধ রাখার বিষয়ে তারা কোনো নির্দেশনা দেননি। তিনি মনে করেন, এটি ২৪ ঘণ্টাই খোলা থাকা প্রয়োজন।মন্ত্রী বলেন, সিটি করপোরেশন তাদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত দেয়নি। তাই আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তবে মেয়র তাপস আজও (মঙ্গলবার) তার সেই সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘হাসপাতাল সংলগ্ন ওষুধের দোকান ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার বিষয়ে বিচ্ছিন্নভাবে নানা মাধ্যমে আলোচনা হলেও করপোরেশনের সঙ্গে কেউ কথা বলেনি। ঘোষিত গণবিজ্ঞপ্তির সময়সূচি ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। শুধুমাত্র হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট ওষুধের দোকানগুলো খোলা রাখার বিষয়ে বিভিন্নভাবে বলা হচ্ছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট অংশীজন যারা আছেন, তারা কিন্তু আনাদের কাছে কোনও লিখিত আবেদন করেননি।’
সমালোচকদের উদ্দেশে তাপস বলেন, ‘হাসপাতালে সংযুক্ত ওষুধের দোকান ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার যৌক্তিকতা আমরা দেখি না। কারণ যেখানে রোববার থেকে বৃহস্পতিবারে সুনির্দিষ্ট সময়ের পর, শুক্র-শনিবার এবং রাতের বেলা চিকিৎসকই পাওয়া যায় না, সেখানে ওষুধের দোকান কেন খোলা রাখা হবে? আগে তো চিকিৎসক নিশ্চিত করতে হবে। তারপরই তো চিকিৎসা সেবার জন্য ওষুধের দোকান খোলা রাখতে হবে। তারপরও কোনো হাসপাতাল থেকে যদি লিখিত কোনো আবেদন আসে, আমরা অবশ্যই সেটা বিবেচনা করব।