ভারতের কর্ণাটক পিইএস কলেজ মান্ডিয়ার ছাত্রী মুসকান খান তার শিক্ষাঙ্গণে প্রবেশের সময় গেরুয়া বাহিনীর কাছে উপহাসের শিকার হোন। উগ্র হিন্দুত্ববাদী নানা স্লোগানে তাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করেন তারা, কিন্তু ছাত্রী ভড়কে না গিয়ে উল্টো সাহসী এক প্রতিবাদ করেছেন। ধ্বনি তোলেন ‘আল্লাহু আকবার’। সাহসী স্বরে ধ্বনি তুলতে তুলতে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করেন ওই ছাত্রী।
সাহসী ওই তরুণীর সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা। টিএসসি’র রাজু ভাস্কর্যের সামনে অনুষ্ঠিত হয় এই আয়োজন।
ছাত্র অধিকার পরিষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র সহ-সভাপতি আসিফ মাহমুদ জানান, ভারতের কর্নাটকে হিজাব নিয়ে চলমান ইস্যুতে সেখানের ছাত্রীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশের জন্যই এই আয়োজন। মূলত আয়োজনটি করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা। ইতোমধ্যেই এটি বেশ সাড়া ফেলেছে।
এদিকে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ সাহসী মুসকানকে পাঁচ লাখ রুপি পুরস্কারের ঘোষণা দেয়।
ওই তরুণীকে অভিনন্দন জানিয়ে দলটির ফেসবুক পেজে বলা হয়, সাহসী ওই ছাত্রীকে তার প্রতিবাদের জন্য আন্তরিক অভিনন্দন। তিনি সাহসের মাধ্যমে নিজের সাংবিধানিক ও ধর্মীয় অধিকারের পক্ষে আওয়াজ তুলেছেন। তার উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনা করে জামিয়াত উলামা-ই-হিন্দের পক্ষ থেকে এই সাহসী কন্যাকে উৎসাহের জন্য নগদ পাঁচ লাখ রুপি পুরস্কার ঘোষণা করা হলো।
অপরদিকে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কর্ণাটকের স্কুল-কলেজে হিজাব পরে ক্লাসে বসার বৈধতার জন্য মুসলিম ছাত্রীদের যে লড়াই শুরু হয়েছে তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করে এক টুইট বার্তায় একথা বলেন মালালা।
কর্ণাটকের চলমান পরিস্থিতির ব্যাপারে টুইটে মালালা বলেছেন, মেয়েদের হিজাব পরে স্কুলে যেতে অস্বীকৃতি জানানো ভয়ঙ্কর ঘটনা। নারী কম অথবা বেশি পোশাক পরলেও আপত্তি থাকে। ভারতীয় নেতাদের অবশ্যই মুসলিম নারীদের প্রান্তিকীকরণ বন্ধ করতে হবে।
প্রসঙ্গত, মুসকান পার্কিং লটে তার স্কুটি পার্ক করে অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে যাচ্ছিলেন। এমন সময় একদল গেরুয়া পরা ছাত্র তাকে ঘিরে ধরে এবং স্লোগান দিতে থাকে। এমন সময় মুসকান সাহসী কণ্ঠে শ্লোগান তুলে ‘আল্লাহু আকবার’।
মুসকান বলেন, ‘এমন পরিস্থিতির জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না। আমি অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে চেয়েছিলাম। তারা আমাকে ঢুকতে দিচ্ছিল না কারণ আমি বোরকা পরেছিলাম।
তিনি বলেন, আমরা আমাদের প্রতিবাদ চালিয়ে যাব কারণ হিজাব পরা একজন মুসলিম মেয়ের অধিকার।
মূলত এটি কর্নাটকের কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। গতকাল সকালে উদুপির মহাত্মা গান্ধী মেমোরিয়াল কলেজের (MGM College, Udupi) বাইরেও, একদিকে হিজাব পরা ছাত্রীদের এবং অন্য দিকে দলকে গেরুয়া চাদর ও পাগরি পরা ছাত্রদের স্লোগান দিতে দেখা গিয়েছে। কোনওমতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল পুলিশ। জানা গেছে বোরখা পরা ছাত্রীরা দাবি জানিয়েছিল, তাদের বোরখা পরেই পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতি দিতে হবে। পাল্টা অপর পক্ষের ছাত্ররা দাবি জানায়, তারাও সেই ক্ষেত্রে গেরুয়া চাদর ও পাগরি পরে পরীক্ষা দেবে। এই নিয়ে দুই পক্ষে প্রায় সংঘর্ষ বাঁধার পরিস্থিতি তৈরি হয়।
প্রসঙ্গত, গত মাসে উদুপি জেলার সরকারি বালিকা পিইউ কলেজে ছয়জন মুসলিম ছাত্রীকে হিজাব পরার কারণে শ্রেণিকক্ষের বাইরে বসতে বাধ্য করা হয়। সেই সময় কলেজ প্রশাসন জানায়, ইউনিফর্মের অংশ নয় হিজাব এবং ওই ছাত্রীরা কলেজের নিয়ম লঙ্ঘন করেছে। ছাত্রীদের ক্লাসে হিজাব পরার বিষয়ে আপত্তি জানায় স্থানীয় ডানপন্থী বিভিন্ন গোষ্ঠী।
পরে এই রাজ্যের অন্যান্য এলাকাতেও হিজাব পরার বিরুদ্ধে গেরুয়া ওড়না পরে অনেক শিক্ষার্থী অবস্থান নিয়ে আন্দোলন শুরু করে। তারা কলেজে হিজাব নিষিদ্ধের দাবি তোলে এবং হিজাববিরোধী বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেয়।
ছাত্র-ছাত্রীদের এরূপ পাল্টাপাল্টি অবস্থানের কারণে কলেজ দুটি সোমবার বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এরইমধ্যে এই ভিডিওটি সামনে এলো।