১৪ বছর পর দেশে ফিরে কাঁদছেন প্রবাসী, হারালেন ঘরবাড়ি ও স্ত্রী

মালয়েশিয়ায় শ্রমিক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার মাহফুজার রহমান (৩৩)। প্রবাস জীবনে কষ্টে উপার্জিত অর্থ দেশে স্ত্রীর কাছে পাঠিয়েছেন। সেই টাকায় জমি কিনে বাড়ি করেছেন স্ত্রী। বিভিন্ন সময় পাঠিয়েছেন স্বর্ণালঙ্কার। ১৪ বছর দেশে ফিরে দেখেন, তাকে তালাক দিয়ে মামাতো ভাইকে বিয়ে করেছেন স্ত্রী। তার বানানো ঘরে নতুন স্বামীকে নিয়ে থাকছেন।

সবকিছু জানার পর মাহফুজারের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। নানাভাবে চেষ্টা করেও নিজের ঘরে উঠতে পারছেন না। জমি ও বাড়ি নিজের নামে দলিল করে নিয়েছেন স্ত্রী। সব হারিয়ে এখন পথে বসে কাঁদছেন এই প্রবাসী।

সবশেষে নিরুপায় হয়ে স্ত্রী ও তার স্বামীসহ আট জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন মাহফুজার। আদালত মামলা আমলে নিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন। মাহফুজার রহমান শাজাহানপুরের শৈলধুকড়ী পশ্চিমপাড়ার মৃত হবিবর রহমানের ছেলে।

মামলার আসামিরা হলো—শাজাহানপুরের জামালপুর নয়মাইল এলাকার বাসিন্দা মাহফুজারের স্ত্রী রোজনী খাতুন, তার বর্তমান স্বামী রেজাউল করিম, রেজাউল করিমের বাবা ধুনটের বেড়েরবাড়ির আবদুল খালেক, তার ছেলে আবদুর রাজ্জাক, শাজাহানপুর উপজেলার বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আবুল বাশার, ধুনটের বেড়েরবাড়ির বাসিন্দা চাঁদমুনী, একই গ্রামের বিউটি আক্তার এবং শাজাহানপুরের রহিমাবাদ দক্ষিণপাড়ার শান্তি বেগম।

উপজেলার আমরুল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বিমান বলেন, ‘মাহফুজার ১৪ বছর ধরে প্রবাসে থেকে টাকা পাঠাইলো। আর স্ত্রী ওই টাকায় জমি কিনে বাড়ি বানিয়ে মামাতো ভাইকে বিয়ে করে সব দখল করলো। এখন নিজের ঘরে উঠতে পারছে না ছেলেটি। পথে পথে কাঁদছে। আমার কাছে এসেছিল। আইনি পরামর্শ নিতে বলেছিলাম। তবে ওই মেয়েটা অন্যায় করেছে।’

মাহফুজার রহমান বলেন, ‘চার বছর প্রেম করে ২০০৪ সালে পালিয়ে তাকে বিয়ে করেছিলাম। সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে ২০০৮ সালের আগস্টে মালয়েশিয়ায় চলে যাই। এর কিছুদিন পর আমাদের বাড়ি ছেড়ে উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নের জামালপুর এলাকায় বড় ভাইয়ের বাড়িতে থাকতে শুরু করে সে। পরবর্তী সময়ে রহিমাবাদ সি-ব্লক এলাকায় বাসা ভাড়া নেয়। ধাপে ধাপে আমার পাঠানো টাকায় জামালপুর এলাকায় ৮৭ শতক জমি কেনে। ওই জমিতে ৪২ লাখ টাকা ব্যয়ে ছয়তলা ভিত দিয়ে একতলা বাড়ি নির্মাণ করি। জমি ও বাড়ির দলিল দুই জনের নামে করার কথা থাকলেও শুধু নিজের নামে করে নেয় আমার স্ত্রী। জমি কিনে বাড়ি করতে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া আমার সাত বিঘা জমি ১০ লাখ টাকায় ইজারা দিয়েছি। এসব বিষয় এলাকার অনেকেই জানে।’

গত ২০ জানুয়ারি দেশে ফিরে জামালপুর নয়মাইল এলাকায় নিজের টাকায় নির্মিত বাড়িতে উঠতে গিয়ে জানতে পারেন, স্ত্রী তাকে তালাক দিয়েছেন। তাই বাড়িতে উঠতে দেননি। ২৫ মার্চ মামাতো ভাই রেজাউল করিমকে বিয়ে করেন। তখন জনপ্রতিনিধি ও থানা পুলিশের সঙ্গে দেনদরবার করেও স্ত্রীকে ফেরাতে পারেননি। নিরুপায় হয়ে মাহফুজার রহমান ৫ এপ্রিল বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল মোমিনের আদালতে দেড় কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে স্ত্রীসহ আট জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। বিচারক মামলাটি তদন্ত করে আগামী ১৮ মের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে পিবিআই বগুড়াকে নির্দেশ দেন।

মাহফুজার আরও বলেন, ‘গত ১৪ বছর মালয়েশিয়ায় থেকে স্ত্রীর কাছে ১২ ভরি সোনার গহনাসহ প্রায় দেড় কোটি টাকা পাঠিয়েছি। মালয়েশিয়ায় অনেক কষ্ট করেছি। কিছুদিন জেলও খেটেছি। অথচ আমার সঙ্গে প্রতারণা করে প্রথমে বিএনপি নেতা আবুল বাশারের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে সে। বিষয়টি জেনে যাওয়ায় ঘটনা আড়াল করতে বয়সে ছোট মামাতো ভাই রেজাউল করিমের সঙ্গে তার বিয়ে দেন বাশার। কষ্টে উপার্জিত অর্থ হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছি। তার ব্যাংক হিসাব দেখলেই আমার পাঠানো টাকার সত্যতা বেরিয়ে আসবে। আমি এই প্রতারণার বিচার এবং অর্থ ফেরত চাই।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওই নারী বলেন, ‘মাহফুজার আমার জন্য কোনও টাকা পাঠায়নি। তাকে তালাক দিয়ে বিয়ে করেছি। বাড়ি নিজের টাকায় করেছি। আবুল বাশারের সঙ্গে আমার প্রেমের সম্পর্ক ছিল না। তবে বিয়েতে তিনি ছিলেন।’

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘বিদেশ থেকে আসার পর থেকে মাহফুজার আমাকে নানাভাবে হয়রানি করছে। সবার কাছে আমার নামে মিথ্যা কথা বলে বেড়াচ্ছে।’

মাহফুজার রহমানের আইনজীবী উৎপল কুমার বাগচি বলেন, ‘আদালতের নির্দেশে পিবিআই মামলাটি তদন্ত করছে। এ ব্যাপারে সঠিক তদন্ত হবে এবং আদালতের কাছে ন্যায়বিচার পাবেন ভুক্তভোগী।’

এ জাতীয় আরো সংবাদ

যুক্তরাষ্ট্রে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা: খোঁজ মিলেনি ১৮ দিনেও

নূর নিউজ

কাতারে প্রবাসীদের স্বস্তির ঈদ উদযাপন

আনসারুল হক

২ হাজার কুরআন বিতরণ ফেনী প্রবাসী পরিবারের

নূর নিউজ